ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক: মানুষ মানুষের জন্য ঠিক এমনি ভাবে নিজ সহপাঠী দের পাশে অন্য সহপাঠী অথবা সিনিয়র ভাই হিসাবে জুনিয়রদের পাশে দাঁড়ানো এটাই সময়। আর সেই সময় যখন করোনাভাইরাস সংকট কালে যখন গোটা দেশ অঘোষিত লকডাউনে, তখন বিপদগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ৩৫ দিনে ৩২০ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৬৩০ টাকা পৌঁছে দিয়েছেন তারা।
এই মহান মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন
‘করোনা মোকাবেলায় জবিয়ানের পাশে জবিয়ান’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে এই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়।
গ্রুপটিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। তারা জানান, গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের প্রাণ হচ্ছেন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ছুটিতে যখন সবাই ঘরবন্দি, তখন তারা নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেন। সবাই শিক্ষার্থী হওয়ায় কারও পক্ষে এককভাবে বড় অংকের অর্থ প্রদান সম্ভব ছিল না। পরবর্তীতে ফেসবুক গ্রুপ খুলে তারপর নিজেদের টাইমলাইনে এবং গ্রুপে উন্মুক্ত পোস্ট করা হয়, যারা সমস্যায় আছেন তাদের সমস্যা জানিয়ে ইনবক্সে লিখতে বলা হয়। এভাবে সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীর তথ্য জেনে তার পরিচয় গোপন রেখে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে ফেসবুক পোস্ট করা হয়। এর ভিত্তিতে কাঙ্ক্ষিত আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেলে পোস্ট ক্লোজ করে দেওয়া হয়।
স্বেচ্ছাসেবকরা আরও জানান, তারা ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সকল পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে কাজ করেছেন শুধু শিক্ষার্থী পরিচয়ে। শুধুমাত্র বিপদগ্রস্তদের পরিচয়ই গোপন রাখা হয়নি, সাহায্য বা সহযোগিতা এ ধরনের শব্দ বলতেও নারাজ তারা। এই কার্যক্রমকে তারা ‘উপহার’ বলছেন। তাদের মতে এটা কোনও দান বা সাহায্য নয়, জবিয়ানদের জন্য জবিয়ানদের উপহার। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
এছাড়া জবির সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন, বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারে রয়েছেন, তাদের উদ্যোগেও সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে খাদ্য সংকটে থাকা জবি শিক্ষার্থীরা সমস্যার কথা জানিয়ে ইনবক্সে মেসেজ করলে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করে পাঠানো হয় প্রশাসনের ওই কর্মকর্তাদের কাছে। তারপর পৌঁছে যায় প্রয়োজনীয় সহায়তা।
শেষে স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা বলেন , ‘দেশে যখন করোনার মতো দুর্যোগ চলছে, তখন আমরা শুধুমাত্র আমাদের দায়িত্বটুকু পালন করতে চেয়েছি যেন জগন্নাথের কোনও শিক্ষার্থী এই দুর্যোগে তাকে একা না ভাবে। আমরা সবাই যদি এগিয়ে আসি, একটু একটু করে শ্রম দিই, শুধুমাত্র সরকার বা প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজ দায়িত্বটুকুও পালন করি, কেবল তখনই করোনা মোকাবেলা সম্ভব হবে।