কেমন আছেন ঢাবির মুহসিন হলের দৃষ্টিহীন রহিম মামা!

সানজিদ আরা সরকার বিথী
ঢাবি


নাম আব্দুর রহিম। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখ সকলের কাছে রহিম মামা নামেই পরিচিত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলের খাবার বিক্রেতা; বয়স ৫০ এর কাছাকাছি হবে।

রহিম মামার চোখ অন্য দশজনের মতো দুচোখ স্বাভাবিক ছিল হঠাৎ জন্মের দু বছরের মাথায় চিকেন পক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে ডান চোখের দৃষ্টি শক্তি হারান। বাম চোখে ঝাপসা দেখলেও আঘাত পাওয়ার কারণে তাও দেখতে পান না।

দৃষ্টিহীন এই মানুষটিকে জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছেন তবে দমে যাননি। সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে জীবন যুদ্ধে অন্ধ হয়েও সাবলম্বী হয়ে প্রমান করে দিয়েছেন যে শারীরিক কোনো প্রতিবন্ধকতাই জীবনে চলার পথে বাঁধা হতে পারে না।

নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পুঁজি করে অন্যের কাছে হাত পাতেননি তিনি, নামেননি ভিক্ষাবৃত্তিতে বরং নিজেই নিজের ভরসা হয়ে অনেক চেষ্টা এবং পরিশ্রম করে নিজের পরিবারের ভরনপোষণ নিজেই বহন করেন।

আব্দুর রহিমের জন্ম মুন্সিগঞ্জ সদর থানার মামাশার গ্রামে। রহিম মামার যখন বয়স দেড় বছর, তখন তার পরিবার জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে পাড়ি জমায়।

বর্তমানে তারা থাকেন ঢাকার কামরাঙ্গীর চর এলাকায়। তিনি রাজধানীর অস্থায়ী প্রতিবন্ধী স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ালেখা করে এসএসসি পাস করেন।

চাকরি করার ইচ্ছা তার কখনই ছিল না। স্বাধীন কিছু করার চিন্তা থেকে খাবার বিক্রির স্বাধীন পেশা বেছে নিয়েছেন তিনি।

কসমেটিক আইটেম বিক্রির মাধ্যমে ঢাবির ক্যাম্পাসে তিনি ব্যবসা শুরু করেন ১৯৯৬ সালে। ফেরি করে কসমেটিক আইটেম ফেরি করে বিক্রি করতেন তিনি। বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে রহিম মামা ২০০৮ সাল থেকে মুহসিন হলে খাবার বিক্রি শুরু করেন। বাসা থেকে খাবার বানিয়ে বক্সে করে প্রতিদিন সকালে হলে নিয়ে আসেন তিনি। বাসায় রান্না কাজে সহযোগিতা করেন স্ত্রী সফুরা বেগম।

এই করোনার প্রাদুর্ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ;হলগুলোও খালি সেহেতু মুহসিন হলে তার খাবার বিক্রয়ের ব্যবসায় ও বন্ধ।ফলে মুহসিন হলের সেই রহিম মামা ও ভালো নেই।

হয়তো হলের অনেক কর্মচারী অন্যান্য টুকিটাকি কাজ করে নিজেদের প্রয়োজন মিটাচ্ছেন। কিন্তু রহিম মামা অন্ধ হওয়ায় সে অন্য কোনো কাজ ও করতেও পারছেননা, অথচ মাথার উপর একটি পরিবার।

এই লকডাউনে যদিও অনেক সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গরীবদের সাহায্য করছে কিন্তু রহিম মামা থাকেন কামরাঙ্গীর চর যেটা বস্তি এলাকা হওয়ায় পৌঁছায়না তেমন কোনো সাহায্য।

রহিম মামা সম্পর্কে দ্য ক্যাম্পাস টুডেকে মুহসিন হলের আবাসিক ছাত্র আহমেদ সিয়াম বলেন, ‘১ম বর্ষ থেকেই রহিম মামাকে দেখতাম রুমের আশেপাশে ২ টি বড় বড় ব্যাগে খাবারের বাটি নিয়ে ঘুরছে। ভাবতাম হলের ক্যান্টিনের মতই নিম্নমানের খাবার হব। একদিন মামার থেকে মুরগির মাংস দিয়ে ৪০ টাকার খাবার নিলাম। খেয়ে মনে হলো, ক্যান্টিনের মান আর রহিম মামার খাবারের মান আকাশ পাতাল ব্যবধান। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তার থেকে এক বাটি খাবার নিয়ে দুপুরে খেতাম।’

সিয়াম আরও বলেন, ‘লকডাউনে মামার অর্থনৈতিক অবস্থা একটু অবনতির দিকে। সবার কাছে অনুরোধ করছি রহিম মামাকে কিছু উপহার পাঠানোর জন্য। মামা যেমন আমাদের ঘরের খাবার পৌঁছে দিতেন, আমাদেরও উচিত তার দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানো।’

অন্যদের চোখ আছে, অভাবে কাজ করে খাচ্ছে, ত্রানের খুজেঁ চারদিকে পাড়ি জমায় কিন্তু রহিম মামা তো চোখে দেখেন না ;কোথায় যাবেন ত্রান খুঁজতে!

এমতাবস্থায় আমাদের অল্প অল্প ভালোবাসা এমন একজন ব্যক্তিত্ববান ব্যক্তির জন্য হতে পারে একটি পরিবারের আশার আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *