‘স্টল ফর ফাদার’ কুবিতে সহপাঠির বাবাকে বাচাঁতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ

এবিএস ফরহাদ, কুবি
সহপাঠির বাবা দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত। বাবাকে বাচাঁতে লাগবে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। যা সহপাঠির পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। সহপাঠির পাশে থাকতে এবং সহপাঠির বাবাকে বাচাঁতে এগিয়ে এসেছে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী নওশাদ আহমেদের উদ্যোগে ‘ডংড়ি, একটি শিল্পের হাট’ নামের একটি শিল্প প্রদর্শনী প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী উর্মি আচার্য্য বাবা নারায়ন আচার্য্যকে আর্থিক সহযোগিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী মিলে গড়ে তুলেছে ‘স্টল ফর ফাদার’ নামে ভিন্ন ধর্মী এ আয়োজন।
বিশ^বিদ্যালয়ের মূল ফটকের পাশে রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকে নারায়ন ঊর্মির বাবার চিকিৎসার তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে এ স্টল শুরু হয়ে বুধবার (৩০ অক্টোবর) শেষ হয়। স্টলে ছিল নিজ হাতে কাজ করা নানান জিনিসপত্র। হাতে তৈরি বিভিন্ন শিল্পীর প্রদর্শনী, টি-শার্ট, মেয়েদের কানের দুল, চুড়ি, পায়েল, গলার মালা, ব্রেসলেট, গাছের ছালের তৈরী সাপ, গাছের তৈরী বিভিন্ন শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন বিভিন্ন ব্যাচের একদল শিক্ষার্থী।
ভিন্ন ধর্মী এ আয়োজনের মূল সমন্ময়ক নওশাদ বলেন, ‘আমার এই ডংড়ি শিল্প প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছি প্রথমে আমার শখের জিনিসপত্র বানাতে। শখের কাজ করতে শুরু করি। এখানে আমরা ৭-৮ জনের একটা টিম রয়েছি যারা বিভিন্ন কাঠের জিনিসপত্র তৈরী করে বিক্রি করি। আমরা এখান থেকে নিজেদের কে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারব বলে আশা করি।’
‘স্টল ফর ফাদার’ সম্পর্কে তিনি জানান, ‘মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে তেমন সাড়া পায় না অনেকসময় বিষয়টা খারাপ লাগে আমাদের। তাই আমরা এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের এ শিল্প মেলায় যে লভ্যাংশ থাকবে তার সম্পর্নটা যাবে উর্মি আচার্য্যের বাবার চিকিৎসা খাতে। এর আগেও ক্যান্সার রোগী নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুকের জন্য এমন একটি স্টলের আয়োজন করি। যার মধ্যে দিয়ে আমরা একটি অঙ্কের অর্থ সাহায্য করতে পারি। এবারও আমার সহপাঠির বাবার জন্য একই রকম আয়োজন করেছি। মূলত বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের কেউ দুরারোগ্য আক্রান্ত আর্থিকভাবে তাদের পাশে দাড়াঁতে আমরা এই ভিন্নধর্মী মেলার আয়োজন করি।’
ভিন্নধর্মী এ শিল্প মেলায় গিয়ে দেখা যায় সকাল থেকে সারাদিন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গন। তারা প্রয়োজনের বাইওের ঊর্মির বাবার পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনছে। এছাড়া আবার অনেকে কোন পণ্য না নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
কথা হয় ফারহানা, চৈতিসহ মেলায় আসা কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে তারা এ ভিন্নধর্মী আয়োজনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘একজন সহপাঠির বাবার চিকিৎসার জন্য এমন একটি উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসীয়। মানুষের জন্য মানুষ এগিয়ে আসবে স্বাভাবিক ভাবেই। বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের একজনের বাবাকে বাচাঁতে এমন উদ্যোগের ফলে আমরা সহজে সাহায্য করতে পারছি। পাশাপাশি আমাদের পছন্দের জিনিস কিনতে পারছি আবার সাহায্যও করতে পারছি। যা অন্যান্যদের জন্য একটা আইডল হতে পারে।’
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত নারায়ন আচার্য্যকে চূড়ান্ত চিকিৎসা হিসেবে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের কথা জানান চিকিৎসকরা। বাংলাদেশে ট্রান্সপ্লান্টে ঝুঁকি থাকলেও ব্যায়বহুল হওয়ায় ভারতে নিতে পারেনি তার পরিবার। এ কারণে ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা সবকিছু চূড়ান্ত করে জানান, অক্টোবরের শেষের দিকে যেকোন দিন এই ট্রান্সপ্লান্ট করানো হবে। অন্যদিকে বাবাকে লিভারের অংশ দিবেন তার মেয়ে উর্মি আচার্য্য।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment