ঢাবি তোমার বয়স হয়েছে কিন্তু তুমি নুইয়ে পরনি

সানজিদ আরা সরকার বিথী


আজ ১লা জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শততম বর্ষে পদার্পণ করল। খাঁ খাঁ করছে। অনাড়ম্বরেই পালিত হচ্ছে দিনটি।

করোনা ভাইরাসের থাবায় প্রিয় ক্যাম্পাসের জন্মদিনেও ক্যাম্পাসে না যেতে পারার গ্লানি, ক্যাম্পাস নিয়ে মনের একান্ত ভাবনা দ্যা ক্যাম্পাস টুডেকে জানিয়েছেন ঢাবিয়ানরা।

মোঃ সিয়াম, ঢাবি ৩য় বর্ষের ছাত্র দ্য ক্যাম্পাস টুডেকে জানিয়েছেন তার প্রাপ্তি -প্রদানের হিসাব: “তখন এসএসসি পরিক্ষার রেজাল্ট দেয়ার কিছুদিন বাকি। দোকানে বসে পত্রিকা পড়ছিলাম।

শেষ পাতায় দেখি হেডালাইন “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪ বছর পূর্তি”। হিসাব করলাম ১০০ বছর কবে হবে। ২০২১ সালে। সে হিসাবে আমি তখন থাকবো স্নাতক ৪র্থ বর্ষে। সেই থেকে মনে গেঁথে গেলো ঢাবির স্বপ্ন।

তারপর আর বাকি ১০ টা ছেলেমেয়ের মতো কঠোর পরিশ্রম করে স্বপ্নের স্থানে আসতে পারি। এই ক্যাম্পাস আমাকে অনেক বন্ধু দিয়েছে,দিয়েছে প্রিয় মানুষ যার জন্য চিরঋনী আমি এই ক্যাম্পাসের কাছে। হলের একটু আধটু রাজনীতি, ক্যাম্পাসে সবখানে ঘোরাফেরা, ক্লাস শেষে কারো দৌঁড়ে গিয়ে বাসে ওঠা, কিংবা আমার মতো সন্ধায় দূরে কোথাও কারো টিউশন সব মিলিয়ে সবার ক্যাম্পাস লাইফ টা অনেক বেশি বৈসাদৃশ্য পূর্ণ।

শতবর্ষে পদার্পণে অপ্রাপ্তির চেয়ে প্রাপ্তির পাল্লা টা অনেক বেশি ভারী। আজ হয়তো পৃথিবী সুস্থ থাকলে একটা অন্যরকম উদযাপন দেখতাম সবাই। এই না পাওয়া আশাটা একটা আফসোসের রেখা টেনে মনকে একটু খানি কালিমা দিয়ে যাবে। হয়তো একদিন আবার সব আগের মতো হবে। তখন অস্তিত্বের বাতাসে না হয় এক টুকরো সুখ খুঁজে নেব সবাই মিলে।”

লাবন্য লাবনী, তৃতীয় বর্ষ, দ্য ক্যাম্পাস টুডেকে ব্যক্ত করেছেন ক্যাম্পাসের কাছে তার প্রত্যাশা: “পৃথিবীটা আজ বড়ই অসুস্থ।আমার ঢাবি ক্যাম্পাস হয়তো আজ ঝলমলে করত আলোতে, খুশিতে গদগদ করত। মৃত্যুপুরীতে পরিনত হওয়া ক্যাম্পাসের জন্য খুবই কষ্ট হচ্ছে।

আবার আমি ফজিলাতুন্নেছা হলের সাদা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে চাই, ৩০ টাকার খিচুড়িতেই সন্তুষ্ট হতে চাই ।শুধু পৃথিবী তুমি সুস্থ হয়ে যাও। ঢাবি, তোমার বয়স হয়েছে কিন্তু তুমি নুইয়ে পরনি।

তোমার বুকে যেসব নোংরা রাজনীতি হয় সেসবের নিরসন চাই, যুুুুগে যুগে যেন নিজের দাপট নিয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে পার।”

রোকসানা মাওয়া, দ্বিতীয় বর্ষ, দ্য ক্যাম্পাস টুডেকে জানিয়েছেন তার একান্ত কথা: “শুভ জন্মদিন প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এবছর নিয়ে নানা রকম জল্পনা কল্পনা থাকলেও সংকটাপন্ন এই সময়ে সব স্থবির হয়ে গিয়েছে।

আজ প্রিয় ক্যাম্পাস সাজতো জমকালো সাজে । পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে থাকতো উৎসব মুখোর পরিবেশ আর প্রাণোচ্ছ্বল এক নতুন রূপ । বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সকলেই নিজ অবস্থানে থেকে প্রাণের বিদ্যাপীঠ এর আরো নতুন আরো কল্যাণময় অগ্রগতি কামনা করছে ।

এই ১০০ বছরের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের যাত্রা সুদীর্ঘ ও উজ্জ্বল হোক। পরবর্তী শতাব্দী বয়ে আনুক কল্যাণ এবং সফলতার বাণী । সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে প্রতি শতাব্দীতে দৃঢ় প্রত্যয়ে নতুন নতুন প্রত্যাশার ধারক ও বাহক হয়ে অটুট অবিনশ্বর হয়ে থাকুক সর্বত্র ।”

রিফাত তাসনিন আভা, তৃতীয় বর্ষ জানিয়েছেন দ্য ক্যাম্পাস টুডেকে তার ভাবনা: “দেশের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এ অবদান রাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ ৯৯ তম জন্মদিন। প্রায় ৩ বছর কাটিয়েছি এই ক্যাম্পাসে, পালটে গেছে অনেক কিছু…।

অনেক স্মৃতি মিশে আছে এই প্রিয় ক্যাম্পাস নিয়ে। টিএসসি তে আড্ডা,শ্যাডোর লুচি ডাল, কার্জনের মাঠ, ভিসি চত্তরের নানা স্মৃতি ঘিরে আছে এই ক্যাম্পাসে। করোনার এই কঠিন সময়ে এবার গতবারের মতো বর্ণিল সাজ সাজেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন উপলক্ষে আমার একটাই প্রত্যাশা সকল দুর্নীতি বন্ধ হোক, ক্ষমতার জোরে যেন কারো জায়গা না হয় এই ক্যাম্পাসে; গণরুমের রাজনীতি বন্ধ হোক; একজন শিক্ষার্থী, একটি সিট এই স্লোগান যেন বাস্তবায়ন করা হয়।ভালো থাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *