নবনিযুক্ত উপাচার্য নিয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা

নবনিযুক্ত উপাচার্য নিয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম কৃষি শিক্ষার আতুড়ঘর, একই সাথে হাজারো কৃষিবিদ তৈরীর সূতিকাগার। ১৯৩৮ সাল থেকে কৃষিবিদ তৈরীর গুরুদায়িত্ব পালন করে শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ মূলনীতিকে সামনে রেখে বাংলার আপামর কৃষকের দোরগোড়ায় কৃষির জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে পৌছিয়ে দেশের উত্তরোত্তর উন্নতিতে অনেকটাই অবদান রাখছে।

১৯৩৮ সাল থেকে ২০০০ সাল অবধি অবিভক্ত বাংলা, পাকিস্তান শাসনামল,বাংলাদেশ সৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে কৃষি শিক্ষার এই প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠটিরও নামের রদবদল ঘটে।সর্বশেষ ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপায়িত হয়। গত ১৭ ই নভেম্বর ২০২০ বিশ্ববিদ্যালয়টির ৭ম উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন ড.মোঃশহীদুর রশীদ ভূইয়া।

নবনিযুক্ত উপাচার্য নিয়ে শেকৃবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা জানাচ্ছেন “দি ক্যাম্পাস টুডে” এর শেকৃবি প্রতিনিধি মাজেদুল ইসলাম ।

ইমরান খান
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক
কৃষি অনুষদ -৭৬ ব্যাচ

“কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেশ ও সমাজের অগ্রগতিতে অবদান রাখা উজ্জ্বল সারথিদের প্রস্তুত করে চলেছে। প্রতিবছর এখান থেকে বের হচ্ছে মানসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট, যাঁরা দেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন এবং প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাখছে অসামান্য অবদান। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী কর্তৃক নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ও কৃষিতে নতুন মাত্রা প্রদানে অনেক ভূমিকা থাকলেও বর্তমানে গবেষণা ক্ষেত্রে তুলনায় যে পিছিয়ে পড়েছে, এটা অস্বীকার করার অবকাশ নেই।

রাজনৈতিক তেলবাজিতে সুবিধা গ্রহণ, ভালো মানের গবেষকদের কম মূল্যায়ন করার কারনে গবেষনায় আগ্রহ হারাচ্ছে উঠতি গবেষকগন। তবে নতুন ভিসি নিযুক্ত হওয়ায় অনেকেই দেখছেন আশার আলো। কথা ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মনে হচ্ছে অন্যান্যদের তুলনায় ভালো কিছু অবদান রেখে যাবেন। সবাই তো আশার বাণীই শোনায় কিন্তু চেয়ারে বসলে অনেকেরই এসব আর মনে থাকেনা।

আবার এসব স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়ণ করতে শত ঝড়-ঝাপটার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। স্যারের প্রতি প্রত্যাশা থাকবে সবার আগে সেশন জট কমানো, ব্যবহারিক শিক্ষা হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে ইন্টার্নির ব্যবস্থা করা, নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, এলাকাপ্রীতি ও দূর্নীতি মুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। প্রিয় এই ক্যাম্পাসে হাজারো স্বপ্নবানের ভিড় জমুক। স্বপ্ন জয় থেকে বিশ্বজয়ের গল্প বেরিয়ে আসুক।”



বিজয়া রানী বিশ্বাস
শিক্ষার্থী, মাস্টার্স, কৃষিতত্ব বিভাগ।
৭৪তম ব্যাচ,কৃষি অনুষদ

“অধ্যাপক ড.মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া স্যারের মত একজন জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত কৃষিবিজ্ঞানী ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে পেয়ে আনন্দিত।আশা করি তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান আরো সমৃদ্ধশালী হবে।যার পরিপ্রেক্ষিতে উপমহাদেশের সর্বপ্রাচীন বিদ্যাপীঠ শেকৃবি আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে কৃষি শিক্ষার সবচেয়ে আধুনিক ও অনুসরণীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে।

এছাড়াও তিনি এতদিন যেভাবে সফলতার সাথে কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ক বই ও প্রবন্ধ লিখে সবাইকে কৃষি বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন তা অনুপ্রেরণীয়।দায়িত্ব পালন করছেন শেকৃবি ডিবেটিং সোসাইটির মডারেটর,বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সভাপতিসহ নানা সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে।তাই আমরা আশাবাদী,তার হাত ধরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আরো সাফল্যের দেখা পাবে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।তবে সেইসাথে সেশন জট দূরীকরণ,শ্রেণীকক্ষ ও পরীক্ষা হলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা আশু প্রয়োজন।এছাড়াও উদ্ভূত মহামারী পরিস্থিতিতে সকল শিক্ষার্থীর জন্য অনলাইন ক্লাসের সুযোগ নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থীদের গবেষণার অচলাবস্থা নিরসন,হলের আবাসনব্যবস্থা আধুনিকীকরণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি।”



মওদুদ আহমেদ
৭৪ ব্যাচ
কৃষি- অর্থনীতি বিভাগ

“প্রায় তিন মাসের ব্যবধানে নতুন উপাচার্য পেলো শেকৃবি।স্যার একজন গুণী মানুষ,সেই হিসেবে আশা করবো স্যার ওনার দূরদৃষ্টি,প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় খাতে উন্নয়ন করবেন।।আমি ব্যক্তিগতভাবে চাইবো,বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কারিকুলাম টা যেন স্যারের সময়ে আর একবার রিভিউড হয়।কৃষি অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে কেন আমাকে মাছ/শাক-সবজি/পোকামাকড় এর বৈজ্ঞানিক নাম মুখস্থ করতে হবে???সব অনুষদ থেকে এরকম জোর করে চাপিয়ে দেওয়া অপ্রয়োজনীয় কোর্স গুলো থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।সেই সাথে ব্যবহারিক ক্লাস ও ক্লাসরুমের মানোন্নয়নের দিকেও দৃষ্টি অনুরোধ থাকবে।একজন দক্ষ প্রশাসক হওয়ার জন্য স্যারের জন্য শুভকামনা থাকলো।”



কাশফিয়া তারান্নুম
৭৫ ব্যাচ
এগ্রিবিজনেজ এন্ড ম্যানেজমেন্ট অনুষদ

“সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শেকৃবি-র ভিসি প্রফেসর ডঃ মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া স্যারকে অভিবাদন জানাচ্ছি। তিনি একজন আদর্শ এবং শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘসময় ধরে পরিচিত।এই লেখাটির মাধ্যমে তাঁর কাছে “সেশনজট” নিয়ে কিছু কথা তুলে ধরতে চাই। বরাবরের মতই সেশনজট শেকৃবির জন্য একটি ভয়াবহ ব্যাধির মত, যা প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরবর্তী কর্মজীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সিটি কুইজ না হওয়া, পরীক্ষাহলের ঘাটতি থাকায় ফাইনাল পরীক্ষায় সময়মত বসতে না পারা, ফলাফল সময়মত প্রকাশে ব্যর্থ হওয়া-সেশনজটের অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করি। তাই একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন, ফলাফল সময়মত প্রকাশ, পরীক্ষাহলের সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে সেশনজট অনেকাংশে কমিয়ে আনা যেতে পারে। শেষবর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার আশা থাকবে সম্মানিত ভিসি স্যারের হাত ধরে শেকৃবির ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীরা একটি “স্থায়ী সেশনজটমুক্ত” শেকৃবি উপহার পাবে এবং আমাদের প্রাণপ্রিয় বিদ্যাপীঠকে আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবেন।”



সিফাত রহমান
কৃষি অনুষদ -৭৭ ব্যাচ

“প্রথমত নবনিযুক্ত উপাচার্য মহোদয়কে অভিনন্দন জানাই আগামীর শেকৃবিকে ঢেলে সাজাবে এমনটাই আশা করছি।আমি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে সেশন জট মুক্ত সেমিস্টার ,অধিক ল্যাব ফ্যাসিলিটি,ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত গবেষণা ক্ষেত্র তৈরি, ক্লাস রুম বৃদ্ধি, বস্তি উচ্ছেদ, হল সিট বরাদ্দে শিক্ষার্থী তথা দলীয় চাটুকারদের হস্তক্ষেপ রহিত করা,সৌন্দর্য বর্ধন সহ বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ আশু গ্রহণ করবেন বলে উপাচার্য মহোদয়ের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। শেকৃবি যেন শুধুমাত্র দলীয় সরকারের লেজুরভিত্তিক রাজনীতির আতুরঘর না হয়ে সার্বজনীন সংগঠন করতে দেওয়ার উদার মানসিকতা এবং শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয় এবং একজন প্রকৃত মানুষ হওয়ার কারখানা হতে পারে।”



ফারজানা ফাতেমা
কৃষি অনুষদ -৭৮ ব্যাচ

“অধ্যাপক ড.মোঃ শহীদুর রশীদ স্যার এর মতো একজন মহানুভব শিক্ষক কে উপাচার্য হিসাবে পেয়ে আনন্দিত l আশা করব উনি সকল বাধা অতিক্রম করে আমাদের শেকৃবি কে আরো উন্নতমানের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলবেন -সেই সাথে সেশন জট কমানো ,হল এর যাবতীয় সমস্যা গুলো দূরীকরণ ,পরীক্ষা পিছানো বন্ধ করা , স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতি মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।কৃষি গ্রাজুয়েটদের দীর্ঘদিনের চাওয়া কৃষিতে ইন্টার্ণশিপের ব্যবস্হা করতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবেন।

এছাড়াও,দেশ সহ বিদেশী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগসূত্র ত্বরাণিত করে উচ্চ শিক্ষার জন্য শেকৃবি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের হার বৃদ্ধি করার চেস্টা করবেন।শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটো -learn to feed the nation এর বাস্তবিক প্রতিফলনে গবেষণা খাতের প্রচার ও প্রসারণে শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য হিসেবে শিক্ষার্থীদের বিজয় সারথী হিসবে অগ্রজের গুরুদায়িত্ব পালন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্তি করছি।স্যারের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment