নদীভাঙন রোধে প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের খোলাচিঠি

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নে চলমান নদী ভাঙনের ফলে মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এমতাবস্থায় এখানকার মানুষকে এই ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্র মো. লোকমান হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট একটি খোলাচিঠি লিখেছেন।

তার লেখা চিঠিটি পাঠকের উদ্দেশ্যে হুবুহু তুলে ধরা হলো:

“মাতৃতুল্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমার আন্তরিক সালাম গ্রহণ করবেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এগিয়ে যাচ্ছে আপনার হাত ধরে৷ বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে সব সূচকে অগ্রগতি, সাফল্য আর উন্নয়নের ফানুস উড়িয়েই টানা তৃতীয় মেয়াদের ক্ষমতার এক বছর পূর্ণ করার পথে আপনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন শুধু উন্নয়নের রোল মডেলই নয়, একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবেও প্রশংসিত। কথিত তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ দশ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য,বস্ত্র-চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে আপনার দৃঢ়চেতা ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে। উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রামে যেমন লেগেছে তেমনি ছোঁয়া লেগেছে দেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও।

কিন্তু আপনার হাতে গড়া এই সোনার বাংলায় এখনও এমন কিছু প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে যেখানে প্রকৃতি অত্যন্ত নিষ্ঠুর। আমি এমনই একটি প্রত্যন্ত এলাকার সন্তান। ভৌগলিক দিক বিবেচনায় আমার এলাকা মেহেন্দিগঞ্জ একটি দ্বীপ। বরিশাল জেলার নদী বিধৌত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন শ্রীপুর ইউনিয়ন। তেঁতুলিয়া নদীর তীরে এই ইউনিয়নে প্রায় ২০,০০০(বিশ হাজার) মানুষ বসবাস করে।

চারদিকে নদী বেষ্টিত এই ইউনিয়নটির জনগণকে প্রতি বছরই বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়। সম্প্রতি ব্যাপক নদী ভাঙনের ফলে ইতোমধ্যে প্রায় ৫০০(পাঁচশত) ঘরবাড়ি,শ্রীপুর বাজার,ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মহিলা মাদ্রাসা,একটি কওমী মাদ্রাসা,একটি দাখিল মাদ্রাসা,অসংখ্য মসজিদ, মন্দির, হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে।

এই নদী ভাঙন এর ফলে প্রায় ৩০০০(তিন হাজার) মানুষ গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গত ৩ বছর যাবত তেঁতুলিয়া নদী মারাত্মক ভাবে ভাঙছে। উল্লেখিত নদী ভাঙন বর্তমানে পূর্বের থেকে ভয়ংকর রূপ ধারন করেছে। জরুরী ভিত্তিতে এই নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে না পারলে ঐতিহ্যবাহী এই ইউনিয়নের পুরোটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় এবং জাতীয় একাধিক দৈনিক গনমাধ্যমেও এই আশঙ্কা পোষণ করে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে।

এর আগেও মানববন্ধন করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে জানানো হয়েছে কিন্তু তারা কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ৷ ভাঙন কবলিত মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। সাধারন মানুষ আর কত কষ্ট করবে? নদী ভাঙনে বাড়ি বিলীন হওয়ায় নতুন করে তোলা বাড়ি আবার নতুন করে ভাঙনের কবলে পড়েছে এমন উদাহরণ অসংখ্য। সাধারন মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে তাদের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের রোল মডেল৷ এর ছোঁয়া পড়েছে আমাদের নদী বেষ্টিত মেহেন্দিগঞ্জেও। কিন্তু নদী ভাঙন গ্রাস করে নিচ্ছে শ্রীপুর ইউনিয়নের মানুষের স্বপ্ন ও আশা। ধ্বংস হচ্ছে আপনার উন্নয়নের স্মারক বিভিন্ন স্থাপনা,ফসলি জমি, মানুষের ভিটে-মাটি।

এমতাবস্থায় অবিলম্বে শ্রীপুর ইউনিয়নকে চলমান নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।”



মোঃ লোকমান হোসেন, শিক্ষার্থী,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।



 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *