খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় | Khulna University

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় | Khulna University

আলমামুন সরদার, খুবি: মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বধ্যভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বাতিঘর হিসেবে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দেশের প্রথম ছাত্ররাজনীতি মুক্ত Khulna University (KU) -খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) । খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র সেশনজট মুক্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সকলের কাছে সমধিক পরিচিত।

দক্ষিণবঙ্গের জ্ঞান অর্জনের তীর্থক্ষেত্র ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের হৃদয়ের আলিঙ্গনে সিক্ত শ্রেষ্ঠ একটি বিদ্যাপীঠ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি খুলনা মহানগরী থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাশে গল্লামারীতে অবস্থিত। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাফল্য ও সুনাম অক্ষত রেখে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দক্ষতা সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গঠনে সর্বদা সার্থকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

তিলে তিলে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়টির সৃষ্টির পেছনে আছে সমৃদ্ধ এক ইতিহাস। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের শিক্ষার প্রসারের জন্য ও তাদের দীর্ঘদিন আন্দোলনের ফলস্বরূপ এই প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৭৪ সালে ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে খুলনা বিভাগে উচ্চ শিক্ষার্থে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সরকারী সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এরপর ১৯৯০ সালের জুন মাসে জাতীয় সংসদে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯০’ পাশ হয়।

মুক্তিযুদ্ধ, আন্দোলন ও বদ্ধ ভূমি স্মৃতিবিজড়িত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত একতলা ভবনটি দোতলা করণের মাধ্যমে শুভ যাত্রার সৃষ্টি হয় খুবির। যেটি আজ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রশাসনিক ভবন। ইতিহাসের কালো অধ্যায় আর একাত্তরের নির্মমতার সাক্ষ্য বহনকারী বধ্যভূমির উপর দাঁড়িয়ে আজকের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় গল্লামারীতে প্রায় প্রতিদিন গণহত্যা চালানো হতো।

তৎকালীন সময়ে হানাদার বাহিনী এই ভবনটি ব্যবহার করতো। বেতার কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের নামে মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে এখানে আটকে রাখা হতো। তাদের উপর চালানো হতো অমানুষিক নির্যাতন ও নৃশংসতা। ভয়ংকর নির্যাতন ও নৃশংসভাবে হত্যা করে ভাসিয়ে দেওয়া হতো গল্লামারীর বিলের স্রোতে। দেশ স্বাধীনের পরেও এখানে পাওয়া গেছে অজস্র নরকঙ্কাল।

একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর গ্রন্থের লেখক সুকুমার বিশ্বাস লিখেছেন, ‘ছবি তুলবার জন্য গল্লামারীর অভ্যন্তরে ধানক্ষেতে ঢুকে দেখলাম এক নৃশংস দৃশ্য। একাধিক লাশ পড়ে আছে সেদিকে। একটি কুকুর খাচ্ছে আর দূরে অপর একটি লাশের পাশে আর একটি কুকুর বসে হাঁপাচ্ছে। মনে হয় মানুষ খেয়ে তার উদর অতিমাত্রায় পরিপূর্ণ ।’ (মুক্তিযুদ্ধে খুলনা, মোল্লা আমীর হোসেন, ১৭৬ পৃষ্ঠা)।

আজকের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ বিনির্মাণের সেই স্মৃতিবিজড়িত জায়গার উপরে স্থাপিত হয়ে আলো ছড়াচ্ছে দেশ ও জাতি গঠনে। ছাত্ররাজনীতি থেকে একশ হাত দূরে থাকলেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যথেষ্ট রাজনীতি সচেতন। কোটা আন্দোলন থেকে শুরু করে সড়ক আন্দোলন, সব জায়গায় দেখা গেছে তাদের অগ্রণী ভূমিকা।

উপাচার্যবৃন্দ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম উপাচার্য হিসেবে ১ আগস্ট ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাম রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে পর্যায়ক্রমে ড. মুহম্মদ গোলাম আলী ফকির, ড. এস. এম. নজরুল ইসলাম, ড. জাফর রেজা খান, ড. এম আবদুল কাদির ভূইয়া, ড. মো: মাহবুবুর রহমান, ড. মো: সাইফু্দ্দীন শাহ এবং সর্বশেষ ড. মো: ফায়েক উজ্জামানের মেয়াদ শেষ হয়েছে। চলতি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য পদ শূন্য অবস্থায় রয়েছে।

শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্যদের তালিকা ও সময়কাল:-

  1. ড. গোলাম রহমান (আগস্ট ১, ১৯৮৯ -আগস্ট ২২, ১৯৯৩)
  2. ড. মুহম্মদ গোলাম আলী ফকির (আগস্ট ২৩, ১৯৯৩ – আগস্ট ২২, ১৯৯৭)
  3. ড. এস. এম. নজরুল ইসলাম (আগস্ট ২৩, ১৯৯৭ – আগস্ট ২২ , ২০০১)
  4. ড. জাফর রেজা খান (আগস্ট ২৯, ২০০১ – নভেম্বর ১৮, ২০০১)
  5. ড. এম আবদুল কাদির ভূইয়া (নভেম্বর ১৯, ২০০১ – মার্চ ৩, ২০০৫)
  6. ড. মো: মাহবুবুর রহমান (মার্চ ৩, ২০০৫ – মার্চ ২ ২০০৮)
  7. ড. মো:সাইফু্দ্দীন শাহ (মার্চ ৩, ২০০৮ – নভেম্বর ১৬, ২০১২)
  8. ড. মো: ফায়েক উজ্জামান (ভারপ্রাপ্ত) নভেম্বর ১৭, ২০১২ – ফেব্রুয়ারি ০১ , ২০১৩
  9. ড. মো: ফায়েক উজ্জামান (ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৩ – ২০২১)

শিক্ষা কার্যক্রম ও আবাসিক হল

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯১ সালের ২৫ নভেম্বর ৪টি পাঠ্য বিষয়ের ৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে । বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি ৮ টি স্কুলের অধীনে ২৯ টি ডিসিপ্লিনে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে সাফল্যের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। শিক্ষাদানে রয়েছেন প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক, যাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ পিএইচডি ডিগ্রিধারী।

ছাত্ররাজনীতি মুক্ত থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থাকে সর্বদা স্লোগান মুক্ত। দলীয় ব্যানার ও পোস্টারের নেই কোনো ছড়াছড়ি। মুক্তচিন্তার বিকাশে শিক্ষার্থীরা জীবন গড়ার প্রত্যয়ে প্রতিনিয়ত সাফল্যের সংগ্রামে লিপ্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক দাঙ্গায় খালি হয়নি কোনো মায়ের কোল। সন্ত্রাসের কালো থাবায় কখনো রক্তে রঞ্জিত হয়নি নীল-হলুদ বাসের এই ক্যাম্পাস।

অনুষদ ও ডিসিপ্লিনসমূহ

বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি স্কুলের আওতাধীন ডিসিপ্লিনসমূহ-

  • স্থাপত্য ডিসিপ্লিন
  • কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ডিসিপ্লিন
  • নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিন
  • ইলেক্ট্রনিক্স ও যোগাযোগ প্রকৌশল ডিসিপ্লিন
  • গণিত ডিসিপ্লিন
  • পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন
  • রসায়ন ডিসিপ্লিন
  • পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন

জীববিজ্ঞান স্কুলের আওতাধীন ডিসিপ্লিনসমূহ-

  • ফিশারীজ ও মেরিন রিসোর্স টেকনোলজী ডিসিপ্লিন
  • ফরেস্ট্রী ও উড টেকনোলজী ডিসিপ্লিন
  • পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন
  • জীবপ্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল ডিসিপ্লিন
  • সয়েল, ওয়াটার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিন
  • এগ্রোটেকনোলজী ডিসিপ্লিন
  • ফার্মেসি ডিসিপ্লিন

ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের আওতাধীন ডিসিপ্লিনসমূহ-

  • ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিন
  • মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিন

কলা ও মানবিক স্কুলের আওতাধীন ডিসিপ্লিনসমূহ-

  • ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য ডিসিপ্লিন
  • বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ডিসিপ্লিন
  • ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিন

সমাজবিজ্ঞান স্কুলের আওতাধীন ডিসিপ্লিনসমূহ-

  • অর্থনীতি ডিসিপ্লিন
  • সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন
  • উন্নয়ন অধ্যয়ন ডিসিপ্লিন
  • গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা

আইন স্কুলের আওতাধীন-

  • আইন ডিসিপ্লিন

চারুকলা স্কুলের আওতাধীন ডিসিপ্লিনসমূহ-

  • ড্রয়িং ও পেইন্টিং ডিসিপ্লিন
  • প্রিন্ট মেকিং ডিসিপ্লিন
  • স্কাল্পচার (ভাস্কর্য) ডিসিপ্লিন

শিক্ষা ও গবেষণা স্কুলের আওতাধীন-

  • শিক্ষা ও গবেষণা ডিসিপ্লিন

আবাসিক সুবিধার জন্য আছে অপরাজিতা, খানজাহান আলী, খানবাহাদুর আহছানউল্লাহ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল নামে পাঁচটি আবাসিক হল।

প্রিয় জায়গা ও স্মৃতিরপাতা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রিয় জায়গা তপনদা, সাইদুল ভাইয়ের চায়ের দোকান, অনিকেত প্রান্তরসহ বেশ কিছু মনোমুগ্ধকর স্থান। হাদি চত্বর ও কটকার শোকাবহ ঘটনার স্মৃতি অম্লান করে রাখার জন্য রয়েছে স্মৃতিসৌধ। ভাষা শহীদ ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলা মাকে রক্ষায় প্রাণবাজি রাখা বীর বাঙালির প্রতিচ্ছবি বহন করে দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনার ও ‘অদম্য বাংলা’ ভাস্কর্য। সাংস্কৃতিক সংঘটনগুলো নানামুখী অনুষ্ঠানে প্রতিনিয়ত নতুন রূপে সাজে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের “মুক্তমঞ্চ”। ক্যাফেটেরিয়াতে বসে চায়ের কাপে ওঠে বন্ধুদের মাঝে গল্পের ঝড়।

জৈববৈচিত্র, সংস্কৃতি ও সংঘটনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলার রূপের সাথে মিশে আছে সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মুগ্ধতায় ভরা খুবির ক্যাম্পাস দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় দর্শনার্থীদের। সুন্দরবনের স্মৃতি রক্ষার্থে একটা অংশ জুড়ে রয়েছে নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি। হরেক রকমের পাখির আনাগোনায় ক্যাম্পাসের পূর্ণতা ফিরে আসে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আছে ৩০ টির বেশি সংগঠন।

নৈয়ায়িক (বিতর্ক সংগঠন),বাঁধন (রক্তদান ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন), খুবিসাস, রোটারেক্ট ক্লাব, পোডিয়াম (স্পিকিং), কৃষ্টি (সংগীত), ভৈরবী (সংগীত), স্পার্ক (নৃত্য), নৃ-নাট্য, ছায়াবৃত্ত, নয়েজ ফ্যাক্টরি, খুলনা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফি সোসাইটির মতো সংগঠন। এসব সংগঠন তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উপহার দিচ্ছে হারিয়ে যাওয়া মেধাবীদের আর তুলে ধরছে শিক্ষিত তরুণদের সমাজের প্রতি মানবতার চিত্র।

“বারো মাসে তেরো পার্বণ” আবহমান বাংলাদেশের এই প্রবাদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েও লক্ষ্য করা যায়। পিঠা উৎসব, বাউল উৎসব, পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখের আয়োজন ক্যাম্পাসে গ্রাম বাংলার এই আবহকে জানান দেয় প্রতিবছর। তিনদিন ব্যাপী শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান ‘র‍্যার্গ ডে’ ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠানে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা।

এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক অনুষ্ঠানে ক্যাম্পাস থাকে সর্বদা মুখরিত। খেলার মাঠে ডিসিপ্লিনগুলোর মধ্যে দেখা যায় নানাবিধ খেলার জমজমাট প্রতিযোগিতা। খেলাপ্রিয় ক্যাম্পাসটিতে জয়ী হওয়ার পরে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের মধ্যে আবেগজনিত স্লোগান চোখে পড়ার মতো।

গবেষণা ও ভবিষ্যতের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র শিক্ষাদানকে প্রসারিত করছে না, বরং গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও দিকনির্দেশনা প্রদানে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মনুষ্যসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা ঝুঁকি মোকাবেলার পন্থা উদ্ভাবনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাস-উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে ক্যাম্পাসটি রাখছে নানামুখী অবদান।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সালে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে উদ্ভাবনীতে শীর্ষস্থান, গবেষণায় দ্বিতীয় এবং সামাজিক গবেষণায় ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করে। ২০২০ সালে উদ্ভাবনীতে শীর্ষস্থান ধরে রেখে ধারাবাহিতা বজায় রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সুনাম কুঁড়িয়ে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির পর থেকে যেমন সফল্যের জয়গান আছে তেমনি এখানে রয়েছে আবাসন সংকটসহ বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা। বর্তমানে ১০৬ একর জমির সাথে নতুন করে ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবে একটু হলেও স্বস্তির নিশ্বাস হবে বলে আশা করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্প্রসারিত এই নতুন ক্যাম্পাস করা হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। নাম হবে—খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু ক্যাম্পাস।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বেশ কিছু নির্মাণাধীন কাজ। চলতি উন্নয়ন পরিকল্পনায় আরও একটি দশ তলা একাডেমিক ভবন (জয়বাংলা ভবন), লালন সাঁই মিলনায়তন (টিএসসি) সুলতানা কামাল জিমনেসিয়াম ভবন, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী মেডিকেল সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এসব ভবনের কাজ আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে শেষ হলে ক্যাম্পাসে যোগ হবে নতুন মাত্রা। যার মধ্যে দিয়ে কিছুটা হলেও আশাজাগানিয়া গল্পের সৃষ্টি হবে।

নতুন এই ক্যাম্পাসে আগামী দিনের চাহিদার আলোকে যুগোপযোগী শিক্ষা, গবেষণাসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন বিষয় খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সামুদ্রিক সম্পদ বিকাশ, আহরণ, সংরক্ষণের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির বিকাশ, জলবায়ু ও উপকূলীয় পরিবেশ ও প্রতিবেশ, জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সুন্দরবন নিয়ে অধিকতর গবেষণা, মহাকাশ বিজ্ঞানসহ নতুন নতুন কারিগরি ও প্রযুক্তিগত বিষয়, সামাজিক ও মানবিক বিদ্যার নতুন নতুন শাখায় উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ওপর আগামী দিনে জোর দেওয়া হবে। যার মধ্যে দিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ব পরিমণ্ডলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় তার সাফল্য জানান দিবে।

নীল-হলুদ বাসের এই ক্যাম্পাসটি প্রতিবছর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করার মধ্য দিয়ে তাদের ভিতরে একবুক স্বপ্নের আশা জাগায়। নতুন করে বাঁচতে শেখায়। ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসে তাদের স্বাধীনভাবে মুক্তচিন্তার কুঁড়েঘরে জ্ঞান ভাণ্ডার সংগ্রহের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে না। তপনদা কিংবা সাইদুল ভাইয়ের দোকানে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে গল্পে মেতে থাকা প্রতিটি শিক্ষার্থীর রয়ে যায় হাজারো জীবন গল্প।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণের এমনি হাজারো আশাজাগানিয়া গল্প শোনার প্রতীক্ষায়। হাজার বছর বেঁচে থাকুক ভালোবাসার ক্যাম্পাস। চিরযৌবনা থাকুক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

এই প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন দ্য ক্যাম্পাস টুডের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আলমামুন সরদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *