কল করলেই বিনামূল্যে মিলবে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা

সানজিদ আরা সরকার বিথী
ঢাবি প্রতিনিধি


জরুরি মুহূর্তে মুমূর্ষু রোগীদের বিনামূল্যে ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ দিতে এগিয়ে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ তিন নেতা।

এই বিশেষ উদ্যোগটি গ্রহণ  করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর সাবেক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগাঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স,ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ।

২৫ জুন থেকে ১২ টি সিলন্ডার নিয়ে শুরু হয়েছে এই সেবাটি।

প্রথমে এই সেবাটি ঢাকা থেকে শুরু হলেও ধীরে ধীরে সেবাটি আরও বিস্তৃতি করা হবে বলে জানান সমন্বয়ক সাদ বিন কাদের চৌধুরী।

নির্দিষ্ট কিছু মোবাইল নাম্বারে কল দিলেই মিলবে এই অক্সিজেন সেবা।বিনামূল্যে এই অক্সিজেন সেবা পেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ০১৭৭৬৯০৪৯৯৩ নাম্বারে যোগাযোগ করতে হবে।

অন্য সবাই সেবা গ্রহণের জন্য নিম্নোক্ত নাম্বারগুলোতে কল বা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপে ম্যাসেজ দিলেই হবে।

০১৭২৫-৩৪৩০৩৮
০১৬২৩-০০০১০০
০১৬৭৭-১২৫৭৫৮

জরুরি প্রয়োজনে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রয়োজন হলে সবসময় অক্সিজেন সিলিন্ডার হাতের কাছে পাওয়া যায়না।অক্সিজেন মজুত করার বিষয়টি দেখে এগিয়ে আসে ঢাবির তিন ছাত্র।এই সেবাটি কোভিড, নন-কোভিড উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।

অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য কোনো ফী বা জামানতের দরকার নেই শুধু ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন আর রোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র দেখালেই মিলবে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা।

সেবাপ্রত্যাশী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে  অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের জন্য কিছু  নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। নীতিমালাগুলো হলো–

১. আমাদের অক্সিজেন সেবা গ্রহণ করার একমাত্র শর্ত হলো চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র। চিকিৎসকের লিখিত পরামর্শ ব্যতীত আমরা অক্সিজেন সরবরাহ করব না। আর অক্সিজেন সিলিন্ডার নেওয়ার সময় বাহককে অবশ্যই তার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি নিয়ে আসতে হবে। অথবা পরিচয় পত্র সঙ্গে রাখলেই হবে।

২. যেহেতু আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেহেতু কেবল জরুরি প্রয়োজনে সেবাটি দেয়া হবে। যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না, তাই প্রাথমিক সাপোর্টের জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অক্সিজেন প্রদান করার পর সেবাগ্রহীতার কাছে ১২ ঘণ্টা থাকবে এবং এর মধ্যে নতুন কোথাও হতে সিলিন্ডার ব্যবস্থা করবার অনুরোধ থাকবে।

৩. অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের জন্য কোনো ফি দিতে হবে না এবং কোনো জামানতও জমা দিতে হবে না।

৪.  সিলিন্ডার এবং সম্পূর্ণ সেট বুঝিয়ে দেয়া হবে। আমাদের উদ্যোগে শামিল স্বেচ্ছাসেবী ডাক্তাররা প্রয়োজনে সঠিকভাবে অক্সিজেন দেয়া এবং ফ্লো-নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পরামর্শ দিবেন কিন্তু ব্যবহারকারীদের ভূলের জন্য কোনো দুর্ঘটনা হলে সেজন্য আমাদের দায়ী করা যাবে না, এই মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষর করতে হবে। অথবা সেবাগ্রহণকারী নিজস্ব ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেটি লাগাতে পারেন।

৫. প্রাথমিকভাবে সেবাটি কেবলমাত্র ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

৬. সিলিন্ডার চালানোর জন্য একজন প্রশিক্ষিত অপারেটর আমাদের দলে থাকবেন। তবে যদি আমাদের অপারেটর ব্যস্ত থাকেন তাহলে আপনাদের অক্সিজেন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও যথাযথ নিয়ম মেনে প্রশিক্ষিত অপারেটর বা স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা তা ব্যবহার করতে হবে।

এ সেবার বিষয়ে সমন্বয়ক সাদ বিন কাদের চৌধুরী দ্য ক্যাম্পাস টুডেকে বলেন, “সব করোনা রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। অনেকে বাসায় চিকিৎসা নিতে পারে কিন্তু বাসায় যেটি প্রয়োজন কভিড ১৯ রোগীদের শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হয় তারা বাসায় চিকিৎসা নিতে পারে হাসপাতালে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ। বাসায় বসে যেন চিকিৎসা নিতে পারে সেটা একটি ইস্যু।”

এই ছাত্রলীগ নেতা আরও বলেন, অন্যদিকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিলিন্ডার মজুদ করে রাখার কারনে একদিকে যাদের টাকা থেকে, সামর্থ্য থেকেও যেন পাচ্ছেনা। আবার দাম বেশি হওয়ায় যারা নিম্নবিত্ত তারাও পাচ্ছেনা, কেনার সামর্থ্য তো সবার নেই যে চিকিৎসা করাবে।যার কারনে আমরা চিন্তা করলাম যে এটা বিনামূল্যে দিলে মানুষ বাসায় বসে ট্রিটমেন্ট নিতে পারবে।এছাড়া আমরা আরেকটা চিন্তা করি সেটা হল যে হসপিটাল গুলাতে তো বর্তমানে বেডের চেয়েও রোগীর সংখ্যা বেশি।যেহেতু ভর্তি করতে হবে সব হসপিটাল গুলাতে সিলিন্ডার অক্সিজেন বা সার্ভিস চার্জ নেয়।

তিনি আরও বলেন, ‘হসপিটালগুলাতে যাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে পারি রোগীর প্রয়োজনে তো এইসব চিন্তা ভাবনা থেকেই কাজটা শুরু করছি।’

সকলের সার্বিক সহযোগিতা এবং তাদের পাশে থাকার আহবান জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ধূসর এই পৃথিবীতে তাদের এই মানবতার কাতরে পাশে থাকার উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার!

Scroll to Top