আবু জাফর আহমেদ মুকুল
সাম্প্রতিককালে ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জানা গেছে, ৩৮ তম বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডার ২৫ জনের মধ্যে ৭ জন ডাক্তার, ৮ জন ইঞ্জিনিয়ার ও ২ জন কৃষিবিদ।
৩৮ তম বিসিএস এর ফলাফল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মেডিক্যাল থেকে প্রায় ১০০ জন অন্য ক্যাডারে আর ইঞ্জিনিয়ার থেকে যথাক্রমে বুয়েট ৮২জন (প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র ক্যাডার ), কুয়েট ৬৪ জন (প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র ক্যাডার ), রুয়েট ৫৯ জন (প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র ক্যাডার ) ও চুয়েট ৫৫ জন (প্রশাসন, পুলিশ)।
টেকনিক্যাল নিজ ক্যাডারের মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা না থাকায় পররাষ্ট্র,প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে যাবে তা স্বাভাবিক। তরুণ টেকনিক্যাল ক্যাডারের গ্রাজুয়েটরা বাস্তবিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পেশাগত ক্যাডারকে দীর্ঘ দিনের অবহেলার ফলে মেধাবীরা বিকল্প পথে হাঁটছে। অনেকেই টেকনিক্যাল ক্যাডারদের যেমন- ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও কৃষিবিদদের অন্য কাডারে নির্বাচিত হলে নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখেন।
এরপর বিশ্লেষণে আসি কেন টেকনিক্যাল ক্যাডারের গ্রাজুয়েটগন সাধারন ক্যাডারে যাচ্ছে?
ক্লাসের সেরা মেধাবীর প্রথম পছন্দ থাকে মেডিকেল কিংবা বুয়েট। অথচ চাকুরী জীবনে এসে দেখে মাথার ওপর ছড়ি ঘুরাচ্ছেন একই ব্যাচের ভিন্নকেউ। তখন মানতে কষ্ট হয় তৈরী হয় মনোবেদনা আর সিস্টেম লস।
কয়েকদিন আগেও সাবেক একজন শিক্ষা সচিব বললেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরের শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কথাটা সত্যি তাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে একজন গ্রাজুয়েট বেশির ভাগ জিনিস শিখেন। করোনাকালে দেখলাম সিলেটের একজন স্বাস্থ্য কাডারের ডাক্তারের জন্য একটা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।
সিলেটের মতো বিভাগীয় শহরে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে যশোর থেকে একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। এ দৃশ্য দেখে নিশ্চয়ই তরুন ডাক্তার স্বাস্থ্য ক্যাডারের যেতে চাইবে না এটাই বাস্তব। সুতরাং বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে সকল ডাক্তার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও কৃষিবিদগন অন্য কাডারে গিয়েছেন তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক বলে আমি মনে করি।
সরকারি হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, প্রশাসন ক্যাডার চাকরির শুরুতে মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব, ডিসি অফিসের কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড হিসেবে যোগ দেন। ধারাবাহিক পদোন্নতিও সহজ। গাড়ি-বাড়ির সুবিধা, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে মাসিক ৫০ হাজার টাকা সুবিধা পান। তারা ব্যক্তিগত সহকারী ও আলাদা অফিসও পান। ইউএনও হলে সরকারি বাংলো ও গাড়ির সুবিধা পাওয়া যায়। পদোন্নতি পেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিবও হতে পারেন। স্কলারশিপে বিদেশে পড়ার সুযোগ, প্রেষণে আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজের সুযোগ থাকে প্রশাসনিক ক্যাডারদের।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য ক্যাডারদের চাকরি শুরু করতে হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। গাড়ির সুবিধা নেই, সরকারি কোয়ার্টারে ভাড়ায় থাকতে হয়। ব্যক্তিগত সহকারী, নিরাপত্তা ও আলাদা অফিস নেই। পদোন্নতির জন্য পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি দরকার হয়, যা শেষ করতে লাগে ১৪-১৫ বছর। জটিল পদোন্নতি প্রক্রিয়া, সহযোগী অধ্যাপক হলেও গাড়ি সুবিধা পাওয়া যায় না। তাহলে বলেন কেন চিকিৎসক হবে তরুণরা। সুযোগ পেলে ৯০ শতাংশ এমবিবিএস ডিগ্রিধারী অন্য ক্যাডারে চলে যেত।
ছোটবেলায় বাবা-মার মুখে শুনতাম বড় হয়ে আমি ডাক্তার হব। স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাও চাইতেন শিক্ষার্থীরা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হোক। এসবের বাইরে যে পেশা হতে পারে তা আগে ভাবতামই না। মেডিকেল পড়াশোনার শেষপর্যায়ে এসে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে।’
কথাগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ডিএমসি) শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থীর।
তিনি এমবিবিএস কোর্সের শেষ পরীক্ষা দিচ্ছেন। পাশাপাশি প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিসিএসের পরীক্ষার। তবে স্বাস্থ্য ক্যাডারের বদলে হতে চান পররাষ্ট্র ক্যাডার। বললেন, পদোন্নতি, সুযোগ-সুবিধা ও সামাজিক মূল্যায়ন বিবেচনায় তার এ সিদ্ধান্ত। ডিএমসির শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গেও কথা হয়েছে আমার। তারা সবাই চিকিৎসক হওয়ার বদলে পুলিশ, প্রশাসন, পররাষ্ট্র ও কর এ চার ক্যাডারের যেকোনোটি হতে চান। তারাও তুলে ধরেছেন দেশের চিকিৎসা পেশার নানান হতাশার কথা।
বর্তমানে দেশের ৩৬টি মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা চার হাজারের কিছু কম। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৫২ হাজার মেডিকেল শিক্ষার্থী রয়েছেন। প্রতি বছর শুধু সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকেই তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছেন।
এরপরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের হিসাব বলছে, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ২০ শতাংশের বেশি চিকিৎসক পদ খালি রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে দেশের জেলা ও উপজেলায় ৬০ শতাংশের বেশি চিকিৎসক পদ খালি। চিকিৎসকের অভাবে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের হিসাবে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এক লাখের বেশি চিকিৎসক নিবন্ধন নিয়েছেন।
তবে বর্তমানে যারা সরাসরি চিকিৎসা পেশায় যুক্ত এমন চিকিৎসকের সংখ্যা (সরকারি ও বেসরকারি) ৬০-৭০ হাজার। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২৫-৩০ হাজার। কিন্তু দেশের জনসংখ্যা ও রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় কমপক্ষে দুই লাখ চিকিৎসক প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আমাদের দেশে বিষয়ভিত্তিক পড়াশুনার কোন দাম নেই। পররাষ্ট্র ক্যাডার গুরুত্ব দেয়া উচিত আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের গ্রাজুয়েটদের, প্রশাসন ক্যাডারের ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট ও লোকপ্রশাসন গ্রাজুয়েটদের আর বাস্তবিকক্ষেত্রে পুলিশ ক্যাডারের ক্ষেত্রে ক্রিমিনালোজি অথবা পুলিশ সায়েন্স বিভাগের গ্রাজুয়েটদের। কিন্তু এগুলো নিয়ে যাদের চিন্তা করার কথা সরকারি কর্ম কমিশন বা মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির তাদের মাথা ব্যথা নেই বললেই চলে।
পদোন্নতি প্রাপ্তির বৈষম্য ও পেশাগত হতাশা: চিকিৎসা পেশায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের পর পদোন্নতির জন্য আর বিবেচিত হন না। যার কারণে স্বাস্থ্য সচিবের মতো পদগুলো চলে যায় প্রশাসনের ব্যক্তিদের দখলে। এর ফলে তৈরি হয় পেশাগত হতাশা। কিছুদিন আগে ৩৩তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হলো বেশ কিছুক্ষণ।
আলোচনার এক পর্যায়ে, অনেকেটা আপেক্ষ নিয়েই বললেন, ২০১৮ সালের আগস্টের সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় পাস করেও এখনো তার পদোন্নতি হয়নি, পড়ে রয়েছেন নবম গ্রেডে। অথচ তার একই ব্যাচের (৩৩তম বিসিএস) অন্য ক্যাডারে যোগদান করা সহকর্মীরা অনেকেই এরই মধ্যে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়েছেন।
স্বাস্থ্যক্যাডারে ক্লিনিক্যাল বিষয়ে পদোন্নতির জন্য পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে হয় । উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, কেউ যদি কনসালট্যান্ট, সহযোগী অধ্যাপক হতে চান, তাকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করা লাগবেই। যেহেতু তার পোস্ট গ্রাজুয়েশন নেই, পদোন্নতিও থেমে আছে। পাশাপাশি, প্রশাসনিক পদে যেতে হলে সময়টা নির্ধারিত না, একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম। কিন্তু তাদের পদোন্নতি সময়মত হবে না, বিষয়টা অনেকটা অলিখিতভাবে একপ্রকার নির্ধারিত।
ডাক্তারি পড়াশুনা সম্পর্কে যাদের একটুকুও ধারণা আছে, তারা অন্তত অবগত আছেন, ডাক্তারদের পোস্ট গ্রাজুয়েশন করা অন্যান্যদের মতো এতো সহজ না। সুযোগ খুব সীমিত, প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। পাশাপাশি উচ্চ পর্যায়ে পদের সংকটতো আছেই। কিন্তু ক্যাডার সার্ভিসের অন্য আর কোনো ক্যাডারের ক্ষেত্রে এমন অদ্ভুত নিয়ম নেই। অন্য ক্যাডারে পদোন্নতির জন্য পোস্ট গ্রাজুয়েশন আবশ্যিক না। একসঙ্গে একই বিসিএসে ক্যাডার হয়ে অন্যরা বেতন পাচ্ছে ষষ্ঠ গ্রেডে আর স্বাস্থ্য ক্যাডার হওয়ার কারণে তিনি পাচ্ছেন নবম গ্রেডে। বৈষম্য কতটা প্রকট ভাবা যায়!
আমরা জানি পদোন্নতির সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ সুবিধার সম্পর্ক রয়েছে। তাই সরকারি ডাক্তাররা প্রতিনিয়ত নানাবিধ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেখা যাবে, আক্ষেপ করা চিকিৎসক যতদিনে পদোন্নতি পেয়ে ষষ্ঠ গ্রেডে যাবেন, ততদিনে তার অন্য ক্যাডারের ব্যাচমেটদের স্যালারি স্কেল চতুর্থ বা তৃতীয় গ্রেড হয়ে যাবে। একই ব্যাচে যোগদান করা সহকর্মীরাই হয়ে যাবে স্যার। হয়ত, তাদের টেবিলে ফাইল সাইন করা জন্য সেই ডাক্তারকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হবে । বিষয়টা বেশ কষ্টকর হলেও বাস্তব।
ডাক্তারদের দুই বছর গ্রামে থাকা বাধ্যতামূলক কিন্তু দুই বছর পরেই যে তিনি শহরে বা একটু অপেক্ষাকৃত ভালো জায়গায় পোস্টিং পাবেন সেই ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা নেই।
কৃষি, স্বাস্থ্য বা শিক্ষা সচিব কেন সংশ্লিষ্ট ক্যাডার থেকে নয়?
সময় এসেছে চিন্তা করার, কেন কৃষি, ডাক্তার, বা শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকগন তাদের পেশার শীর্ষতম প্রশাসনিক পদগুলোয় নিযুক্ত হবেন না? একজন আমলার পক্ষে সব বিষয়ে খুঁটিনাটি জানা অসম্ভব, আর চিকিৎসা, কৃষি, বা শিক্ষার মতো চরম বিশেষায়িত পেশায় তো তা বলাই বাহুল্য।
সুতরাং কৃষি, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য সচিব যদি সংশ্লিষ্ট ক্যাডার থেকে হন, যার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাও আছে, তাহলেই সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সরকারের শিক্ষাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ড. কবীর চৌধুরীকে। কিছু আমলা সেই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি।
তারা মাস্টার মশাইকে ফেল করাতে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। দশজন আমলা গিয়ে ছলে বলে ড. কবীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কাছে নালিশ জানাতে শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁকে সরিয়ে নিয়মিত আমলাকেই শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারি কর্তৃপক্ষের কী করণীয়-
১. বর্তমানে সরকারি কর্ম কমিশনের যে সিলেবাসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় সেটা উচ্চ মাধ্যমিক পাসকৃত শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহন করতে পারে। সুতরাং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বিসিএস পরীক্ষায় সাধারন ক্যাডারের সুযোগ প্রদান করা।
পরবর্তীতে সামরিক বাহিনীর মতো চাকুরির পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষার জন্য পড়াশুনার সুযোগ প্রদান করা। অযথা ম্নাতক পাশ করে সরকারি কর্ম কমিশনের সিলেবাস দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কোন অর্থ আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ে বা মেডিকেলে ভর্তি হবে তারা যারা গবেষনা বা তাদের বিষয়ভিত্তিক সেক্টরে অবদান রাখতে পারবে। তাই বিসিএস টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল ক্যাডারে গবেষনা সেক্টরে নিয়োগের জন্য অধিদপ্তরের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক পাশ করা গ্রাজুয়েট সরাসরি ভাইভার মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে। যেটা ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশে প্রচলিত রয়েছে।
৩. টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল ক্যাডারদের অন্য সকল ক্যাডারদের মতো রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা, ব্যাচ অনুযায়ী পদোন্নতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করা।
৪. কৃষি, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য সচিব সংশ্লিষ্ট ক্যাডার সার্ভিস থেকে নিয়োগ প্রদান করা।
৫. বর্তমানের মতো স্নাতক পাশ দিয়ে যদি বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া হয় তাহলে টেকনিক্যাল ক্যাডারের মতো যাতে সাধারন ক্যাডারের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্ন্তভুক্ত করা। বিষয়ভিত্তিক গ্রাজুয়েটদের সাধারন ক্যাডার সার্ভিসে অগ্রাধিকার দেওয়া। যেমনঃ পুলিশ ক্যাডারের ক্ষেত্রে ক্রিমিনালোজি অথবা পুলিশ সায়েন্স বিভাগের গ্রাজুয়েটদের অগ্রাধিকার দেওয়া ।
৬. আমার মনে হয়, আমাদের শিক্ষাক্রমে বিসিএস এর সিলেবাস শিক্ষাবর্ষ ভিত্তিক সংযোজন হতে পারে তাহলে হয়ত বিসিএস প্রার্থীরা অনেক সুবিধা পাবে আর একাডেমিক পড়ুয়াদেরও উপকার হয়।
৭. সরকারি কর্ম কমিশনকে মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বন্দি না করে সিদ্ধান্ত গ্রহনে স্বাধীনতা প্রদান করা।
৮. মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভায় সচেতন সমাজের প্রতিনিধির অংশগ্রহন নিশ্চিত করা।
৯. পেশাজীবিদের লেজুড়বৃত্তিমূলক রাজনীতি বন্ধ করা ও সুশাসন বাস্তবায়ন করা।
কৃষি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা শিক্ষা চার খাতকে ক্যাডার সার্ভিস থেকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্র কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা সময়ের দাবি। তাহলে পররাষ্ট্র- প্রশাসন-পুলিশ ক্যাডারের সাথে তুলনা করে কৃষিবিদ, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা চিকিৎসকেরা দ্বিধায় ভুগবেন না।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, বাসস্থান বা পেশাগত কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। প্রকৃতপক্ষে পররাষ্ট্র, প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডার ব্যতিত সুবিধা-সুবিধার বিচারে অন্য সকল ক্যাডারের সাথে বৈষম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তাই পররাষ্ট্র, প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডার ব্যতিত অন্য সকল ক্যাডার সুযোগ-সুবিধা সমান করা হোক আর নাহলে যে সকল ক্যাডার সুবিধা বঞ্চিত তাদেরকে বিলুপ্ত করা হোক।
লেখকঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশ্লেষক, ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ এবং গবেষণায় প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশীপ প্রাপ্ত।