করোনায় কেমন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ শিক্ষার্থীদের
নানা কারণে বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ গুলো বর্ণিল হয়ে থাকে। নতুন ক্যাম্পাস নতুন পাঠ্যক্রম আর নতুন সব বন্ধু-বান্ধবের ভিড়ে পাওয়া যায় জীবনের পূর্ণতার স্বাদ। নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকে সবাই। তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের (কুবি) করোনা কালীনে কিভাবে কেটে গেল, তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার চেষ্টা করছে -আবু জাফর ।
নুসরাত রশিদ, গণিত বিভাগ
“ভার্সিটি লাইফ হচ্ছে নিজের স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার একটা অন্যতম মাধ্যম। অনেক পরিশ্রম আর চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা এই পর্যায়ে উপনীত হই। তেমনি অনেক পরিশ্রম করে স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপদানের জন্যই কুবি’র বুকে পদচারণ ঘটেছিল। মাত্র ২ মাস ১৭ দিন ক্লাস করার সুযোগ হয়েছিল। তারপর কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এতো অল্প সময়েও কুবি আমাদেরকে তার মায়ায় জড়িয়ে বুকে টেনে নিয়েছিল। ব্যাচমেট ও সিনিয়রদের সাথেও এই অল্প দিনে কিছুটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
সেই মার্চ মাস থেকে এখনো পর্যন্ত আর ভার্সিটির সেই প্রাণোচ্ছল রূপ দেখা হয় নি, বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করা আর আড্ডা দেয়া হয় নি। এরপর সবাই অনলাইন নির্ভর হয়ে যাই। অনলাইনে ক্লাস করা শুরু হয়। কিন্তু বন্ধুদের সাথে বসে সরাসরি ক্লাস করার মতো আনন্দটুকু আর পাওয়া যায় নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে হয়তো ভার্সিটি ও বন্ধুদের সাথে আরো অনেক গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠতো। ভার্সিটি লাইফটাকে উপভোগ করে ভালো সময় কাটানো যেতো। খুব মিস করি ভার্সিটি ও বন্ধুদেরকে। ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই সুস্থ পৃথিবীতে সুস্থভাবে আবার দেখা হবে সবার।”
নাঈম, বাংলা বিভাগ
“সেই মাধ্যমিক থেকে দেখে আসা স্বপ্নের বাস্তব রূপলাভ করে গত ডিসেম্বরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে! ক্লাস শুরু জানুয়ারির পয়লা তারিখ । নতুন জায়গা কতশত নতুন মুখ! কিন্তু কাউকেই নতুন মনে হচ্ছে না। সিনিয়র, ব্যাচমেটরা এতই আন্তরিক যে প্রথম ক্লাসেও মনে হয়নি তাদের সবার সাথেই আমার প্রথম দেখা। প্রথম দেখাতেই কাউকে কত আপন করা যায় তা ভার্সিটিতে না গেলে বুঝতেই পারতাম না।
ক্লাসের ফাঁকে ক্যাফেটেরিয়া যাওয়া, ক্লাস শেষে একসাথে আড্ডা দেওয়া, কোনো প্রিপ্ল্যান ছাড়াই আসে পাশে ঘুরতে যাওয়া। ম্যানারসহ যাবতীয় নিয়মকানুন শিখিয়ে ইমমেচিউর আমাদেরকে ম্যাচিউর করার কত চেষ্টা সিনিয়রদের। এরপরেও ঠিক মত সালামটাই দিতে পারতাম না । আহা! কত সুন্দর সময়। কিন্তু সেই সময়টা মাত্র কয়েকমাসেই ভোরের স্বপ্নের মত ইতি টেনেছে বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী মহামারি করোনার জন্য!
সবাই সাপ্তাহিক ছুটি কাটানোর মত মনে করে এক কাপরে যে যার মত বাড়ি চলে আসি কিন্ত আজ দীর্ঘ নয় মাস হয়ে গেলো আজও ফিরে যাওয়া হলো না সেই প্রাণের ক্যাম্পাসে। যতই অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে আমাদের কোর্স কিংবা সেমিস্টার শেষ করা হোক না কেনো আমরা কি আমাদের সেই ইমম্যাচিউর ফার্স্ট ইয়ারটা পাব!? হায় বাস্তবতা, ইমম্যাচিউরিটির সাধ গ্রহণ করার আগেই ম্যাচিউর করে দিচ্ছে!”
জান্নাতুন নিসা , সাংবাদিকতা বিভাগ
“২০২০ সাল আনন্দের সাথে পুরো জানুয়ারি মাসটা কাটিয়ে দেই শিক্ষকবৃন্দ, বন্ধুমহল,বড় ভাই-বোনসহ সকলের সাথে পরিচয় হতে,সকলকে চিনতে,জানতে আর পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে দেখতেই। তবুও এর হয়না শেষ। এরই মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের ভাগ্যবশে দেখা মিললো কুবির প্রথম কনভোকেশন।এর তৃপ্তিও ভিন্ন সাধের,ভিন্ন আনন্দের। এভাবেই যাচ্ছিলো দিন,কাটছিলো রাত। কিন্তু হায়! আমাদের এই আনন্দের তৃপ্তি বেশিদিন টিকল না।
মার্চের মধ্যভাগেই ঘটে করোনা রোগের আবির্ভাব।যার ফলে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায় অনির্দিষ্টকালের জন্য।ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ এপ্রিলে খোলার আশ্বাস দিলেও তা আর হলো না।ভয়ংকর এই মহামারীর জন্য হারালাম বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মূল্যবান সময়, হারালাম আনন্দঘন কিছু মুহূর্ত,নতুন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার সুযোগ, নতুন বন্ধুত্বের ছোঁয়া।শেষ কবে বন্ধুমহল নিয়ে কুবির মুক্তমঞ্চে আড্ডায় মাতোয়ারা হয়েছিলাম কে জানে।বন্ধের অল্প কয়েকদিন পরই তো আমাদের অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস শুরু হয়।
এই ভার্চুয়াল ক্লাস কখনোই পারেনি ক্যাম্পাসের সেই সরাসরি ক্লাসের তৃপ্তির স্বাদ এনে দিতে,পারিনি বন্ধু মহলে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে, তাদেরকে ভালোভাবে জানতে, আমাদের বন্ধুত্বটা আরো দৃঢ় করতে।এছাড়াও অনলাইন নির্ভর জীবনে দৃঢ় হলো না আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বন্ধন,বিভাগের সকল বড় ভাই-আপুদের সাথে আমাদের নতুনদের বন্ধুত্বের বন্ধন।”
শফিকুল ইসলাম, গণিত বিভাগ
“সেই প্রথম–দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত গতানুগতিক পড়ালেখার গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলাম। এতদিন ধারনা ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয় এক উন্মুক্ত চিন্তা ধারার স্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তা বুঝতে ও পেরেছি। কিন্তু তা আর বেশিদিন হই নি করোনা মহামারির কারণে বাড়িতে চলে আসতে হয়েছে।যার ফলে নতুন করে বন্ধুদের সাথে পরিচিত হতে পারি নি তাছাড়া পড়ালেখার তো ব্যাঘাত ঘটছেই, যাইহোক অনলাইন ক্লাসের কারণে যদিও ক্লাস করতে পারছি তার পর ও তো যান্ত্রিক ত্রুটি থাকেই। অনলাইনে ক্লাস করেই আমাদের 19–2০ সেশনের সবার প্রথম বর্ষ শেষ হইয়ে গেছো। যা আমাদের জীবনের এক সোনালি অধ্যায় না উপভোগ করেই যেন চলে গেল।”