দিবানিশি

নাজমুল হুদা


রুমডেট! এই রুমডেট শব্দটা আমি জঘন্য আকারে ঘৃনা করি। তারচেয়ে ভয়ংকর ভাবে ভয় পাই সেই সব লোকদের যারা রুমডেট করার জন্য অফার দেয়।

কিন্তু ভাগ্যের খেলায় গভীর রাতে আমাকেই পেতে হয় এই রুমডেটের প্রস্তাব। যেটা শুনার পরে আমার কান থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার মত অবস্থা। চোখ বেয়ে অনর্গল পানি বেয়ে পরছে।
কিন্তু আমার এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া ছাড়া আর যে কোনো উপায় নাই। আমারই ভালোবাসার মানুষ আমাকে এই প্রস্তাব দেয়। যেটা ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো সাধ্য নাই আমার। আমি যে তাকে বড্ড ভালোবাসি। শুধু আমি ভালোবাসি তা নয়, সেও আমাকে ভালোবাসে।

রাত একটার দিকে আবিদ আমাকে ফোন দেয়…

–কি করছো নোলক!

–গল্পের বই পড়ছি।তুমি কি করো?

–এই তো মুভি দেখতেছিলাম।খেয়েছো রাতে?

–হুম,খাইছি। তবে আবারো ক্ষুধা লাগছে। তুমি আমাকে একটা আইসক্রিম কিনে দিয়ে যাওনা!

–এত রাতে আইসক্রিম? আর এই শীতের রাতে আইসক্রিম খাবে তোমার মাথা ঠিক আছে?

–আমার যে খেতে ইচ্ছে করছে!

–এতরাতে তো দোকান খোলা পাবো না।মার্কেট সব অফ হয়ে গেছে।

-তাহলে তুমি আসো, তবেই আমার ক্ষিধে মিটে যাবে।

–ইস কি শখ। আমাকে এতো দেখা লাগবে না।

-প্লিজ আসবে আর যাবে।

-আসতে পারি তবে একটা শর্ত আছে।

-কিসের আবার শর্ত? আমি কোনো শর্ত তর্ত মানি না তোমাকে আসতে বলছি তুমি আসো।

-আমি অনেক ক্লান্ত। কাল ইনশাআল্লাহ দেখা হবে।

-আচ্ছা তাহলে তুমি রেস্ট নাও। আর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরো।

আবিদ আর কথা না বাড়িয়ে ফোনটা কেটে দিলো।আসলে আবিদ বেশ কয়েকদিন ধরে অনেক ব্যাস্ত। এখন আবিদকে ঠিক মত পাওয়া যায় না।নিজের কাজ নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত থাকে।ওর বাড়ি আমার বাড়ি থেকে কয়েক কিলো দূরে।

ওর সাথে আমার লাস্ট মিট হয়েছে প্রায় এক মাসের মত।আই মিন নিজের ব্যবসার জন্য যখন ঢাকায় গিয়েছিল সেই ঢাকা যাওয়ার আগে দেখা হয়েছিল তার পরে আর দেখা হয়নি।তাইতো ভেবেছিলাম আবিদকে একটু দেখবো।আমি বারান্দার গ্রিলের পাশে থাকি আর আবিদ রাস্তায় থাকে।ওখানে বসেই আমাদের রাতে কথা হয়।

এসব ভাবতে ভাবতে আবিদ আমাকে আবার ফোন দেয়!

– কি ব্যাপার আবিদ তুমি ঘুমাওনি, এখন আবার কল দিলে যে?

-নোলক আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই!

-হ্যাঁ বলে ফেলো এটা আবার জিজ্ঞেস করা লাগে নাকি?

-আসলে নোলক আমি তোমাকে খুব কাছে পেতে চাই।

-আমি তো সবসময় তোমার কাছেই থাকি। আমি তো সবসময় তোমার অনুভবে মিশে থাকি। এর চাইতে আর কত কাছে পেতে চাও আমায়?

-তুমি হয়তো বুঝতে পারো নাই আমি তোমাকে কি বুঝাতে চাচ্ছি।

-বুঝিয়ে বল তো!

-তুমি এখনো পড়াশোনা করো। যার কারনে আমি তোমাকে এই মুহূর্তে বিয়ে করতে তো পারব না, আর তুমিও পারবে না। তুমি চাচ্ছো পড়াশোনা করতে। তাই আমি বলি কি” তুমি আমার সাথে রুমডেট আসো”।

-হোয়াট?এসব কি আজব কথা বলতেছো আবিদ? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি?

-নাহ আমি ঠিকঠাক আছি। দেখো আমার বন্ধুরা রিলেশন করে ছয় মাস পরে ওরা রুমডেটে যায় আনন্দ-ফুর্তি করে তারপরে ওরা বিয়ে করে নেয়। আমরা কি এমন আনন্দ করতে পারিনা? আমার তো অনেক ইচ্ছে থাকতে পারে তাই না?

-তুমি কোন নেশা টেশা করেছো নাকি? ঘুমাও তো এখন ফালতু কথা বলো না।

-না আমি ঘুমাবো না। তুমি আগে বলো তুমি আমার সাথে রুমডেটে আসবে কিনা? আমিতো শুধু এটুকুই আবদার করেছি। আর আমরা তো বিয়ে করবো তাই না? তোমার আমার ফ্যামিলি তো আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানে তারাও তো মেনে নেবে।

-বিয়ের আগে এসব করা ঠিক না। এটা তো তুমি জানো। আর আমি তো পারবো না তোমার এমন প্রস্তাব রাখতে। এখন ঘুমাও প্লিজ। আর কিছু বলো। না কালকে তো আমাদের দেখে হচ্ছে তাই না? কালকে যা বলার বলবো। আমি এখন রাখছি তুমি ঘুমাও।

-ওয়েট। এক মিনিট ওয়েট। যা বলার এখনই বলে দিবে আমি কালকে কিছুই শুনতে চাই না, আমি চাই তুমি আমার খুব কাছে চলে আসো। আমি কোন অজুহাত শুনতে চাচ্ছি না নোলক। যা বলার তুমি এখনই বলে দিবে আমাকে।

-আচ্ছা আমার কি করতে হবে তুমি এখন বলো?

-কালকে আমরা একটা হোটেলে উঠবো। দুদিনের জন্য সেই হোটেল ভাড়া নেবো। আমরা সেখানে রাত পার করবো।

-তুমি কি আসলে আমার সাথে রুমডেট করে ভালো থাকবে, তুমি খুশি হবে?

-হ্যাঁ কিন্তু আমিতো তোমাকে ভালোবাসি তাই নাম আমি তো এই সামান্যটুকু আবদার করতেই পারি।

-ওকে আমি আসবো।

-সত্যি বলছো তুমি? বাসায় কি বলে বের হবে?

-তার চিন্তা তোমার করতে হবেনা আবিদ। তুমি আমাকে কাছে পেতে চাইছো আমি তোমার এতটুকু আবদার পূরণ করব।যদি আরো কিছু চাও আমি সবকিছুই পূরন করতে পারব তোমার জন্য। তার জন্য যদি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া লাগে চিরদিনের জন্য, আমি বের হয়ে যেতে রাজি আছি।

-তুমি আমাকে এত ভালবাসো?

-আগেও যেমন ভালোবাসতাম এখনো তেমন ভালোবাসি। বাট তুমি তো আমাকে খুব কাছে পেতে চাইছো এটা তো আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিতে পারিনা।

-লাভ ইউ পাখি। কালকে বিকেলে বের হবে। একটু ঘোরাফেরা করে তারপরে সন্ধ্যার দিকে আমরা হোটেলে উঠবো।

-আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমাও তুমি। তুমি আমাকে সময় মত পেয়ে যাবে।

-হ্যাঁ তুমিও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো।

এসব বলেই আমি ফোনটা কেটে দিলাম। আবিদের কথাগুলো শুনে কেনো যেনো আমার মরে যেতে ইচ্ছে করলো।যে আবিদ আর আমি ভালোবাসার মধ্যে নোংরামির প্রতিবাদ করে বেরিয়েছি।সেই আবিদ’ই আমাকে আজ রুমডেটের অফার করলো। বুঝতে পারলাম না আমি আবিদের মন-মানসিকতা হঠাৎ করে পরিবর্তন হওয়ার কারণ কি। নাকি আমি আবিদের এতদিন খোলস দেখেছি সেগুলো পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। আবিদ তো কখনো এসব সাপোর্ট করতো না। তাহলে কেন এমন করতেছে আমার যে কষ্ট হয় তা কি আবিদ বুঝেনা?

তবে হ্যাঁ আবিদ আমাকে অনেক হেল্প করেছে। আমি যে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি সেই ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পেছনে আবিদের অবদান অনেক। আজ আবিদ যদি না থাকতো তাহলে আমি এই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করার সুযোগ পেতাম না। অনেক সময় পড়াশোনার খরচ আবিদ নিজেই চালিয়েছে। আমি ভেবেছিলাম টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাই কিন্তু আবিদ তা আমাকে করতে দেয়নি। মাসে মাসে আমাকে অনেক টাকা দিয়েছে।

আমি একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমার বাবা সামান্য ছোট একটা ব্যবসা করে। আমার বাবার একার ইনকামে আমাদের সংসারের পাঁচজনের চলতে হয়। বাবার টাকায় ভার্সিটিতে পড়া অনেক দুষ্কর। কিন্তু আবিদ আমাকে ভার্সিটিতে পড়ার সাহস দিয়েছে।

আবিদের সাথে পরিচয় আমার বছর দুয়েক আগে। আমি একটা শপিং মলে গিয়েছিলাম কেনা কাটা করতে। কিন্তু শপিং মলে গিয়ে দেখি আমার পার্স সহ চুরি হয়ে গেছে। তখন বাবাকে একটা জরুরী ফোন দেওয়ার দরকার হয়েছিলো। আবিদের ফোন দিয়ে আমি বাবাকে ফোন দিয়েছিলাম আর বলেছিলাম বাবা আমি তো পার্স হারিয়ে ফেলেছি। আমার কাছে তো এখন মোবাইল বা টাকা নাই কিন্তু আমি যেগুলো কিনতে এসেছি এগুলোতো আমার খুবই প্রয়োজন। কিন্তু বাবাকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম বাবা অনেক দূরে সে শপিংমলে আসতে পারবেনা।

তাই দোকানদারকে জিনিসপত্রগুলো ফেরত দিয়ে আমার পার্স হারিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলাম। আর বলেছিলাম টাকা নিয়ে এসে জিনিসগুলো কিনে নিয়ে যাবো। তখন আমাকে আবিদ বললো..

– আচ্ছা আমি কি আপনাকে হেলপ করতে পারি? আমি যদি আপনার এইগুলার টাকা দিয়ে দেই। পরে আপনি আমাকে ব্যাক দিয়ে দিয়েন।

-না থাক দরকার নেই আমি না হয় আগামীকাল এসে এগুলো নিয়ে যাবো। ধন্যবাদ আপনাকে!

এরপর আবিদ আমাকে জোর করে কিনে দিলো।তারপরে বাসায় আসি। বাসায় এসে ফোন দিলাম টাকা ব্যাক দেওয়ার জন্য।

সেই থেকেই আবিদের সাথে আমার পরিচয় শুরু। এসব ভাবছি আর কান্না করছি। রাতে একটা মুহূর্তের জন্য চোখ বুঝতে পারলাম না।কান্না করে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছি।

পরেরদিন ফ্রেশ হয়ে আমি তাকে ফোন দিলাম ফোন। দিয়ে আমি বাসা থেকে বের হওয়ার কথাটা বললাম। ওর সাথে কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছি যেখানে যেতে বলছে সেখানে উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।

এখন আমি রুমডেটের জন্য হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে আছি আর আবিদের অপেক্ষা করছি……

পরদিন সন্ধ্যায় হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছি। আবিদকে আমি প্রচন্ড রকমের ভালোবাসি। ওর জন্য সব করতে পারি। কিন্তু আমি যেটা করতে যাচ্ছি সেটা ভুল। আর এখন ভুল ঠিক এর বিচার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। একদিকে আমার ভালোবাসা, অন্যদিকে বিবেক!

একটু পরে আবিদ একটা বাইক নিয়ে চলে আসলো। বাইকের পেছনে ওর দুজন বন্ধু। আবিদের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক। অন্য সময়ে আবিদের হাসিমুখ দেখলে আমার ভেতর প্রচন্ড ভালো লাগা কাজ করতো। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। আমি ঘন্টার পর ঘন্টা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি। আমার সারাজীবন পার করে দিতে পারি। কিন্তু আজ ওর হাসিতে আমার অস্বস্তি হচ্ছে৷ ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠছে।

এটা সেই মুখ না যেখানে পুরোটা বিশ্বাস, ভরসা আর ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ। এটা অচেনা এক মুখ, এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টি যা সেকেন্ডে সেকেন্ডে আমাকে বিব্রত করছে। আমি এক পলক তাকিয়ে আর তাকাতে পারলাম না। চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকালাম। এখন আর কান্না পাচ্ছে না।

– চোখ মুখ এভাবে ফুলিয়ে রেখেছো কেন?

-ও কিছুনা, এমনি। আজ তুমি যেমন অচেনা, অপরিচিত, ভিন্ন এক রূপ নিয়ে আমার সামনে এসেছো আমিও কিছুটা তেমন।

-মানে? বুঝলাম না!

-বুঝতে হবে না৷ তোমার আবদার রাখতে আমি এসেছি। এখানেই দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি?

-না না ভেতরে চলো।

আবিদ ম্যানেজার এর সাথে কথা বলতে গেল। কথা শেষ করে এসে আমার হাত ধরে রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি হাত টা সরিয়ে নিলাম।

-কি হলো? হাত টা সরিয়ে নিলে কেন?

-এতদিন তোমার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো ভালোবাসার। তাই তুমি ভালোবেসে আমার হাতটা মুঠোয় পুরে নিলে আমার ভালো লাগত। কিন্তু আজ থেকে তো সম্পর্ক বদলে গেছে আমাদের।

-বলতে কি চাও তুমি? সম্পর্ক বদলায় কিভাবে?

-যেভাবে মানুষ বদলে যায়, তুমি বদলে গেছো। সেভাবেই সম্পর্ক বদলে যায়, আর আমিও।

-মানে টা কি?

-খুবই সহজ। এতদিন তুমি আমার ভালোবাসা ছিলে আজ আমার কাস্টমার। এতদিন ভালোবাসার টানে আসতে আর আজ থেকে শরীরের টানে আসবে। আর হ্যাঁ, পাওয়া মিটিয়ে যেও। যেহেতু আমাকে পতিতা বানিয়ে দিচ্ছো, সেহেতু তাদের মতো দাম টাও দিয়ে যেও।

আবিদ এর চোখমুখ শক্ত হয়ে গেছে। এমন জোরে একটা থাপ্পড় মারলো যে টাল সামলাতে না পেরে রুমের দরজায় গিয়ে পড়লাম। এই কথাতে রাগ কেন করলো বুঝতে পারছি না। আমি তো ভুল কিছুই বলিনি। আজকের পরে আমাদের সম্পর্ক আর থাকবে না। আর না তো আমি থাকব। আমি আমার ভালোবাসা অবমূল্যায়ন করব না। আবার বিবেক এর কথাও ফেলতে পারব না।

আবিদ দরজায় নক করলো। ব্যাপার টা বুঝলাম না। ভেতরে আরো কেউ কি আছে? হতে পারে! যে তার ভালোবাসার সম্মান রাখতে পারে না সে যে কোন পর্যায়ে যেতে পারে। নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে! দাঁতে দাঁত চেপে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি।

ভেতর থেকে কে দরজা খুললো জানিনা। আবিদ আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। কিন্তু ভেতরে অন্ধকার, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আমি অন্ধকার ভয় পাই আবিদ সেটা জানে। আবিদ আমার হাত ছেড়ে দিয়েছে। অন্যসময় হলে আবিদের হাত আঁকড়ে ধরতাম। কিন্তু আজ পারছিনা।

একটু পরে লাইট জ্বলে উঠলো। রুমের ভেতর চোখ বুলাতেই আমি চরম মাত্রায় অবাক হয়ে গেলাম। আমার বাবা মা আর আবিদের বাবা মা আর আমাদের বন্ধুরা সবাই এখানে!

কিন্তু এটা কি করে হতে পারে? কে ডাকলো তাদের? আর হোটেলের রুম টা বেশ বড় আর খুব সুন্দর করে সাজানো!

বান্ধবীরা আমাকে ঘিরে ধরলো।

– কিরে কেমন লাগলো সারপ্রাইজ টা? সবই আমাদের জিজুর প্ল্যান!

-মা মানে?

-মানে হলো আজ তোর এনগেজমেন্ট। আর সেটা আমাদের আবিদ ভাইয়ার সাথে! তোকে না জানিয়ে আমরা সব কিছু এরেঞ্জ করে ফেললাম! কেমন দিলাম বল?

ও মাই গড! অনেক বড় ভুল করে ফেললাম। আমি এটা কি করলাম? আর আবিদকে অবিশ্বাস করলাম কি করে? আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না এসব কি হচ্ছে। কেমন ঘোরের মধ্যে আছি। কোন কথা বলছি না। থম মেরে আছি দেখে আবিদ কনুই দিয়ে হালকা করে একটা ধাক্কা দিলো। আমি ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছিনা। অপরাধ বোধ কাজ করছে। আবিদ আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছে আর আমি ওকে কত খারাপ মনে করেছি, খারাপ ব্যবহার ও করেছি। হয়তো আমি ক্ষমা চাওয়ার ও সুযোগ পাবো না।

আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা সবাইকে কি করে জানাবো? আবিদের কি হবে? ও কি করবে যখন আমি সারাজীবন এর জন্য হারিয়ে যাবো? আমি এটা কি করে ফেললাম! চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে আমি মরতে চাইনা। আবিদের সাথে বাঁচতে চাই। কিন্তু একটা কথা ও গলা দিয়ে বের হচ্ছে না।

ভাবতে ভাবতে আবিদ আমার হাতে রিং পরিয়ে দিয়েছে। আমার চোখ থেকে পানি পড়ছে। হঠাৎ মনে হলো ভেতর থেকে কেউ গলাটা খামচে ধরেছে। বুকের ভেতর জ্বলছে। দম আটকে যাচ্ছে। ফ্লোরে বসে পড়লাম। পানি চাইলাম তারপর আর কিছু মনে নেই!

চোখ খুললাম আস্তে আস্তে। সবকিছু ঘোলাটে লাগছে। কিছু মনে পড়ছে না। আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখছি না। উঠে একটু বসার চেস্টা করলাম। আবিদ কোথা থেকে এসে আমাকে ধরে বসালো।

– আমি এখানে কেন আবিদ?

-সেটা তো আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করব!

আবিদের চোখ লাল হয়ে গেছে। প্রচন্ড রেগে আছে বোঝাই যাচ্ছে। আমার সবকিছু মনে পড়ে গেছে৷ সেদিন হোটেলে আসার আগে বিষ খেয়েছিলাম। স্লো পয়জন ছিলো তাই সাথে সাথে ইফেক্ট করে নি। এক ঘন্টা পরে ইফেক্ট শুরু করবে।

আবিদকে এতটাই ভালোবাসি যে ওর কথা ফেলার ক্ষমতা আমার নেই। আবার ওর প্রতি এতটাই ঘৃণা হয়েছে যে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই মরে গেছে। তাই অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আবিদের সামনেই শেষ হয়ে যাব। কিন্তু আবিদ যে এমন করবে সেটা আমি বুঝতে পারিনি। যাইহোক আমি বেঁচে আছি এটাতেই খুশি লাগছে। জীবন কত প্রিয় আর বেঁচে থাকার ইচ্ছে কত প্রবল এই প্রথম বার বুঝতে পারলাম। কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিলো সব শেষ হয়ে যাচ্ছে৷

– কি হলো কথা বলছো না কেন?

-আ আ আবিদ আমি সর‍্যি। বু বুঝতে পারিনি।

-জাস্ট শাট আপ। কি বুঝতে পারোনি তুমি হ্যাঁ? এতদিনে এই চিনলে আমাকে? এই তোমার বিশ্বাস? তোমার এত সাহস কোথা থেকে আসে? এই মেয়ে এই জীবন টা কি তোমার একার নাকি যে সেটা থাকবে কি থাকবে না তার সিদ্ধান্ত তুমি নিবে?

-আ আমি….

– চুপ! একটা কথা ও বলবা না। তুমি ভাবলে কি করে যে তোমাকে আমি অসম্মান করব? এমন কাজ করতে বলব যাতে অন্যরা তোমার ওপর আঙুল তুলবে এসব তোমার মাথায় আসে কিভাবে?? শোনো বোকা মেয়ে, যে ভালোবাসে সে সম্মান ও করে! সে পুরোটা দিয়ে আগলে রাখে৷ আর বিশ্বাস ও করে।

-সর‍্যি তো।

-সর‍্যি? তুমি জানো এই দুইটা দিন আমার কি রকম কেটেছে? দুদিন অজ্ঞান ছিলে তুমি! এটা আমার ভাগ্য যে সময়মতো হস্পিটাল নিয়ে আসতে পেরেছি। নাহলে আজ আমার মৃত্যুর দুদিন হয়ে যেত।

-প্লিজ এভাবে বলো না। ক্ষমা করে দাও।

-তুমি কেন ক্ষমা চাচ্ছো? তোমার কোন ভুল হয়নি। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারোনি। আমাকে বুঝতেও পারো নি। এটা আমার ব্যর্থতা যে আমি তোমাকে আমার ভালোবাসা বুঝাতে পারিনি। ঠিক আছে ব্যাপার না। আমি বাবা মা কে বলেছি বিয়ে ভেঙে দিতে। বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা অপূর্ণ! আর আমার জন্য তোমার এই অবস্থা, আমার এই মুখ আর আমি তোমাকে দেখাবো না।

দেয়ালে জোরে জোরে ঘুষি মারতে লাগলো। হাত কেটে রক্ত পড়ছে৷ আমি বুঝতে পারছি না কি করব। উঠে গিয়ে হাত ধরলাম।

– প্লিজ এমন করো না। ক্ষমা করে দাও।

আমার হাত শক্ত করে ধরে বেডে বসালো। তারপর হাত থেকে রিং টা খুলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। আমি বিছানায় বসে কাঁদছি। আবিদ বের হতেই মা বাবা আর আবিদের মা বাবা ভেতরে ঢুকলো।

আমি সেন্সলেস হয়ে পড়লাম…..

বাবা মা এসে আমাকে অজ্ঞান দেখে ডক্টর কে ডেকে আনলো। ডক্টর অতিরিক্ত স্ট্রেস নিতে বারণ করেছে। জ্ঞান ফেরার পরে সবাই জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে। কিন্তু আমি কিছু বলছিনা। আমার শুধু কান্না পাচ্ছে। আবিদ এর মা কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।

– আম্মু আবিদ বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে।

ফোপাঁতে ফোপাঁতে বললাম আবিদের মাকে। আবিদের মা মুচকি হাসলেন।

– তুই চিন্তা করিস না। রাগ করে আছে তাই এমন করেছে। আমি ওর সাথে কথা বলব। আর তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে নে আগে। আমি আর একটুও দেরী করবনা। হস্পিটাল থেকে রিলিজ করে দিলেই তোকে আমার বাড়িতে বউ করে নিয়ে যাবো।

আম্মুর কথায় আস্বস্ত হলাম। কিন্তু তারপরেও আবিদ এর জন্য খারাপ লাগছে। ও খুব কষ্ট পেয়েছে। অনেক রাগ করে আছে। যে করেই হোক ওর রাগ ভাঙতে হবে।

দুদিন পরে বাসায় এসেছি। এখন অনেকটা সুস্থ্য। এই দুদিনে আবিদ একবারো আমাকে দেখতে আসেনি। আর কল ও দেয়নি। ওকে খুব মিস করছি। কল দিয়ে ও পাচ্ছি না। আমার কল রিসিভ করে না। মেসেজ দিলেও উত্তর দেয়না। তবে ওর মা কল করে খোঁজ খবর নেয়৷ আবিদের সাথে একবার দেখা করা দরকার। নাহলে ওর রাগ ভাঙতে পারব না।

বিকেলে আবিদকে না জানিয়ে আবিদের বাসায় চলে এসেছি। আম্মুকে আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছি। অবশ্য তিনিই বলেছেন বাসায় এসে আবিদের সাথে সরাসরি কথা বলার জন্য। আবিদের বাসা আমাদের বাসা থেকে দু’ঘন্টার পথ। মা প্রথমে রাজি হয়নি। বিয়ের আগে একা একা শশুরবাড়ি চলে যাওয়া আমাদের বাঙালী কালচারে নেই। আমার ও খুব ইচ্ছে ছিলো আবিদের হাত ধরেই ওর বাড়িতে প্রথমবার আসি। আমার নতুন জীবনের শুরুতে আবিদ আমার পাশাপাশি থাকুক, নতুন পথে দুজন একইসাথে পা রাখি। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। আবিদের সাথে দেখা না হলে সবকিছু ঠিক করা যাবেনা। আর আমি আবিদের সাথে এই দুরত্ব টা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।

তাই চলে আসলাম। জামা কাপড় কিছুই আনিনি। আবিদের সাথে কথা বলে আজকেই চলে আসব। যদিও রাত হয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা না, আবিদ দিয়ে যাবে বাসায়। কিন্তু সব ঠিক হবে তো? আবিদের রাগ ভাঙবে তো? যে কষ্ট দিয়েছি তা মুছে ফেলতে পারব তো?

বিভিন্ন চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আবিদের বাসার ঠিকানা আমার শাশুড়ী মানে আবিদের আম্মু দিয়েছেন। তার নির্দেশনা মতো বাসায় সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। মনের ভেতর একটা ভয় কাজ করছে। কিন্তু কিসের ভয় সেটা জানিনা। একইসাথে ভয় এবং দুশ্চিন্তা চেপে বসেছে। হয়ত এটা প্রথমবারের মতো শশুড়বাড়ি আসার অনুভূতি। কাঁপা কাঁপা হাতে কলিং বেল বাজালাম। সাথে সাথে দরজা খুলে গেল। মনে হচ্ছে কেউ আগে থেকেই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ও হ্যাঁ, আম্মুই তো আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন। আমি আম্মুকে সালাম করার জন্য নিচু হতেই আমাকে তিনি জড়িয়ে ধরলেন।

– আসতে কোন অসুবিধে হয়নি তো মা?

-নান, না হয়নি।

-কিরে এভাবে ভয় পেয়ে আছিস কেন? ও বুঝতে পেরেছি! এ বাড়িতে প্রথম বার তো তাই এমন নার্ভাস লাগছে, পরে ঠিক হয়ে যাবে। আমার ও এমন হয়েছিলো।

আমি একটু হাসার চেস্টা করলাম। কিন্তু ভেতর থেকে যেন হাসি আসতে চাইলো না। তবুও কষ্ট করে একটু শুকনো হাসি দিলাম। মা বাবার সাথে অনেক কথা হলো। এখন মোটামুটি ফ্রি হয়ে গেছি। ভয়টাও কেটে গেছে। আম্মু নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে। তার কোন মেয়ে নেই তাই আমাকেই মেয়ে বানিয়ে ফেলেছে। আব্বু ও তাই। খুব মিশুক সবাই। কিন্তু এত সময়ে আমার সাহেব টাকে একবার ও দেখলাম না। আম্মুকে জিজ্ঞেস করব কিন্তু লজ্জা আর ভয় দুইটাই লাগছে। সাহস পাচ্ছি না। আড়চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।

– কিরে কাউকে খুঁজছিস?

-না না। কাউকে খুঁজছি না।

-কি মনে হয় তোর? মায়ের চোখকে ফাঁকি দিতে পারবি?

আমি লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। মা হয়তো বুঝতে পেরেছে যে আমি আবিদকে খুঁজছি।

– আবিদ ওর ঘরে ঘুমুচ্ছে। সন্ধ্যা তো হয়ে গেছে যা ডেকে তোল। রাতে ওর সাথে কথা বলে ঝগড়াঝাটি শেষ করবি।

-কিন্তু আম্মু আমি তো একটু পরে ই বাসায় যেতে চাই। তুমি প্লিজ আবিদকে বলো না যেন আমায় বাসায় পৌঁছে দেয়।

– আজ কোথাও যাচ্ছিস না তুই। তোর মায়ের সাথে আমার কথা হয়েছে৷ বুঝেছিস?

-কিন্তু,

-আবার কিন্তু? মার চিনিস? আবিদ কিন্তু এখনো মার খায় আমার হাতে। এখন তুইও খাবি। যা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা।

আমি মুচকি হেসে আবিদের রুমের দিকে পা বাড়ালাম। আল্লাহ এর কাছে মনে মনে শোকর করছি এত ভালো একটা পরিবার দেয়ার জন্য। আবিদের দরজায় নক করতে হলো না। দরজা হালকা করে চেপে দেয়া। ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেছি। আবিদ এর রাগকে কেন যেন খুব ভয় পাই আমি।

বালিশের ওপর উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে। মাথার চুলে কপাল আর চোখ ঢেকে গেছে। আলতো করে চুলে হাত দিলাম। নাহ জাগে নি। চুলের ভেতরে হাত দিয়ে আলতো করে নাড়া দিলাম। তাতেও ঘুম ভাঙে নি। এইবার চুল সরিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলাম।

এখন নিজেরই লজ্জা লাগছে। প্রথমবার আবিদকে এতটা কাছ থেকে দেখলাম আর চুমু খেলাম। ভাগ্যিস ঘুমিয়ে আছে। নয়তো ও দেখতে পেলে লজ্জায় মরেই যেতাম। ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছে এই সময়টা যদি শেষ না হতো! যদি সময়টা এখানেই থেমে থাকতো, যদি হাজারবছর এভাবে তাকিয়ে থাকতে পারতাম!

ঘোর কাটলো মেসেজের শব্দে৷ মেসেজ আসার আর সময় পায়না৷ যাক, এভাবে বেশিক্ষণ থাকা যাবেনা। আবিদকে ডেকে তুলতে হবে। ডাকার জন্য গায়ে হাত রাখতেই আমার হাত টেনে নিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরলো। এতে কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে আবিদের মুখের আরো কাছাকাছি চলে এসেছি। ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ হয়ে গেছি। অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। এমন অনুভূতি আগে কখনো হয়নি। এটা মিস করার ইচ্ছে হলোনা। তাই আবিদকে না ডেকে এভাবেই বসে রইলাম। আবিদ আরেকটু টান দিতেই একেবারে বুকের ওপর পড়লাম। আবিদ লাফ দিয়ে উঠে বসলো। আমি ভয় পেয়ে পেছনে সরে গেলাম।

– তু তু তুমি এখানে কেন?

-আপনি এখানে কেন?

-আমি এখানে কেন মানে? এটা আমার বাসা, আমার রুম। তাহলে আমি থাকব না তো কে থাকবে?

-এক্সাক্টলি! আমিও সেটাই বলছি। এটা যেমন আপনার বাসা, আপনার রুম তেমনি আমার ও বাসা আর আমার রুম।

-মানে?

-মানে আপনি এ বাড়ির ছেলে আর আমি এ বাড়ির বউ। -দেখো ফাজলামো করো না। আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলে কিন্তু খুব খারাপ হবে। আর তুমি এখানে কেন এসেছো? যাও, চলে যাও। আর কখনো যেন না দেখি।

-আমি সর‍্যি আবিদ। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।

আবিদকে জড়িয়ে ধরে বললাম। কিন্তু আবিদ আমাকে ছিটকে মেরে সরিয়ে দিলো। আবিদের ব্যবহারে খুব কষ্ট পেলাম।

– কিসের সর‍্যি হ্যাঁ? তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক ই নেই। দিবানিশি খেলা খেলছো আমার সাথে, না? কখনো দিনের মতো আমার জীবন আলোকিত করে দিবে! আবার আমাকে রাতের মতো অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে একা করে দিতে তোমার একটুও বাঁধে না! পেয়েছো টা কি তুমি? বের হও আমার বাড়ি থেকে। আর কখনো যেন না দেখি।

কথাগুলো বলতে বলতে আমার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। আমি দরজা খুলতে বললাম কিন্তু খুললো না। বাড়ির সামনে সুন্দর একটা বাগান। এখানে আমার পছন্দের সব ফুলই আছে। আম্মু বলেছে এগুলো নাকি আবিদ লাগিয়েছে আমার জন্য। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছি আর ফুলগুলো দেখছি। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে আছি। আজ সারারাত এখানে দাঁড়িয়েই ভিজব। যা হয় হোক। চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছি শীতে। হঠাৎ মনে হলো বৃষ্টি কমে গেছে। চোখ খুলে দেখি আবিদ ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঘরের ভেতর থেকে আসা অল্প আলোতে সব দেখা যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাত ধরে হ্যাচকা টানে বুকের সাথে চেপে ধরলো।

– যদি ঠান্ডা লেগেছে না একেবারে মেরেই ফেলবো।

-তোমার জন্যই তো।

আবিদ আর কোন কথা না বলে হাত ধরে টেনে বাসায় নিয়ে গেল। মাথার চুল গুলো ভালো করে মুছে দিয়ে মায়ের একটা শাড়ি এনে দিয়ে চেঞ্জ করতে বলে বাইরে চলে গেল। আমি কোনমতে পেচিয়ে শাড়িটা পড়েছি। আবিদ দেখে হেসে ফেললো। পরে কুচিটা ঠিক করে দিয়ে আচল টা টেনে মাথায় দিয়ে দিলো। আমার দিকে অপলকে তাকিয়ে আছে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম।

– একদম বউ বউ লাগছে।

-হুম তোমার বউ।

-আর কখনো ছেড়ে যাওয়ার চিন্তাও করো না পাখি। সত্যি সত্যি মরে যাবো।

আবিদকে জড়িয়ে ধরে বললাম আর কখনোই ছেড়ে যাব না। আবিদ আমাকে সেই রিংটা পরিয়ে দিয়েছে। খুশিতে কাঁদছি। প্রিয় জিনিস টা হারিয়ে আবার ফিরে পাওয়ার মতো আনন্দ আর অন্য কিছুতে হয়না। এ আনন্দ প্রকাশ করা যায়না।

রাতে খাওয়া দাওয়া করে অন্য রুমে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে উঠে দেখি ঘর ভরা মানুষ। আমার বাবা মা আর অন্য আত্মীয় রাও এসেছে। আবিদের কাজিন রা আমাকে ঘিরে ধরলো। আজ নাকি গায়ে হলুদ। আর রাতেই বিয়ে। খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু নাচা যাবেনা। মনে মনে নাচতে লাগলাম।

হঠাৎ করে আবিদ কানের কাছে “খুব সুন্দর লাগছে আমার মায়াবতী টাকে” বলেই চলে গেল। একটু দূরে দেয়ালে হেলান দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। লজ্জায় জমে গেছি!
অবশেষে তাকে পেলাম……!!

লেখা: নাজমুল হুদা, শিক্ষার্থী, ডিগ্রী ১ম বর্ষ, বাগেরহাট, খুলনা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment