গবেষণায় শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে গবেষণা বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হবে শিক্ষকরা

রাবি প্রতিনিধি


স্কোপাস’র প্রকাশিত এক জরিপে গবেষণায় শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)।

শীর্ষে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গবেষণা খাতে বরাদ্দ পেয়েছে মাত্র ১.১৫ শতাংশ টাকা। বরাদ্দকৃত এই অর্থ থেকে এক চতুর্থাংশেরও কম শিক্ষককে গবেষণায় বরাদ্দ দিতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর এতে এই শিক্ষাবর্ষে বরাদ্দ পাবেন না এক হাজারের বেশি শিক্ষক।

অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক আফসার আলীর তথ্য মতে এবছর ৬০ লক্ষ টাকা বিশেষ বরাদ্দসহ গবেষণায় মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৫ কোটি টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা-০২ এর পরিচালক আখতার হোসেন জানান, মূলত একক প্রকল্প ও যৌথ প্রকল্প এই দুইভাবে গবেষণায় বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় দেওয়া হয়। এর মধ্যে একক প্রকল্পে দুই লক্ষ টাকা এবং যৌথ প্রকল্পে ৪ লক্ষ টাকা।

অর্থাৎ প্রকল্প প্রতি ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাবেন একজন গবেষক। এই হিসাবে ৫ কোটি টাকার বরাদ্দে মোট ২৫০ শিক্ষক গবেষণা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে মোট শিক্ষকের পরিমাণ ১২৬০ জন। অতএব এক হাজারেরও বেশি শিক্ষক গবেষণায় বরাদ্দ পাবেন না।

শিক্ষকরা বলছেন, গবেষণায় বরাদ্দ না পাওয়ায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে পারে অনেক বিশেষায়িত গবেষণা। গবেষণায় আগ্রহ কমায়ও ভূমিকা রাখছে এটি।

বরাদ্দ কম হওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আকতার বানু বলেন, প্রতিবারই শিক্ষক সংখ্যার তুলনায় অনেক কম বরাদ্দ আসে। এ কারণে অনেকের আগ্রহ থাকলেও গবেষণায় ভূমিকা রাখতে পারেন না। শিক্ষকদের গবেষণায় অনাগ্রহের একটি কারণ এটি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ত্রিশ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী, হাজারোধিক শিক্ষকের জন্য এই গবেষণা বরাদ্দ একাবারেই নগণ্য। অথচ জ্ঞান সৃষ্টি ও বিকাশের জন্য গবেষণার বিকল্প নেই। করোনাসৃষ্ট পরিস্থিতিতে আশংকা করা হয়েছিলো পশ্চিমা দেশগুলো গবেষণায় বরাদ্দ কমিয়ে দেবে।
তবে দেখা গেছে তারা এই পরিস্থিতিতেও গবেষণায় বরাদ্দ পূর্বের চেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছেন কারণ তারা বুঝতে পেরেছেন করোনার মতো এসব দুর্যোগ ঠেকাতে গবেষণালব্ধ জ্ঞানের বিকল্প নেই।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা-০২ সূত্র বলছে, বরাদ্দ হওয়া অর্থগুলো অনুষদ ভিত্তিক ভাগ করে দেয় একাডেমিক শাখা। অনুষদের শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অর্থগুলো বণ্টন করা হয়।
অনুষদগুলোতে খোজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থ বরাদ্দ কম হওয়ায় প্রকল্প জমা দেওয়া ও আবেদনে আগ্রহ দেখান না শিক্ষকরা।

শিক্ষকরাও বেশ কম আবেদন করেন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকরা প্রকল্পের জন্য আবেদন করলে যাচাই বাচাইয়ের মাধ্যমে উপযুক্ত প্রকল্পগুলোতেই বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বিদেশী প্রকল্পগুলোতে বড় ফান্ড বরাদ্দ থাকায় শিক্ষকরা ওগুলোতেই কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। দেশীয় গবেষণা প্রকল্পগুলোতে স্বল্প বাজেটের জন্য অনেক শিক্ষকই আগ্রহবোধ করেন বরাদ্দ কম হওয়ার এটিও কারণ হতে পারে বলে জানান তিনি। বরাদ্দ বৃদ্ধি না হওয়ার ব্যাপারে কিছুটা শিক্ষকদেরকেও দায়ী করেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবও।

জেষ্ঠ্য এই অধ্যাপক বলেন, প্রকল্পের বরাদ্দের জন্য অনেক শিক্ষক আবেদন করেন না। এর জন্য ত্রুতিপূর্ণ পদোন্নতির নীতিমালাকে দায়ী করেন তিনি। এছাড়া আমাদের বর্তমান নীতি অনুযায়ী খুব অল্প গবেষনা করেই পদোন্নতি এবং ইনক্রিমেন্ট সুবিধা লাভ করা যায়। এজন্য সত্যিকার অর্থে যারা গবেষণায় আগ্রহী তারা বাদে অন্য শিক্ষকরা গবেষণায় খুব একটা মনোযোগ দেন না।

গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৪৩২ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার টাকার বাজেট পাশ হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment