তারুণ্যের চোখে স্বাধীনতা
মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল বিশাল। বাঙালিরা চেয়েছিল এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, যা প্রতিষ্ঠিত হবে কিছু আদর্শের ওপর ভিত্তি করে। এই স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে!
শাসকগোষ্ঠীর বেপরোয়া ধ্বংসযজ্ঞ, বাঙালির গর্জে উঠা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি এই প্রজন্ম। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ঘিরে তারুণ্যেরা কী ভাবছে? দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের অভিমত তুলে ধরেছেন সুপর্ণা রহমান টুছি।
তিতুমীর কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মামুন সোহাগ বলেন, দেশ, মা ও মাতৃভূমি ভালোবাসার শব্দমালা। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি দেশ এগোচ্ছে, দেশের মানুষ স্বপ্ন ছুঁতে পেরেছি। অর্থনৈতিক, শিক্ষাক্ষেত্রে, নারী নেতৃত্বসহ সব ধাপে দেশের অভূতপূর্ব সাফল্য। সামনের দিনগুলোতে দেশের উন্নতি আরো দ্বিগুণ গুণে তরান্বিত হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে পড়ুয়া ছাত্র মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এই স্বাধীন ভূখন্ডটি অনেক কিছু পেয়েছে আবার অনেক কিছুই হারিয়েছে। যে প্রত্যাশা নিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছে তার অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে এখনও ঘাটতি রয়েছে। তাই তো স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারিনি। আমরা সেদিনই স্বাধীনতার স্বাদ পাবো; যেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান প্রজন্মের তরুণেরা বাংলার ১৬ কোটি মানুষের মুখে হাঁসি ফোটাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র শাহ্ নেওয়াজ। তিনি বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান যে উন্নত হয়েছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো সেই উদ্দেশ্য এখনো অর্জিত হয়নি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি উদ্দেশ্য ছিলো শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলে দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও শোষণ ও ভেদাভেদ নামক কালো অধ্যায় আমাদেরকে ছাড়েনি। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো আধুনিক করতে হবে এবং মান সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আরো একধাপ এগিয়ে যাবে দেশ।
মাকসুদা আক্তার মিম অণুজীব বিজ্ঞান নিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি ছিলো রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা। স্বাধীনতা অর্জন হলেও প্রতিবন্ধকতা কাটেনি আমাদের। মৌলিক প্রয়োজন নিশ্চিত হয়নি সমাজের সর্বস্তরের নাগরিকের৷ বেকারত্ব আর হতাশার ভয়াল বেড়াজালের মুখোমুখি আমরা। বিলীন হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। একমাত্র তরুণ্য শক্তির জাগরণই পারে লাল-সবুজের দেশে স্বাধীনতার পূর্ণতা এনে দিতে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্র এম ডি নুরুল মোস্তফা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এই আনন্দের সময়ে এসে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে স্বগৌরবে পরিচিতি পেয়েছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের নানা বিষয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে। বৈষম্যমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, অন্যায়, অবিচার, শোষণ ও নিষ্পেষণমুক্ত সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক দেশই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাই তারুণ্য ও দেশের সকল মানুষের মেধাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে যেখানে থাকবে না কোন বৈষম্য, দারিদ্র্য, অন্যায়, অবিচার।