করোনা মোকাবিলায় হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ

তানভির আহমেদ, হাবিপ্রবি প্রতিনিধি


চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনার বিস্তার এখন কাঁটাতারের সীমানা ছাড়িয়ে ১৯৯টি দেশে পৌঁছেছে। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে মানুষ, শীতপ্রধান দেশগুলোতে মৃত্যুর মিছিলে দিনের পর দিন যোগ হচ্ছে লাশের সংখ্যা। এসংখ্যা এখন হাজার ছাড়িয়ে।

এদিকে এশিয়ার স্বল্প, মধ্যে কিংবা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও আঘাত হেনেছে কোভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাস। দেশগুলো যেভাবে পারছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যতিক্রম নয় উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশও। সরকারি হিসেবে, এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধশত ছুঁইছুই, মারা গেছেন ৫ জন। সরকারি, বেসরকারি কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো সাধ্যমতো ছোটাছুটি করছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে।

বসে নেই উত্তরের বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরাও। রসায়ন বিভাগের উদ্দোগে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব ল্যাবে তৈরি করেছেন প্রথম দফায় ৫ শতাধিক ও দ্বিতীয় দফায় ৫০০ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের আশেপাশে মানুষদের কাছে। ক্ষুদ্রপরিসরে হলেও যা দেশের এই সংকট মুহুর্তে অনেকাংশে ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ঘরেবসে নেই ক্যাম্পাস ছুটিতে বাড়িতে যাওয়া মানবিক ও সচেতন শিক্ষার্থীরাও।

স্ব-স্ব গ্রাম, উপজেলা ও জেলার জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে গড়ে তুলছেন ছোট্ট ছোট্ট স্বেচ্ছাসেবক টিম, গঠন করছেন তহবিল ও একাট্টা করছেন নিজেদের মতো মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ তরুণদের। নিজেদের হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে কিনছেন হত-দরিদ্র মানুষদের জন্য চাল, ডাল, তেল, চিনি সহ শুকনা খাবার এবং তা বিলি করছেন নিজ নিজ উপজেলায়। এছাড়াও গ্রামের মানুষদের সচেতন করবার জন্য তারা লিফলেট বিতরণ করছেন ও এলাকাকে জীবানুমুক্ত করতে মসজিদ গুলোতে কিনে দিচ্ছেন সাবান ও ছিটাচ্ছেন জীবানুনাশক। গ্রামের দোকানগুলোর সামনে একে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট দূরত্ব নির্ধারনী দাগ।

তেমনি কিছু মানুষদের মধ্যে মধ্যে কৃষি অনুষদের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান। নিজ উদ্দোগে পুরো এলাকায় জীবানুনাশক স্প্রে করেছেন এ তরুণ। নাজমুল হাসান জানান,” ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অবস্থিত কাঞ্চনপুরে আমার গ্রাম। এবারের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে দেখি এলাকার অল্পশিক্ষিত অসচেতন মানুষ করোনা মোকাবিলায় কোন সতর্কতা গ্রহণ তো করেনই নি বরং মানছেনও না সামাজিক দূরত্ব। এসব আমাকে বিশেষভাবে ভাবায়। তাই এলাকার একটি ফেসবুক গ্রুপে নিজ আইডি থেকে পোস্ট দেই ও এবং সেখানে নির্দিষ্ট দিনে এলাকায় জীবানুনাশক স্প্রে করার কথা উল্লেখ করি।

অনুরূপ জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলায় ফুড এন্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মিনহাজ আবিদ জেলার নিজ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে গঠন করেন স্বেচ্ছাসেবক টিম। যারা নিজ উদ্দোগে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জীবানুনাশক স্প্রে করেন এবং মানুষদের সচেতন করেন।
এসময় তিনি জানান, “আমাকে একাজে সহযোগিতা করছে হাবিপ্রবির শিক্ষার্থী মামুন শাকিল, সাব্বির সহ অন্যরা।

কিছু প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ(PPE) যদি উপজেলা প্রশাসন বা কোন সংস্থা আমাদের সরবরাহ করতো তাহলে আমরা আরো উদ্যমী হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারতাম। আমরা পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে আরো চাঁদা তুলে বিভিন্ন বাজার, মসজিদ ও এর পাশেপাশে জীবানু নাশের অভিযান নামবো। আমাদের এসব কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসা উচিত “।

মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯ব্যাচের অপর ছাত্র যোবায়ের কাজ করে যাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে। জনসচেতনতামূলক পোস্ট দিচ্ছেন নিয়মিত এবং গুজব থেকে মানুষকে সচেতন হতে ও এসবে কান না দিতেও মানুষকে অনুরোধ করছেন।

এছাড়াও নীলফামারীর ডোমার, রংপুরের জলঢাকা, কুড়িগ্রাম, বরিশালের ভোলা, দিনাজপুরের সদর, বিরল সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা করোনা মোকাবিলায় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করে পাশাপাশি নিজ নিজ স্থান থেকে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

হাবিপ্রবিয়ানদের এমন মহৎ কাজে যেমন খুশি পরিবার তেমনি প্রশংসিত হচ্ছেন সমাজের সর্বস্তরে। তাদের দেখে মানবিক ও সহানুভূতিশীল হচ্ছেন আশেপাশের তরুণ প্রজন্ম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *