কয়েদী নাম্বার ৩৩৮৩৭৫

আবদুর রব শরীফ


মেয়েটা দেখতে অবিকল কদম আলীর মায়ের মতো হয়েছিলো।রোজ মা বলে ডাকতো। মায়ের মৃত্যুর আগে একটা নাক ফুল পছন্দ হয়েছিলো। কিনে এনে দেওয়ার পর সেটা না পরে কেনো জানি তুলে রেখেছিলেন সেদিন ৷

কদম আলীও মা মারা যাওয়ার পর দীর্ঘদিন নাক ফুলটা আগলিয়ে রেখেছিলেন৷ কোন একদিন মা রূপে ফিরে আসা মেয়ের নাকে সেটা দেখবেন বলে৷ নাকটাও মায়ের মতো হয়েছে অবিকল ৷

আস্তে আস্তে মেয়েটি বড় হতে থাকলো ৷ এই তো সেদিন কখন যে দেখতে দেখতে মেয়েটি নিজেই নাক ফুল পরবে বায়না ধরলো ৷ কদম আলীর মন আনন্দে ভরে উঠলো ৷ ঘটা করে নাক বিঁধিয়ে সেখানে নাক ফুলটি পরিয়ে দেওয়া হলো।

ইদানিং মেয়েকে দেখলে মায়ের স্মৃতি মনে পরে রোজ ৷ হঠাৎ একদিন খবর এলো তার মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না ৷ বুকটা হাহাকার করে উঠলো ৷ চারদিকে খোঁজ লাগানো হলো ৷

একটি বারো বছরের মেয়ের নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে ঢেকে গেলো পুরো শহর। থানার দারোগা আশ্বাস দিলো।কোনো কিছু যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না ৷ যাকে সামনে পায় তাকে জড়িয়ে ধরে বাবা বলতে থাকা, ‘আমার মেয়ের খোঁজ চাই ৷’

সপ্তাহ ব্যাপী উষ্কুখুষ্কু নির্ঘুম এক বাবার কাছে অবশেষে খবর এলো। টানা সাত দিন ধর্ষণের পর তার মেয়েকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে।এলাকাবাসী উদ্ধার করে তাকে মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। বেঁচে আছে মেয়ে ৷

বাসার সবাই মেডিক্যালের দিকে ছুটছে ৷তা না করে কদম আলী সাইন বোর্ড লিখছে। দুটো প্লে কার্ডও। চোখের জলে প্লেকার্ড কিছু লেখা লেপ্টে গেছে। আমার মেয়ে ধর্ষিত কেনো ৷ প্রশাসন জবাব চাই ৷

প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের পা ধরা বাকী।জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা। কেউ কেউ ক্লিক করছে। দেখছে। মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। এই যেনো সাধারণ ঘটনা। পত্রিকার এক কোণে পরে থাকা খবর। অবশেষে কদম আলী ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। সেদিন কয়েকজন পুলিশ এসে তারা পুনরায় আশ্বাস দিয়ে গেছে ৷

এভাবে আরেক সপ্তাহ চলে গেলো। সব আশা ভরসা নিঃশেষ। একজন ব্যর্থ বাবা ফিরে যাবেন ভাবছেন, প্রেস ক্লাব থেকে, বিচার না পেয়ে ৷ থানাকে পিছনে ফেলে।এক বুক জমা অভিমান।

সেটা খেয়াল করছিলো এক তথাকথিত ফেসবুক সেলেব্রেটি। তার মুঠোফোন বের করে সে লাইভে আসলো। সাথে ধর্ষিত এক বাবার গল্প। মুহূর্তে শেয়ার হতে থাকলো। কয়েক ঘন্টার পর সেটি টক্ অব দি কান্ট্রি ৷ ইস্যু হয়ে গেলো। শুরুতে দেখেও না দেখা এতোগুলো মাইক্রোফোন থেকে আজ একজন তার লতার ডান্ডাটা আরেকটু এগিয়ে দিয়ে বললো,’মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে, আপনার অনুভূতি কি?’

ঐদিকে চারদিকে বিচার চাই। বিচার চাই৷ স্লোগান৷ একটু আগে প্রধানমন্ত্রী ফোন করে সান্ত্বনা দিলো। পরের দিন নুয়ে থাকা এক বাবার সাথে সহস্র বাবার ভীড়। তাকে ঠেলে নিজের মেয়ে মনে করে সামনে চলে আসছে অন্য বাবারা ৷

আবারো জনস্রোতের উত্তাপে পেছনে সরে যাচ্ছে এটি ধর্ষিত মেয়ের বাবা। যতদূর চোখ যায় কেবলি একটি স্লোগান, আমার মেয়ে ধর্ষিত কেনো। বিচার চাই। বিচার চাই। তার মেয়ে আজ সবার মেয়ে ৷

ঐ যে ছেলেটি। লাইভ করা ছেলেটির আইডি চিরতরে নিখোঁজ।তার খোঁজ না করা একটি বাবারও অনেকদিন পরে জানতে ইচ্ছে হলো।কেমন আছে তার মেয়ের বিচার চেয়ে লাইভ করা ছেলেটি? সর্বশেষ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেদিন জানতে পারলো তার ঠিকানা। কয়েদী নাম্বার ৩৩৮৩৭৫

Scroll to Top