বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বর এক মহা আতঙ্কের নাম, যা ভয়াবহ গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেশি। তবে, সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করলে খুব সহজেই এই জ্বর ভালো হয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসা নিতে দেরি করলে বিপদের আশঙ্কা থাকে।
ডেঙ্গু কীভাবে আপনার ক্ষতি করে
ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এর জীবাণুগুলো রক্তনালির কৈশিক জালিকায় অবস্থান নিতে শুরু করে। এতে কৈশিক জালিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আরও পাতলা হয়ে যায়। কিছু জীবাণু যকৃৎ ও অস্থিমজ্জায় আক্রমণ করে, যার ফলে নতুন রক্তকণিকা তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার আয়ু গড়ে ১০ দিন; নতুন অণুচক্রিকা তৈরি না হওয়ায় তাদের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে।
ফলস্বরূপ, ভাইরাস যকৃৎ আক্রমণ, অস্থিমজ্জা থেকে প্লাটিলেট তৈরি বন্ধ এবং কৈশিক জালিকাকে পাতলা করে দেয়। এর ফলে রক্তের অণুচক্রিকা কমে গিয়ে কৈশিক জালিকা দিয়ে প্লাজমার ক্ষরণ হতে পারে। এই প্লাজমা ক্ষরণের ফলে রোগীর রক্তচাপ কমে যায় এবং শক সিনড্রোমের আশঙ্কা দেখা দেয়, যা মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।
চিকিৎসার লক্ষ্য
প্লাটিলেট কণার মূল কাজ হচ্ছে রক্তক্ষরণ প্রতিহত করা। তাই চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হল দ্রুত জ্বর কমানো এবং যকৃৎ, অস্থিমজ্জা ও কৈশিক জালিকাকে সুরক্ষিত রাখা। সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডেঙ্গু জ্বরের খাদ্য ব্যবস্থাপন
ডেঙ্গু জ্বরের খাদ্য ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা, যাতে শরীর দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি করে ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে।
ডেঙ্গুতে তরল খাবারের ওপর বেশি জোর দিতে হবে, কারণ কৈশিক জালিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্ত থেকে প্লাজমা বের হয়ে যায়, যা রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। এর ঘাটতি পূরণ করতে দিনে তিন থেকে চার লিটার তরল বা তরল-জাতীয় খাবার খেতে হবে। রোগী যদি মুখে খাবার গ্রহণে অক্ষম হন, তবে স্যালাইন প্রয়োগ করতে হবে।
উপকারী খাবার
চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ: এতে ব্রোকলি, মটরশুঁটি, ক্যাপসিকাম, এবং বিট যোগ করা উচিত। এটি শরীরে তরল পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে।
টক দই: তরলের ভারসাম্য রক্ষা করার পাশাপাশি এটি পরিপাকতন্ত্রের ক্ষমতা বাড়ায় এবং পুষ্টির শোষণ ক্ষমতা উন্নত করে।
পেঁপের জুস: ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের ভালো উৎস, যা অণুচক্রিকা উৎপাদনে সহায়ক।
ভাতের মাড়: ভিটামিন বি-এর উৎস এবং তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
জাম্বুরার জুস: ভিটামিন সি ও পটাশিয়ামের ভালো উৎস, যা প্লাজমার ঘাটতি পূরণ করে।
আনারের জুস: আয়রন, ভিটামিন বি, এবং ফসফরাসের ভালো উৎস, যা অস্থিমজ্জার কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
নরমাল স্যালাইন: ইলেকট্রোলাইটসের ঘাটতি পূরণ করে এবং তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
কচি ডাবের পানি: সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও অন্যান্য ইলেকট্রোলাইটসের ভালো উৎস, যা ইলেকট্রোলাইটসের ঘাটতি পূরণ করে।
কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে অতিরিক্ত মসলাদার এবং ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এসব খাবার হজমের জন্য অতিরিক্ত পানি প্রয়োজন হয়, যা শরীরে পানির ঘাটতি বাড়িয়ে রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। তাই এসব খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত।