সানজিদ আরা বিথী
ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্লাবের ছড়াছড়ি ।শিক্ষার্থীদের বাস্তব হাতে কলমে দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন ক্লাব কাজ করে থাকে।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিজেদের কর্মঠ করার জন্য, ক্লাবের কার্যক্রমে সহযোগিতার মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
একেক ক্লাবের কার্যক্রম একেক রকম।এত ক্লাবের মাঝেও একটি বিশেষ ক্লাব আছে যেটা বিশেষ মানুষদের জন্য কাজ করে থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০০০।কি মনে হয় এই ৪০০০০ শিক্ষার্থী কি সবাই শারীরিক ভাবে সক্ষম!
না, এই ৪০০০০ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও নেহাত কম নয়!
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ মানুষদের জন্য ১২ বছর আগে গড়ে তোলা হয়েছিল একটি বিশেষ ক্লাব যার নাম ‘ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ)।’
আজ পিডিএফের(ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন)সফলতার ১২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রথমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হলেও ধীরে ধীরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এর কার্যক্রম বিস্তৃতি করা হয়।
করোনার লকডাউনে আমরা অবসর সময় পার করছি।তেমনি এই লকডাউনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যেন বিশেষ না মনে হয়,তারাও যেন সুন্দর সময় পার করতে পারে সেজন্য পিডিএফ আয়োজন করেছিল ‘বুক রেকর্ডিং চ্যালেঞ্জ ‘।পিডিএফ এর সদস্যগন এই করোনার লকডাউনে পিডিএফের বিশেষ সদস্যদের সময়টাকে একটু বিশেষ করতে বিভিন্ন বই রেকর্ডিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করছিল যেখানে ১৩২ টি বই রেকর্ড করা হয় যাতে আমাদের মত ঐ বিশেষ মানুষগুলো ও বইয়ের রেকর্ডিং শুনার মাঝেই স্বপ্নের সন্ধান পায়।
শুধু তাই নয়,করোনার লকডাউনে ১০০ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পরিবারে বিতরন করা হয়েছে ১ মাসের খাবার।৫ টি টিমের মাধ্যমে (ভয়েস ব্যাংক,রাইটার ব্যাংক,ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিকেশন, ডিসেবল ফ্রেন্ডলি ক্যাম্পাস ক্যাম্পেইন)সকল কার্যক্রম করে থাকে পিডিএফ।
প্রতিবছর এই ক্লাব আয়োজন করে থাকে পিকনিক যাতে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা বিশেষ মানুষগুলো ও আমাদের মত রোলার কোস্টারে উঠে জীবনের ঘ্রান পায়।
যখন পিডিএফের অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও নিজেদের সুরের ভুবনে ভেসে যায়,ধুম তা না না নৃত্যের মাধ্যমে হাসির বন্যায় ডুবে যায় তখন তারাও ভাবে ‘আমি ও একজন’।
পিডিএফের নিত্য কাজগুলো হল বিশেষ মানুষদের জন্য পরীক্ষা দেয়ার জন্য শ্রুতিলেখক জোগাড় করা , অ্যাসাইনমেন্ট করে দেয়া সর্বোপরি তাদেরকেও এই অনুভূতি দেয়া ‘আমি ও সবার মাঝে একজন’।
রঙিন এই দুনিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই বিশেষ মানুষদের যেমন সবথেকে প্রিয় জায়গা পিডিএফ যেখানে তাদের মূল্যায়ন করা হয় তেমনি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করা ব্যক্তিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পিডিএফ পেয়েছে এক অনন্য মাত্রা।
এক যুগের এই পথচলায় পিডিএফ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তরুণদের মাঝে পারসন্স উইথ ডিজেবিলিটি সম্পর্কে ধারণার আমূল পরিবর্তন সাধনে সচেষ্ট হয়েছে। বিশেষভাবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের গুণগত এবং প্রবেশগম্য শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবেশ এবং সহমর্মিতা চর্চার বিনির্মাণে পিডিএফ সফলতার সাথে তার সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। বারো বছরের এই কিশোর সংগঠনটি আরো বড় স্বপ্ন দেখার দুঃসাহস রাখে। এই ক্লাবটি স্বপ্ন দেখে আগামীতে আরো বৃহৎ পরিসরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখতে।একীভূত সমাজ প্রতিষ্ঠার এ পথ বারো বছরের নয় আরো দীর্ঘ যাত্রার।
সফলতার এক যুগে দ্যা ক্যাম্পাস টুডেকে ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (পিডিএফ) সভাপতি আবুল রায়হান বলেন,’প্রতিবন্ধী সহায়ক সমাজ গঠনের লক্ষ্য নিয়েই পিডিএফের যাত্রা শুরু এবং এর ধারাবাহিকতায় আজ ১ যুগ পূরণ হলো। এই দীর্ঘ ১২ বছরের পদার্পণে পিডিএফ একীভূত সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল সক্রিয় সেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে আমরা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়ক বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি।’
তিনি আরো বলেন,’এছাড়া এই কভিড- ১৯ মহামরিতে আমরা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ১০০ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ার আনন্দ ছড়িয়ে দিতে পিডিএফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট কর্তৃক “বুক রেকর্ডিং চ্যালেন্জ ২০২০” আয়োজন করি। আমরা মনে করি সক্ষমতা আমাদের অন্তরে, এবং এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
পিডিএফের এই এক যুগের পদার্পণের হাত ধরে সাম্যভিত্তিক সমাজ গঠনের পথচলা অব্যাহত থাকুক।’