ক্লাসে ফিরতে চায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীরা

রাবি প্রতিনিধিঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রায় নয়মাস যাবত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষাজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বাড়িতে অবস্থান করলেও ক্যাম্পাসেই রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পড়ুয়া বিদেশী শিক্ষার্থীরা।

বন্ধ ক্যাম্পাসের ডরমিটরিতে থাকতে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না তাঁদের। তবে দীর্ঘদিন ধরে বদ্ধ কক্ষে থাকায় অনেকে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা। দ্রুত সকল সমস্যা কাটিয়ে আবারও ক্লাসে ফিরতে চায় তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ূম ইন্টারন্যাশনাল ডরমিটরিতে সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট ৪২জন বিদেশী শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। যার প্রত্যেকেই ডরমিটরিতে অবস্থান করেন। যার মধ্যে ৩২জন সোমালিয়ান, ৮জন নেপালী, একজন জর্ডানের এবং একজন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী শিক্ষার্থী। করোনার শুরুতে ৫জন নেপালী শিক্ষার্থী তাদের দেশে ফিরে যাওয়ায় বর্তমানে ৩৭জন বিদেশি শিক্ষার্থী ডরমিটরিতে অবস্থান করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডরমিটরির ভিতরে কোথাও দুই-তিনজন, কোথাও চার-পাঁচজন মিলে একত্রিত হয়ে বিকেলের আড্ডা দিচ্ছেন তাঁরা। বিদেশি ভাষায় নিজেদের মধ্যে চলছে খুনসুটি। তবে কেউ কেউ নিজ রুমে পড়াশোনা করছেন।

কথা হয় সোমালিয়ান শিক্ষার্থী আব্দুর রহমানের সঙ্গে। এগ্রোনমী এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের মাস্টার্সের এই শিক্ষার্থী জানান, করোনায় দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তারা ডরমেটরিতেই অবস্থান করছেন। থাকা এবং খাওয়ায় তেমন কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি তাদের। তবে ক্লাসে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।

দীর্ঘদিন এখানে থাকায় পরিবারকে মিস করছেন অর্থনীতি বিভাগের সোমালিয়ান আরেক শিক্ষার্থী মাহমুদ। তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরো পৃথিবী যাতায়াত ব্যবস্থায় বাধার মুখে পড়েছে। এতে করে ফ্লাইট ক্রাইসিসে পড়ে দীর্ঘদিন নিজ দেশে যাওয়া হচ্ছে না। তিনি দেশ ও পরিবারকে প্রচন্ডভাবে মিস করছেন।

এদিকে অধিকাংশ সময় বদ্ধ ঘরে থেকে মানসিক সমস্যায় অনুভব করছেন ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের আহমেদ মোহাম্মদ। তিনি জানান, করোনার পুরো সময় ধরে তিনি রুমেই অবস্থান করছেন। সারাদিন পড়াশোনা, অনলাইন ক্লাস, পরিবার ও প্রিয়জনদের সাথে কথা বলে কেটে যায় তার পুরোদিন।

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজার কিংবা স্টেশন বাজারে এসে খাওয়া-দাওয়া করেন তিনি। তবে করোনার এই সময়টি তার কাছে অসহ্যনীয় হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ সময় রুমে থেকে একগুয়েমিতে ভুগছেন তিনি। কাছের বন্ধুদেরও ভীষণভাবে মিস করছেন তিনি। ভার্চুয়াল জীবন ছেড়ে সরাসরি ক্লাসে ফেরার তীব্র ইচ্ছা তাঁর।

জানতে চাইলে ডরমিটরি ওয়ার্ডেন অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম বলেন, মহামারীর এই দিনগুলোতে প্রতিটি বিষয়ের আপডেট সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করেছি। একবার ভার্চুয়াল মিটিং করে রাজশাহীতে করোনার সার্বিক বিষয়ে তাদের জানিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে যেমন মাস্ক পরিধান করে চলাফেরা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের বিষয়ে এখনও প্রতিনিয়ত বলি। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত করতে ডরমিটরিতে প্রতি সপ্তাহে দুইবার জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয় বলে জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের খাওয়া দাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডরমিটরির ডাইনিং বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। ডাইনিং খোলা থাকা অবস্থায় ১শ টাকায় তিনবেলা খাবার দেওয়া হতো। তবে ডরমিটরিতে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী অবস্থান করায় তাদের খাদ্যাভ্যাসে পার্থক্যের কারণে অনেকে নিজেরাই রান্না করে খাচ্ছেন।

Scroll to Top