তরুণদের বেকারত্ব সমস্যা

মাজেদুল ইসলাম


বাংলাদেশের বয়সসীমায় ১৬ -২৪ বয়সী উঠতি ছেলেমেয়েদের তরুণ বলে। তরুণরা-ই একটি দেশ তথা জাতির ভাগ্য নির্ধারক বলা যেতে পারে। কেননা, আজকের তরুণরাই আগামীর দেশকে পরিচালনা করবে।

তাই তরুণদের শিক্ষিত,দক্ষ ও সুনাগরিক হওয়া বাঞ্চনীয়। তরুণদের কিছু গুণ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১.কর্মমুখী শিক্ষা ২.সততা ৩.মনোযোগী হওয়া ৪.সময়ানুবর্তী হওয়া ৫.দায়িত্বশীল হওয়া ৬.প্রত্যেক পেশাকে সম্মান করা ইত্যাদি।

বেকারত্ব: বেকারত্ব শব্দের অর্থ কাজের অভাব বা কাজ না পাওয়া।বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শিক্ষিত বেকারত্ব। বাংলাদেশে কিন্তু এইচ এস সি পাশ করা বা তার নিচের লেভেলেই পড়াশোনা বাদ দেওয়া ছেলেমেয়েরা বেকার নেই।তারা সবাই তাদের সাধ্যানুযায়ী কাজ করে। তাদের আশা ছোট তাই যেকোন পেশাতে ঢুকে যায়।

সমস্যা হলো শিক্ষিত বেকারদের নিয়ে, যাদের গ্রাজুয়েশন শেষ। তাদের প্রত্যেকের ইচ্ছা থাকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন চাকরি পেয়ে যাবো। শতকরা ৯৫ ভাগ গ্রাজুয়েটরাই এটাই ভাবে।

এরা সবাই সরকারী চাকুরীর দিকে ঝুকে দিনরাত একাকার করে চাকুরির বই পড়াশোনা করে কিন্তু চাকরী পাওয়ার জায়গা তো দিন দিন ক্ষীণ হয়ে পড়তেছে। এ দীর্ঘ ২৪ বছরের পরিক্রমায় তারা কিন্তু অন্যান্য কাজ খুবই কম করে।এই পাহাড় সমান প্রার্থীকে কই জায়গা দিবে?

তাই সৃষ্টি হচ্ছে বেকারত্ব। অনেকেই হতাশ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়! চিন্তা করেন, বিসিএসে মাত্র ২০০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ৪ লাখ পরীক্ষার্থী। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়ভিত্তিক চাকুরীর জায়গাও সীমিত।

সমস্যা যেটা দাড়াচ্ছে,আমাদের সরকারী চাকুরীর দিকে ঝুকে ঝুকে অনেকেই যখন ব্যর্থ হয়, সর্বাধিক সংখ্যক অলস বা কর্মবিমুখ হয়ে পড়ে। জীবনের প্রতি অনীহা চলে আসে। মোটা দাগে বেকারত্বের কারণ যা দেখি আমরা-

১.কর্মমুখী শিক্ষার অভাব।
২.উদ্যোক্তা হওয়াকে সাধুবাদ না জানানো।
৩.ছোটবেলা থেকে সন্তানের মাথায় চাকুরীর ভুত ঢুকানো।
৪.কাজগুলোকে মুষ্টিমেয় ব্যক্তির কাছে সোপর্দ করা।যেমন-কৃষিকাজ মূর্খ চাষাদের,ড্রাইভিং -পথে বড় হওয়া ছেলেদের,নাপিত -মুচি হলো ছোট্ট জাতের মানুষের পেশা!

তাহলে,এসব শিক্ষিত মানুষের পেশা কি শুধু-বড় বড় প্রতিষ্ঠানে চাকুরী পাওয়া?

এখন চলুন, প্রতিকারের উপায় খুজি-

১.সকল কাজকে সম্মান জানানো
২.কর্মমুখী শিক্ষার দিকে ধাবিত করে উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়কে প্রণোদিত করা।

৩.কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, মেকানিক্স ইত্যাদি বিষয়ে তরুণদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, মেয়েদের সেলাই মেশিন শেখানো উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে অনেকটাই সহায়ক।

৪.তরুণদের সহজে ঋণদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন।
৫.ফ্রী সময়ে অযথা সময় না কাটিয়ে বা দুশ্চিন্তা না করে শুধুমাত্র টিউশনির দিকে না ঝুকে অন্যান্য কাজ (রেস্ট্রুরেন্টে চাকরী,ফটোগ্রাফি, ভিডিও এডিটিং,আউটসোর্সিং, ই-মার্কেটিং, ই-লার্নিং, সাংবাদিকতা, উপস্থাপনা করা ইত্যাদি) করে ইনকামের পথ তৈরী করা।

সুতরাং শুধুমাত্র চাকরির দিকে না ঝুকে বিভিন্ন উদ্যোক্তাতামূলক কর্মকাণ্ড বর্তমান জনপ্রিয় -উবার, পাঠাও, ফুডপান্ডা, দারাজ, হ্যালোটাস্ক, অনলাইন মার্কেটিং ইত্যাদির মতো তৈরী করতে পারলে তরুণদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়া অনেকটাই সম্ভব বলে আশাবাদী।


লেখক: মাজেদুল ইসলাম (মাজেদ)
কৃষি অনুষদ [৭৭ ব্যাচ]
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment