করোনা কেড়ে নিল সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা

ইসরাত জাহান


একটি দেশের প্রাণশক্তি হলো তরুণ জনগোষ্ঠী। তারুণ্যের শক্তি বা কর্মদক্ষতার ওপর ভর করে একটি দেশ উন্নতি লাভ করে। দুঃখের বিষয় হল বর্তমানে তরুণদের মাঝে কাজ করছে হতাশা। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মর্মপীড়া কাজ করছে।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ১৮-৩০ বছর। গড় আয়ু যখন ৪৫ বছর ছিল তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর। গড় আয়ু যখন ৫০ পার হলো তখন প্রবেশের বয়স হলো ৩০ বছর। বর্তমানে গড় আয়ু ৭২ বছর হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ এর উর্ধ্বে আজও করা হয়নি।

একাডেমিক পড়া শেষ করে চাকরির পড়া শুরু করার স্বল্প সময়ের মধ্যে বয়স ৩০ বছর পার হয়ে যাচ্ছে। ফলে চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হওয়ার কারণে হাজার হাজার তরুণ আর চাকরিতে আবেদন করতে পারছে না।সদ্য চাকরির বয়স পার হওয়া তরুণদের প্রাণ গুমরে গুমরে কাঁদছে!

উপরন্তু, এখন এসে পড়েছে কোভিড-১৯ এর ভয়াল দৃষ্টি। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর বিস্তারের কারণে ইতিমধ্যে সরকারি চাকরিতে আবেদন করার সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই, লাখ লাখ তরুণ সত্যিই আজ হতাশাগ্রস্ত।ফলে পড়াশোনা শেষ করে যেসব তরুণরা চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাদের অনেকেই চাকরিতে প্রবেশের ন্যূনতম বয়স শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে পড়েছেন শঙ্কায়।

২৬ মার্চ থেকে দেশে চাকরির আবেদনের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এ কারণে একদিকে যেমন তাদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে পারিবারিক -মানসিক চাপের কারণে তারা হীনমন্যতায় ভুগছে।

৬ বছর বয়সে কোনো শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলে স্কুল শেষ করতে করতে তার বয়স হবে ১৬ বছর। কলেজ শেষ করবে ১৮ বছর বয়সে। তারপর অনার্স – মাস্টার্স করতে করতে প্রায় ২৫-২৬ বছর লেগে যাচ্ছে। তার উপরে আবার সেশনজট। সবমিলিয়ে একজন শিক্ষার্থী একাডেমিক সকল পড়াশোনা শেষ করে একটি ভালো চাকরিতে প্রবেশের প্রত্যাশা করতে পারছে না। আমাদের দেশে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে আগে স্নাতক( সম্মান) ছিল তিন বছরের কোর্স, এখন চার বছরের।

আগে স্নাতকোত্তর শেষ করতে প্রয়োজন হতো চার বছর, এখন পাঁচ বছর। স্কুলিং একবছর করে বাড়লেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়েনি।বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজ পর্যায়ে স্নাতক(সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে একদল আছে, যারা পাঠক্রম (সিলেবাস) ভালোভাবে পড়ে।একাডেমিক ফল ভালো করার প্রত্যাশায় দিন -রাত পাঠক্রম রপ্ত করতে থাকে।লক্ষ্য তাদের প্রথম শ্রেণির চাকরি অর্জন।যারা সাধারণত পাঠক্রম-কেন্দ্রিক পাঠে মনোনিবেশ করে, তারা চাকরির প্রস্তুতি ভালো ভাবে নিতে পারে না। তাদের প্রস্তুতি নিতে হয় পাঠক্রমের পরীক্ষা শেষ করার পর।

ফলে তারা চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অনেক কম পায়। চাকরিতে প্রবেশের প্রস্তুতি দ্রুত নেওয়ার আশায় পড়ে থাকায় অনেকেই তাদের বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা কমিয়ে শুধু বিসিএস পরীক্ষাসহ অন্যান্য চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেয়। এতে করে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পাঠক্রমে মনোযোগ দেওয়ার বেলায় নিরুৎসাহিত হন।

তাছাড়া বর্তমানে শিক্ষিতদের হার বেড়েই চলেছে এবং প্রত্যেক বছর আগের বছরের চেয়ে আরও বেশি চাকরি প্রত্যাশী চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে।কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রও পদসংখ্যা সীমিত হওয়ায় চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাস করে চাকরি পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

তথ্যমতে, বর্তমানে প্রায় ২৭ লাখ কর্মক্ষম তরুণ -তরুণী বেকার। সরকারি নিয়ম অনুসরণ করার ফলে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান ও ৩০ বছরের উর্ধ্বে জনবল নিয়োগ দিচ্ছে না। এত সব বাধা – বিপত্তি অতিক্রম করে কেউ যদি সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করেও, তারপর লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশন ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে চাকরি হতে হতে ৩/৪ বছর কেটে যায়।

গত বছরের ২৭ নভেম্বর, ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশ করে এখন ও প্রিলিমিনারি পরীক্ষাই নিতে পারেনি পিএসসি। করোনা ভাইরাসের সংকটের কারণে সকল নিয়োগ পরীক্ষার কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগের বিজ্ঞপ্তির পদগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে আরও সময় লাগবে।

অন্যদিকে,চাকরির বয়স শেষ হওয়ায় তরুণ জনগোষ্ঠীরা বর্তমানে এক বিপত্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। একদিকে সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা বাড়ানো হয়নি,অন্যদিকে এই মহামারী কেড়ে নিল চাকরির বয়সসীমা। এ যেন বর্তমানে তরুণদের জন্য শাঁখের করাতের মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর মানে তা চাকরি দেওয়া নয়। বরং একটি সম্ভাবনাময় শেষ হওয়া জীবন গাড়ির চাকা নতুন করে সচল করা। বিভিন্ন রাষ্ট্রে বেকার তরুণদের জন্য বেকার ভাতা চালু থাকলেও আমাদের দেশে নেই সেরকম কোনো ব্যবস্থা।বর্তমানে দেশের এই ক্রান্তিকালীন সময়ে চাকরি প্রত্যাশী এই তরুণদের জন্য যুগোপযোগী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার মধ্যদিয়ে কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment