ধর্ষক হওয়ার পথ খোলা রেখে ধর্ষণ বন্ধের জন্য মায়াকান্না

ধর্ষক হওয়ার পথ খোলা রেখে ধর্ষণ বন্ধের জন্য মায়াকান্না

ফেসবুক পাতা


ধর্ষণ বন্ধ করবার জন্য যতই আন্দোলন হোক না কেন ধর্ষণ কিন্তু বন্ধ হবে না, বরং বৃদ্ধি পাবে দিন দিন । কারণ ধর্ষক হওয়ার পথ খোলা রেখে ধর্ষণ বন্ধের জন্য মায়াকান্না দেখানো লৌকিকতা ভিন্ন অন্য কিছু নয় । এতে রাজনীতির মাঠ কিছুটা সরব বে, বাস্তবে ধর্ষণ কমবে না।

ধর্ষণ নিয়ে একেকজন একেক রকম রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। অনেকে ধর্ষণ কমাতে পতিতালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি, সমকামিতাকে বৈধতা প্রদান, পর্দাপ্রথাকে কটুক্তিসহ বিভিন্ন এজেন্ডা দাঁড় করাতে চাচ্ছে। কেউ কেউ সরকারকে ধুয়ে দিচ্ছে। ছাত্রলীগকে ধর্ষণের জন্য একমাত্র দায়ী করছে, সাথে পুলিশকেও।

আসলে সরকার চাইলেই ধর্ষণ বন্ধ করতে পারবে না। পুলিশের পক্ষেও সম্ভব নয়। কারণ ধর্ষণ হবার পথগুলো খোলা রাখা হয়েছে, অন্যদিকে ধর্ষণ বন্ধ হবার পথগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই সাইকো-সোসাল স্টাডির মাধ্যমে ধর্ষক তৈরি ও ধর্ষণ হওয়ার মূল পয়েন্ট বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারলে ধর্ষণ কখনই থামবে না, বাড়তেই থাকবে।

সাইকোলজির ভাষায়- মানুষ চোখে যা দেখে মনে সেটা ক্রিয়া করে। মনের ক্রিয়া থেকে চিন্তা কাজ করে। চিন্তা থেকে পরিকল্পনা, পরিকল্পনা থেকে একশন তথা কার্যে রূপান্তর।

উপরের বিষয়টি একজন মানুষের ব্রেইন-সাইকল। উদাহরণস্বরূপ- আপনি একটা মার্শাল আর্ট এর মুভি দেখলেন। মুভিটা দেখার সময় আপনার মনে মার্শাল আর্ট শেখার আগ্রহ জন্মাবে। এটা কিছুক্ষণ কিংবা কিছুদিন আপনার মাইন্ডে থাকবে। এরপর ভুল যাবেন। কিন্তু যদি বারবার আপনি ওরকম আরো একাধিক মুভি দেখতে থাকেন তখন মার্শাল আর্ট শেখার প্রতি আপনার আগ্রহ বাড়তেই থাকবে। ফলে সময় সুযোগ হলে আপনি হয়তা মার্শাল আর্ট ক্লাবে ভর্তি হয়ে যাবেন। সেটা না হলে অন্তত মার্শাল আর্ট না শেখার একটা আফসোস থেকে যাবে অথবা মার্শাল আর্ট এর প্রতি একটা আগ্রহ থেকেই যাবে।

ধরুন- আপনি বাসা থেকে বের হলেন। হঠাৎ একটা নারীর স্পর্শকাতর অঙ্গ আপনার দৃষ্টিগত হল। আপনার চোখে দেখা এই দৃশ্যটি আপনার মনে ক্রিয়া করবে। হয়তো ওই নারীকে নিয়ে আপনি খারাপ কিছু কল্পনাও করবেন। অর্থাৎ উক্ত দৃশ্যটি আপনার মাইন্ডকে দীর্ঘক্ষণ স্মৃতিচারণ করাবে।

একইভাবে ছোট থেকে শুরু করে যারা ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত নায়ক-নায়িকাদের প্রেম-ভালবাসা সম্পর্কিত বিভিন্ন মুভি দেখেছে তাদের ভেতরও সুন্দরী মেয়েদের সাথে প্রেম করবার আগ্রহ তৈরি হয়। এজন্য দেখা যায় এখন হাইস্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে ছেলে-মেয়েরা ভর্তি হলেই ছেলেরা একটা মেয়ে খোঁজে প্রেম করতে। মেয়েরাও ছেলে খোঁজে প্রেম করতে। যখন কাউকে পাওয়া যায় তখন সিনেমাটিক স্টাইলে ঘুরতে যাওয়া, চুমু খাওয়া, জড়িয়ে ধরা ইত্যাদি কর্মে লিপ্ত হয়ে যায় তারা।
বাবা-মা কিংবা অন্যান্য অভিবাবকদের অমান্য করে প্রেম করতে হবে, প্রেমকে জয় করতে হবে এসবও শিক্ষার্থীরা করে থাকে। কারণ মুভিগুলোতে এসব দেখানো হচ্ছে। কিন্তু যদি স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটি লাইফে এসেও যদি কাউকে পাওয়া না যায় তখন ঐ ছেলে বা মেয়ের ভেতর খুব আফসোস থেকে যায়।

আবার যদি কোনো শিক্ষার্থী বা অন্য কেউ পর্ন মুভি দেখে কিংবা পর্ন দৃশ্য দেখে তখন তারাও মনের ক্ষুধা মেটাতে মেয়ে খুঁজে বেড়ায়। এভাবে বার বার যদি পর্ন দেখতে থাকে তাহলে সে বা তারা যৌন ক্ষুধা মেটাতে হস্তমৈথুন করে সোনার যৌবন নষ্ট করে ফেলে। কিন্তু হস্তমৈথুনে যৌনক্ষুধা সামান্য সময়ের জন্য ঠাণ্ডা রাখলেও দীর্ঘমেয়াদে যৌনক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়।

যেহেতু হস্তমৈথুন ভার্চুয়াল, তাই ব্যক্তি তখন বাস্তবে যৌন ক্ষুধা মেটাতে কোনো পার্টনার তথা নারীকে খুঁজে বেড়ায়। ফলে পর্ন আসক্ত কিংবা পর্ন দৃশ্য দেখা লোকটির মনন-মগজ তার যৌন ক্ষুধা মেটানোর জন্য অস্থির- অশান্ত হয়ে যায়। কাছে যে নারীকে দেখতে পায় তখন পর্ন আসক্ত ব্যক্তির মন তাকেই ইচ্ছে করে যৌন সঙ্গী হিসেবে পেতে। কিন্তু সমাজের চোখ তাকে অবলোকন করছে বলে সে পারে না বলতে, ধরতে, ঝাপিয়ে পড়তে, করতে।

এজন্য যৌন দৃশ্য দেখে যৌন ক্ষুধায় উন্মত্ত থাকা ব্যক্তিটি অপ্রকাশে তথা গোপনে তার যৌন ক্ষুধা মেটানোর পথ খোঁজে। তখনই সুযোগ পেলে সে হয়ে উঠে বাস্তবের ভিলেন তথা একজন ধর্ষক। একা পথে কোনো নারীকে দেখলে যৌন ক্ষুধা মেটাতে চায় সে, বাসের ভীড়ে নারী দেখলে স্পর্শে যেতে চায়, ফোনে, ফেসবুকে, মেসেঞ্জারে, পথে ঘাটে সবখানেই তার মন নারীর দেহ খোঁজ করে কীভাবে তার যৌন তৃষ্ঞা মেটানো যাবে। সেটা প্যান্ট-টি-শার্ট পড়া মেয়ে হোক, শিশু হোক, বোরকা পড়া রমনী হোক, বৃদ্ধা হোক যাকে পাবে সুযোগ পেলে তার উপরই চড়াও হবার জন্য প্রস্তুত থাকে তার মাইন্ড। সেক্সলোজিতে এটা এক চরম বাস্তবতা।

এখন আপনি একটু খেয়াল করুন আমাদের সমাজ বাস্তবতায়। একদিকে মুভি ও নাটক সব সময় টিভি পর্দায় ভাসছে, নারীর খোলা মেলা পোষাকে বিজ্ঞাপন, রাস্তাঘাটে নারীর সাহচর্যা, দেয়ালে দেয়ালে নারীর অশ্লীল পোষাক পরিহিতা বিলবোর্ড, খোলামেলা পোষাকে নারীর দৃশ্যায়ন ইত্যাদি এসব দৃশ্য জন সাধারণের চোখের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে, একটা মুহূর্তও এসব অনলাইন-অফলাইন দৃশ্যায়ণ থেকে বের হতে পারছেন না, বলা চলে সুযোগ নেই বের হবার।

এরকমই একটা এনভাইরোনমেন্ট তৈরি হয়ে গেছে সমাজে। যেটাকে বলা হয় সফ্ট পর্নগ্রাফি। সফট পর্নোগ্রাফি থেকেই মানুষের চিন্তা ও মন হার্ড পর্নোগ্রাফির দিকে ধাবিত হয়। কার্যাত তাই হয়। এরপর পর্নো দৃশ্য এবং পর্নো মুভি তো আছেই।

একটা কথা সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে, আপনি মানুষের দেহ বেধে রাখতে পারলেও মনকে বেধে রাখতে পারবেন না। তবে কাউন্সেলিং করলে মন কিছু সময়ের জন্য শান্ত হয়ে যায়। এজন্য আপনি শুধু ধর্ষকের বিচার চাইলে, কিংবা হাজারটা ধর্ষকের মৃত্যু নিশ্চিত করলেও ধর্ষণ ঠেকাতে পারবেন না।

Srabon Ispahani-শ্রাবন ইস্পাহানীর আইডি থেকে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment