গণরুমে কাটানো সময়গুলো নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেরা মুহূর্ত

গণরুমে কাটানো সময়গুলো নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেরা মুহূর্ত

হাঁটি হাঁটি পা পা করে স্কুল,কলেজ জীবন শেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন নিয়েই বড় হয় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বছর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর থাকার জায়গা হয় ৩০-১০০ জনের সম্মিলিত গনরুম নামে প্রকাণ্ড এক রুমে।

গণরুমের এক একজন শিক্ষার্থী এক একটা চরিত্র। এখানে যেমন আতেল মার্কা শিক্ষার্থী দেখা যায় তেমনি সারারাত আড্ডাবাজি করে পরীক্ষার আগের রাত কোন রকম সীট পড়ে পাশ করা শিক্ষার্থীরও দেখা মেলে।এখান থেকেই উঠে আসে হাজারও ছাত্রনেতা, রাজনীতিবিদ, সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া কণ্ঠস্বর।

গণরুমেই দেখামিলে -সামান্য কথাতেই যেমন মারামারি তেমনি বন্ধুর সামান্য বিপদেও রাত জেগে শুশ্রূষা করা, একটা বিড়ি ১০-১২ জন মিলে শেয়ার করে খাওয়ার অভিনব দৃশ্য আবার রাত জেগে বেসুরা গলায় সমস্বরে গান বলতে।

গণরুমে কাটানো সোনালী সময় স্মৃতিচারণ করে শিক্ষার্থীদের ভাবনা জানাচ্ছেন- দ্য ক্যাম্পাস টুডে এর শেকৃবি প্রতিনিধি মাজেদুল ইসলাম

মনিকা আশরাফি
কৃষি অনুষদ-৭৭ ব্যাচ
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

স্কুল, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে গ্রাজুয়েশনের জন্য জায়গা করে নিলাম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার থাকার জন্য জায়গা হলো বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল গনরুমে। গণরুম নামটা শুনেছিলাম অনেক আগেই।কিন্তু২০১৮ সালের ২ রা জানুয়ারিতে দেখা মিললো কাঙ্ক্ষিত সেই গণরুমের। প্রায় ৩৪ জন এক রুমে গাদাগাদি করে থাকার নামই নাকি গনরুম।

প্রথমে তো খুবই কান্না পাচ্ছিলো এতসব নতুন নতুন মুখ এবং গণরুমের হযবরল অবস্থা দেখে। গণরুমে শূন্যস্থান বলে কিছু ছিল নাহ।জামা-কাপড় রাখতে হত বেডের সঙ্গে রশি টানিয়ে। নষ্ট ফ্যান দিনের পর দিন ঠিক হত না!!গরমের দিনে পরিস্থিতি অসহ্য হয়ে উঠত।এছাড়া টয়লেট স্বল্পতা,ডাইনিংয়ের নিম্নমানের খাবার এবং জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার মত বিড়ম্বনা তো ছিলোই।বিশেষ করে পরীক্ষার সময় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হত।শীতকালে গাদাগাদি করে থাকা গেলেও গরমের দিনে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠত।

তবে ভার্সিটি লাইফের সবথেকে আনন্দঘন ও সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর একমাত্র জায়গা হল “গণরুম”। দীর্ঘ একবছরের ও বেশি সময় ধরে গণরুমে ছিলাম।গণরুমের কথা মনে পড়লেই অনেক স্মৃতিই চোখের সামনে ভেসে আসে। সবাই মিলে রাত জেগে গল্প করা,সকালের ক্লাসের জন্য সবাইকে জাগিয়ে তোলা,বাথরুমের জন্য লাইনে দাঁড়ানো,মাঝরাতে সবাই মিলে মুড়ি মাখা খাওয়া,দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি।সবথেকে মজার বিষয় ছিল কেউ রান্না করলে একা খেত না,সবাই মিলে ভাগ করে খেতাম। এখানে কে কাছের,কে দুরের কোনো ভেদাভেদ ছিল নাহ।

কেউ অসুস্থ হলে তার জন্য সবাই মিলে চিন্তিত হওয়া,সবমিলিয়ে অন্য একটা পরিবার খুঁজে পাওয়া। কারো মন খারাপের অপশন ছিল নাহ।কারো মন খারাপ থাকলে তাকে ঘিরে ধরে সবাই মিলে বুঝাতো এবং তাকে হাসানোর চেষ্টা করত। এক্সামের সময় সবাই মিলে একসাথে পড়তে হত,এতে কারো কোনো সমস্যা থাকলে তা সহজেই সমাধান হয়ে যেত।গণরুম আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে।”গণরুম” আসলেই একটা ভালোবাসা।এখন চার জন মিলে এক রুমে থাকি কিন্তু সেই গণরুমের কাটানো মুহূর্তগুলো বড্ড মিস করি।

মোঃসোহেল রানা
১৮-১৯ সেশন
লোকপ্রশাসন বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সবচেয়ে স্মরণীয় ও উপভোগ্য ছিলো গণরুমে থাকাকালীন সময়টা। মাথা গোঁজানোর জন্য একটু জায়গার মধ্যে গাদাগাদি করা,অসংখ্য গল্পে সব বন্ধুর হাসিতে ফেটে পড়া, রাত জেগে সোডিয়াম বাতির নিচে ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে আড্ডায় মেতে ওঠা, নির্ঘুম জেগে থাকা শহরের খুব কাছে ছিলাম প্রথম বর্ষে। গোসল হোক কিংবা ক্যান্টিনে যাওয়া, লম্বা লাইন পেরুতে হতো। আমরা নিশাচর ছিলাম। তখন আমরা সবাই বন্ধনহীন মুক্তজীবন উপভোগ করতাম। এখন আর সেসব করা হয়না। আমি এখন আর গণরুম বাসী নই, তাই।

হৃদয় কুমার শীল
কৃষি অনুষদ- ৭৭ ব্যাচ
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

গণরুম আমার কাছে কোন রুম বা থাকার ঘর না, এটা আমার কাছে ভালবাসার উদ্যান।বিশাল গণরুমের প্রতিটা প্রান্তে হাজারো চরিত্রের হাজারো অভিনয় লুকায়িত আবার কেউ কেউ নীরব দর্শক। যেখানে অসুখ ছিল কিন্তু সুখের অভাব ছিল না। যেখানে কারো কাউকে মন খারাপের সুযোগ নেই। ইচ্ছে হলেই মগ,বালতি হাতে নিয়ে জমতো গানের আসর,উরাধুরা নাচেই কেটে যেত প্রহর। ২ মিনিটের তাড়া দেওয়া গভীর রাতের শিক্ষকেরাই ছিল আমাদের অবুঝ শুরুর রক্ষক। গভীর রাতে মেয়েদের হলের সামনে জোরালো কণ্ঠের গানেই সান্ত্বনা খুঁজে পেত ব্যর্থ মন।

মাঝহারুল ইসলাম রিপন
ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদ
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

“গনরুম” শব্দটি আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যারা হলে থাকি, কমবেশি সবাই খুব কাছে থেকে উপলব্ধি করেছি। এটা শুধু একটা শব্দ নয়, আমাদের সাবেক গণ রুমবাসী কাছে এটা একটা আবেগ,ভালোবাসার নাম। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গণ রুমবাসী, গনরুম ছাড়ার পর বিষয়টি ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবে। এই আসলে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার বেশীর ভাগই আসে গনরুম নামক এই খন্ডকালীন সময় থেকেই।

সকল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া, অনেকেই হয়তো এখান থেকেই শেখে।এক কথায় এটা ছিল ক্যাম্পাসের সবচেয়ে সোনালি সময়। কি নেই এখানে!!!!

বিভিন্ন এলাকার, বিভিন্ন মানসিকতার সমবয়সী বন্ধুরা মিলে একসাথে গাদাগাদি হয়ে থাকা। গভীর রাতে ইমিডিয়েট বড়ভাইদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা মোস্ট জুনিয়রদের সেই ঐতিহাসিক মিটিং, যেখান থেকেই আমি আমরা ক্যাম্পাসে সবার সাথে চলার শিষ্টাচার শিখি। বন্ধুর বিপদে একসাথে লড়াই করতে শিখি। মিটিং শেষে গণ রুমবাসী ভাইদের ভালোবাসার বিপরীতে দোকানে ভাইদের পকেট খালি করতে শিখি। গভীররাতে ক্যাম্পাসের ডাব গাছগুলোর কচি ডাব যেন গণ রুমবাসীর তৃষ্ণা নিবারণের একমাত্র পানীয়। ডাব পেরে খাইতে গিয়ে প্রক্টর স্যারের দৌড়ানি।

আমি নিজেই ডাব গাছে উঠতে পারি। একদিন গাছের উপরে থাকা অবস্থায় এক স্যার চলে আসে। যা হওয়ার তাই হলো!!! এভাবেই প্রায় ভোরের দিকে রাতের ডাব মিশন-আড্ডা শেষ করে হলে আসার সময়, মেয়েদের হলের সামনে সেই যে বেসুরা গলার গান!! সবাই যেন শিল্পী। বাবা-মার যে আদরের ছেলেটি রাত দশটা বাজলেই ঘুমোতে যেত, সেও যেন যুবক বয়সের প্রাণ ফিরে পায় এই গনরুমে এসে।

এখন রাত ৩ টা যেন তার কাছে কিছুই না। বন্ধুর বিপদে এই শান্ত ছেলেটিও বন্ধুকে বাঁচাতে রড হাতে দৌড় দিতে ভয় পায়না। সারারাত এভাবে কাটিয়ে মাত্র ২-৩ ঘণ্টা ঘুমানো, এরপর সকালে নাস্তা খেতে খেতে সকাল ৮ টার ক্লাসে দৌড় লাগানো। ঘুম পাগল বন্ধুকে লাথি দিয়ে ঘুম থেকে উঠানো,না উঠলে ভয়ংকর সকল শিক্ষকদের রক্তিম চক্ষু উপেক্ষা করে সেই ঘুম পাগল বন্ধুর জন্য এটেন্ডেন্স দিয়ে দেওয়া।

পরিবারের বাইরে এই গণ-রুমটিই যেন আমাদের দ্বিতীয় পরিবার। এর কোনো সদস্য অসুস্থ হইলে যেন পুরো রুমে এক অদ্ভুত অস্থিরতা নেমে যায়। বন্ধুকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়, চোখ টলটল করে সবার। জানিনা গনরুমের কোন বন্ধুর অসুস্থতায় কেন সবাই এমন অস্থির হয়ে ওঠে৷ কে হয় এরা আমার, কয়দিনেরই বা পরিচয়!!!

কোন ধরনের বন্ধু চান আপনি? এখানে যেমন আছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী বন্ধু, তেমনি আছে শলাকায় টান দিয়ে ধোঁয়া উড়ানো বন্ধু। যেমন আছে সারাক্ষণ বই নিয়ে পরে থাকা আঁতেল বন্ধু, তেমনি আছে পরীক্ষার আগের রাতে সীট ফটোকপি করা, সবার আগে ঘুমিয়ে পরে, সকাল বেলা মাত্র ২-৩ ঘণ্টা পড়ে পরীক্ষা দেওয়া বন্ধু।

পরীক্ষার আগের রাতে সবাই যেন জামায়াত করে রিডিং রুমে পড়তে যায়। হোক না সেটা তীব্র শীতের গভীর রাত বা প্রচণ্ড গরমের গাঁ ঘামানো রাত। নির্ঘুম সেই রাত কাটিয়ে পরীক্ষা শেষে সারাদিন যেন এক প্রশান্তির ঘুম আসে গনরুমে। আবার কেউবা প্রেম পাগল। তেমনি আছে মেয়েদের সাথে কথা বলতে ইতস্তত করা বন্ধু। সবাই যেন এই গনরুমে এসে এক নদীতে গাঁ ভাসায়।

শুধু মাত্র গণ-রুমেরই এই ক্ষমতাটা আছে এরকম বিভিন্ন ধরনের বন্ধুদের এক জায়গায় আনার। সবার মধ্যে এক অদ্ভুত অন্তরঙ্গতা চলে আসে এই গনরুমে।বড্ড মিস করি গণরুমের সোনালী দিনগুলো

মোঃ মেরাজ
সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে সবে মাত্র চান্স পেয়েছি। গনরুম নিয়ে নানা কথা শুনে এক রকম ভয়, আতংক আর উদ্দীপনা কাজ করতে থাকে ভর্তির পর ক্লাস শুরু না হওয়া অব্দি। নিজেকে যাতে মানিয়ে নিতে পারি তাই বড় ভাইদের নিকট গিয়ে তাদের থেকে সাহস নিয়েছি, এক ভাই তো একদিন বলল গনরুম কে এক কথায় বললে তা হল “সার্ভাইভাল অফ দ্যা ফিটেস্ট”। তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন- এখানে কেউ ১ বছর অবস্থান করতে পারলে সে যে কোন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে কোন সমস্যা হবে না তার।

অনেক উৎকন্ঠা আর শঙ্কা একসাথে নিয়ে উঠে পড়লাম গনরুমে। সবই অপরিচিত মুখ কেউ কাউকে চেনে না। একটা বিষয় সবার মধ্যে কমন ছিল তা হল ইমিডিয়েট সিনিয়র ভাইদের নিয়ে শঙ্কা সবাই ইতিমধ্যেই আমার মত পরিচিত বড় ভাইদের থেকে অল্প বিস্তর তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া অঘটন গুলো শুনেছে আর ভাবছে হয়ত এগুলো আমাদের সাথেও হবে।

তাই আমরাও একটু নির্ভাবনায় ছিলাম। হঠাৎ একদিন রাত ১০ টার দিকে গনরুমের দরজায় লাথি আর অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে করতে ভিতরে ঢুকলও প্রায় ৩০/৩৫ জন, আমরা এই অপ্রস্তুত অবস্থায় ঘাবড়ে গেলাম গালাগালির মধ্যেই তাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন বলে উঠল এই তোরা ৫ মিনিটের মধ্যে ফর্মাল হ। ফর্মাল বলতে প্যান্ট শার্ট পড়ে লাইন ধরে দাড়াতে হবে।

তাই করলাম কি আর করার। ওরা এবার এক এক করে নাম জিজ্ঞেস করতে থাকলো যারা শুধু নাম বলে চুপ ছিল তাদের সামনে নিয়ে এসে মুরগী বানিয়ে রাখলও আর যারা মুরগী হতে পারলো না তাদের জানালার গ্রিলের সাথে ঝুলিয়ে রাখলো এবার ওদের মধ্য থেকে একজন পরিচয় কিভাবে দিতে হবে তা শিখিয়ে দিল। বলল শুধু নাম জিজ্ঞেস করলেও ফুল পরিচয় টা বলতে হবে এটাই নাকি এখান কার ট্রাডিশন। পরে অসংখ্য বার নানা অজুহাতে এই কয়েকটি কথা কতশত বার তাদের শুনাতে হয়েছে একেক জনকে তার কোন হিসাব নেই।

কেউ হয়ত একটু পরিচয় দিতে গিয়ে হেসে ফেলেছে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি তো করবে সাথে নানা ঠুনকো অজুহাতে অনেকের গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছে এই তথাকথিত বড় ভাইয়েরা। তারা নাকি গনরুমে নবীনদের ম্যানার শেখায় এটা তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। যখন যেখানে তাদের সাথে দেখা হবে সালাম দিতে হবে। কেউ যদি সালাম দিতে ভুলে যেত বা চিনতে না পারার কারনে এড়িয়ে যেত সেদিন গণরুমে তার উপর চলতো নানা ধরনের শারীরিক মানসিক নির্যাতন। বলতো এই তুই বড় ভাইকে গুনিশ না রাস্তায় সালাম দিস নাই কেন! তার সেই অপরাধে সকল কে লাফালাফি করতে হত। লাইট ফু দিয়ে নিভানোর মতো মজাদার দৃশ্য। তবে গনরুমের প্রথমদিকের দৃশ্যটা ভয়ংকর হলেও ধীরে ধীরে ভাইদের সাথে সখ্যতা তৈরি হয়।নির্ভরশীলতার আরেক নাম হলো ইমিডিয়েট সিনিয়র।

গনরুমে থাকাকালীন সবচেয়ে ভালো লাগতো তাবলীগের ভাইরা ইসলামিক দাওয়াত নিয়ে আসতো আর আমরা সম্মিলিতভাবে ভাইদের আলোচনা শুনতাম। বড্ড মিস করি মুহূর্তগুলো। এখন।বন্ধুদের সাথে রাত জেগে আড্ডা ও একাডেমিক বিভিন্ন টপিকস নিয়ে সম্মিলিত আলোচনার সূচনা এই গণরুম থেকেই। সবাই মিলে নীল ডাউন,মুরগী হওয়া,রেলগাড়ি হওয়া সহ এসব ঘটনা এখন মনে করলে হাসি পায়। মিস করি গনরুমে কাটানো মুহূর্তগুলো।

নুর ইসলাম মাহমুদ
কৃষি অনুষদ-৭৭ ব্যাচ
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সময়টা ২০১৮ এর জানুয়ারির প্রথম দিকে, আরও ৫০ জন ছাত্র এর সাথে আমার আবাসন হইলো একটি বৃহৎ রুমে। সবাই ছিলো অপরিচিত, এক অদৃশ্য ভয় কাজ করছিল আমার মধ্যে। যা হোক সকলের সাথে পরিচিত হয়ে অনেক ভাল লাগছিলো আমার। প্রথম দিন গণরুমের পরিবেশে আমার যে অনেক বিরক্তিকর লেগেছিল সে কথা বলা বাহুল্য। তবে গণরুমের সময় গুলো যে জীবনের সবচেয়ে আনন্দপূর্ণ সময় ছিল সেকথা নিশ্চিত হবে বলা যায়।

সকলের সাথে সবকিছু ভাগাভাগি করে নেওয়া এবং পরমতসহিষ্ণুতা শিক্ষার এক মহানশিক্ষালয় এই গণরুম।সারাদিন কর্মব্যস্ততা শেষে একজন ছাত্র এই মহান শিক্ষাসংবলিত বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশের সাথে সাথে তার সকল ক্লান্তি যেন অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রতি দিন রাত ৩ টা অবধিজেগে তাস খেলা যেন এখানে এক অদ্ভুত রুটিনের মত,যদিও আমি আমার স্বভাববিরুদ্ধ আচরণ করে কখনো তাস খেলার সে আনন্দটুকু উপভোগ করতে পারিনি, তথাপি গণরুমে যে সময়গুলো কাটিয়েছিলাম তাহা আমার জীবনের স্মৃতিতে চিরকাল অমলিন হয়ে থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment