ধর্ষনের পর কারমাইকেল কলেজ ছাত্রীকে হত্যা, গ্রেফতার ৩

ধর্ষনের পর কারমাইকেল কলেজ ছাত্রীকে হত্যা, গ্রেফতার ৩

ডেস্ক রিপোর্ট


দিনাজপুরের পার্বতীপুরে রাস্তার পাশ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হওয়া সেই অজ্ঞাতপরিচয় তরুণীর লাশের পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ। রুখিয়া রাউৎ (২৩) নামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (আদিবাসী) ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে কোনো একসময় রুখিয়া ডায়েরিতে লিখে যায় লিখেছেন, ‘আত্মহত্যা করতে গিয়ে কোনোভাবে বেঁচে গেলাম। আজ ৫/১০/২০২০ আমাকে আনিছুল দূরে কোথাও ডেকেছে। যেখানে ও নিজের হাতে আমাকে হত্যা করবে।

এদিকে গত মঙ্গলবার ভোরে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে শালবাগানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাত হিসেবে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা যায়, নিহত রুখিয়া রাউৎ রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক শেষবর্ষের শিক্ষার্থী। বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মিশনপাড়ায়। তার বাবার নাম দিনেশ রাউৎ।

রুখিয়া রাউৎকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আনিছুর রহমান (৩০) এবং তার সহযোগী অটোচালক রাজ মিয়া (২৮) ও আশিকুজ্জামানকে (২৭) গতকাল বুধবার ভোরে নিজ নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পরে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তাদের দিনাজপুর আদালতে নেওয়া হয়।

পারিবারিকভাবে জানা যায়, গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রংপুরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন রুখিয়া। বান্ধবীদের সঙ্গে একরাত থেকে পরের দিন তার ফিরে আসার কথা ছিল। শেষবার ফোনে মা সুমতিকে তিনি বলেন, ‘মা রংপুর যাচ্ছি। চিন্তা করিস না। সকালে আবার ফিরে আসব।’ এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওই দিন তিনি আর বাড়িতে ফিরে না আসায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজন।
পরের দিন মঙ্গলবার সকালে বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ঘুনুরঘাট এলাকার পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পাঁচপুকুরিয়ার শালবাগান থেকে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার করেন মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। উদ্ধারের সময় মরদেহের হাত-পা ওড়না দিয়ে গলার সঙ্গে বাঁধা ছিল। পরনে ছিল সালোয়ার-কামিজ। রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত ছিল মুখ, দাঁতগুলো ছিল ভাঙা।

দুর্বৃত্তরা নির্দয়ভাবে হত্যার পর অটোরিকশায় করে সেখানে লাশটি ফেলে যায়। পরে মধ্যপাড়া পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এদিকে লাশের পরিচয় জানতে ওই দিন সন্ধ্যায় দিনাজপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি তদন্তদল মরদেহের হাতের আঙুলের ছাপ নেয়। জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে চেহারার ছবি মিলে যাওয়ায় রুখিয়ার পরিচয় নিশ্চিত হয় পিবিআই। পরে জানা যায় তিনি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের মেয়ে। বাড়ি বদরগঞ্জে। এরপর বদরগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে সহায়তা করে।

এ বিষয়ে রুখিয়ার বাবা দিনেশ রাউৎ বলেন, ‘একই এলাকার আবদুল গফুরের ছেলে আনিছুল প্রায় সময় রুখিয়াকে বিরক্ত করত। হোস্টেল থেকে বাড়িতে এলে সে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে রুখিয়াকে। একপর্যায়ে সে প্রেমের প্রস্তাব দেয় আমার মেয়েকে।’
এদিকে , গত সোমবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে রুখিয়া তার ডায়েরিতে কিছু কথা লিখে যান। তিনি লিখেছেন, ‘আত্মহত্যা করতে গিয়ে কোনোভাবে বেঁচে গেলাম। আজ ৫/১০/২০২০ আমাকে আনিছুল দূরে কোথাও ডেকেছে। যেখানে ও নিজের হাতে আমাকে হত্যা করবে।

এ কথা ও নিজে বলেছে যে, ও আমাকে নিজের হাতে হত্যা করবে। আমার সবকিছুর জন্য আনিছুল দায়ী।’ বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে কোনো একসময় রুখিয়া ডায়েরিতে এসব লিখে যান। পড়ার টেবিল থেকে রুখিয়ার ডায়েরি উদ্ধার করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে পার্বতীপুর মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নির্দয়ভাব মেয়েটিকে হত্যার পর লাশ ফেলে যায়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন আনিছুল হকসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এতে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা জানতে তদন্ত চলছে।’

পার্বতীপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আলামত হিসেবে বেশকিছু জিনিসপত্রও তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *