“দি বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইন্সটিটিউট থেকে শেকৃবি “, ভর্তি যুদ্ধে কেন সেরা?
মাজেদুল ইসলাম,শেকৃবি:বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র যেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা সহাবস্হানে থেকে দেশ, জাতি তথা বিশ্বের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একাত্মা হয়ে কাজ করবে। একই সঙ্গে দেশ তথা রাষ্ট্রের ক্রান্তিকালে কোঁমড়বেধে গৌরবজনক প্রতিবাদী আন্দোলনের চারণভূমিতে পরিনত হবে দ্বীপ্তিমান তারুণ্যের জয়গানে ।
বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটা প্রতিষ্ঠান -যেখানে জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকল পেশার মানুষের কথা ভেবে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা মনন ও সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ বিস্তার ঘটিয়ে ন্যায়,মনুষ্যত্ব,সততা,বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, আপোষহীনতার শিক্ষা লালন করে সুস্থ, সুন্দর পৃথিবী জনগণকে উপহার দেওয়ার সূতিকাগার।
বাংলাদেশে সরকারী ও বেসরকারী দুই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।বাংলাদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটির সাথে পরিচিত হওয়ার পর থেকেই রাত দিন একাকার করে মনের মধ্যে কোন এক সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন দেখে এবং অনাগত ক্যাম্পাস জীবনের আনন্দে মুখরিত হওয়ার চেষ্টা করে।
তবে লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের আকাঙ্খার বিপরীতে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য এসব সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক হাজার সিট বিদ্যমান।তাই হাজারো লালিত স্বপ্ন ভর্তিযুদ্ধে বিলীন হয়ে যায়। বাংলাদেশে প্রায় ৪১ টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভর্তি হওয়ার প্রবনতাও আবার বিভিন্ন রকম।
১০-১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীকে আমরা হয়তো আর ক্লাসে ফিরে পাবো না
তন্মোধ্যে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত “শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় “ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হাজারো শিক্ষার্থীদের মনে ভর্তি হওয়ার জন্য অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিগণিত।হাজারো শিক্ষার্থীর লালিত স্বপ্ন এ ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়ে কৃষি শিক্ষার জ্ঞান অর্জন করে কৃষি ও কৃষকের পাশে থেকে দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ তৈরী করে কৃষি খাতকে উন্নততর করার পথ সুগম করতে।
চলুন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সমন্ধে জানা যাক–
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়(শেকৃবি) ১১ ডিসেম্বর ১৯৩৮ সালে “দি বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইন্সটিটিউট “নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মূখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক বাংলার হাল আমলের কৃষিকে আধুনিকায়ন এবং কৃষকের দোড়গোড়ায় কৃষি প্রযুক্তি পৌছিয়ে দিতে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।প্রতিষ্ঠানটি বাংলা তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম কৃষি শিক্ষা ও গবেষনা প্রতিষ্ঠান।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এ প্রতিষ্ঠানটি ও পর্যাক্রমে বেঙ্গল কৃষি ইনস্টিটিউট থেকে পূর্ব পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটে এ রুপান্তরিত হয়।সর্বশেষ, ২০০১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ১৭ তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি আত্মপ্রকাশ করে।বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে হাজারো কৃষিবিদ কৃষি শিক্ষার জ্ঞান নিয়ে বাংলার কৃষকের দোড়গোড়ায় আধুনিক চাষাবাদ শিখিয়ে দেশের মানুষের খাদ্যর জোগান দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্যশস্য রপ্তানি করে দেশের,অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করছে।
ভর্তি যুদ্ধে শেকৃবি কেন সেরা?
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হলো কারগরি তথা কর্মমুখী শিক্ষার আঁতুড়ঘর। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সরাসরি নিজে উদ্যোক্তা হতে এবং কৃষি ও কৃষকের পাশে থেকে উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম এজেন্ট হতে পারেন। এছাড়া ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্যে হুমড়ি খেয়ে থাকে।
শেকৃবিতে ৪ টি অনুষদ আছে-
১.কৃষি অনুষদ
২.এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ
৩.ফিসারিজ, একোয়াকালচার এন্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদ
৪.কৃষি ব্যবসা ও ব্যবস্হাপনা অনুষদ
প্রত্যেকটি অনুষদই শিক্ষার্থীদের
উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যথেষ্ট সহায়ক। তাছাড়া বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় কৃষি সেক্টর সবচেয়ে সহজলভ্য এবং লাভজনক পেশা। শিক্ষার্থীরা গ্রাজুয়েশন শেষ করে সহজে চাকরি ম্যানেজ করতে পারে পাশাপাশি খাদ্যশস্য,মৎস্য বা পশুপালনে সহজে উদ্যোক্তা হতে পারে।আর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে প্রত্যেকটা অনুষদের টেকনিক্যাল ক্যাডার তো আছেই তাই শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের ক্যাম্পাস শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
‘ছাত্র-ছাত্রীদের টিকা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী’
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তিযুদ্ধে অন্যতম পছন্দের প্রতিষ্ঠান বিশেষত এর কোয়েশ্চেন প্যাটার্ন এর জন্য।এখানে মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়েশ্চেন প্যাটার্নের সমন্বিত রুপ অর্থাৎ পদার্থবিজ্ঞান,রসায়ন,জীববিজ্ঞান, গণিত,সাধারণ জ্ঞান,ইংরেজি সবগুলো বিষয়ই এখানে উত্তর করতে হয়।তাই গনিত পারদর্শী বা জীববিজ্ঞান পারদর্শী সব শিক্ষার্থীরা শক্তিশালী দখল রাখতে পারে প্রশ্নের উত্তর করে।তাই শিক্ষার্থীরা উঠে পড়ে লাগে এখানে ভর্তিযুদ্ধে সেরাদের সেরা হতে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য।কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার দরুন পুরো ক্যাম্পাস খাদ্যশস্য ,ফুল ,ফল পাখি, কীটপতঙ্গ,মৌমাছি,পুকুরপাড় যেন একখন্ড গ্রাম ব্যস্ত নগরী ঢাকার মধ্যে সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে সমহিমাম দ্বীপ্তিমান।তাইতো ঢাকার মানুষজন প্রায়সময় তাদের ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে গ্রামের নির্মল বাতাস নিতে ভিড় জমায় রাজধানীর গ্রামখ্যাত এ ক্যাম্পাসে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হলো আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তির পরপরই হলে সিট পায়।শিক্ষা, গবেষনা ও সম্প্রসারণ এই তিন মূলনীতিকে সামনে রেখে উত্তরোত্তর এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।Learn to feed the nation এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে হাজারো কৃষিবিদ তৈরীতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে রয়েছে ছেলেদের ৪ টি ও মেয়েদের ৩ টি হল,ক্যাফেটেরিয়া, টিএসসি,৪ টি অনুষদ,ফ্যাব ল্যাব,অডিটোরিয়াম,
কেন্দীয় মসজিদ,মন্দির, সুবিশাল খেলার মাঠ,পুকুরপাড়,এগ্রোনমি ফিল্ড,হর্টিকালচার ফিল্ড ইত্যাদি।এছাড়াও পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে কৃষির আধুনিকায়নের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হাজারো গবেষনা প্রকল্প।প্রতিবছর এখানকার গবেষকরা দেশকে নতুন নতুন আইডিয়া ও খাদ্যশস্য ও প্রযুক্তি উপহার দিয়ে দেশের কৃষি সেক্টরকে ত্বরান্বিত করছে।
এখানে প্রায় ২০ টির ও অধিক ক্লাব আছে যেগুলো শিক্ষার্থীদের মেধা,মননে বিকশিত হয়ে কৃষিবিদ হওয়ার পাশাপাশি প্রকৃত মানুষ হতে অনেকটাই সহায়ক।
এছাড়াও ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় কৃষি সেক্টরের বেশিরভাগ গবেষণা ও পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠান ঢাকায় অবস্হিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে এ বিদ্যাপীঠটি।আর বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকা নাগরিক সুবিধার তুঙ্গে থাকায় ভর্তিইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে এখানে সুযোগ পাওয়ার জন্য।
সর্বোপরি কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান,অপরুপ সৌন্দর্যের আঁধার,গ্রামীন পরিবেশ,মুক্তচিন্তার চর্চা,প্রাচীনতম কৃষি শিক্ষার সূতিকাগার,নাগরিক সুবিধা, প্রতিষ্ঠান,শতভাগ আবাসন,টেকনিক্যাল ক্যাডার,উদ্যোক্তা হতে কার্যকরী শিক্ষা ব্যবস্থা সহ নানাবিধ কারণে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হলো শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।