নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমি কি বিলুপ্ত হয়ে যাবে
জাহিদ হোসাইন খান : বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করে ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। সম্প্রতি তারা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আটলান্টিক মহাসাগরে নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমির সংখ্যা বর্তমানে ৩৫০–এর কম।
এসব তিমির মধ্যে মাত্র ৭০টি প্রজননগতভাবে সক্রিয়। তাই তিমিগুলো শিকার করলেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমি।
বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমি সংকটে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এসব তিমি গভীর জলের মধ্য দিয়ে অনেক দূরে যেতে পারে। বসন্ত, গ্রীষ্ম আর শরত্কালে এসব তিমি নিউ ইংল্যান্ড আর উত্তরে কানাডীয় সাগরের দিকে চলে যায়। শরৎকালে এসব তিমি উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে দক্ষিণ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া ও উত্তর-পূর্ব ফ্লোরিডার অগভীর উপকূলীয় জলে চলে আসে।
ঘোরাঘুরির কারণেই বিপদে পড়েছে তিমিগুলো। এসব তিমির মাথায় রুক্ষ চামড়ার সাদা ছোপ দেখা যায়, যাকে বলা হয় ক্যালোসিটিস। প্রতিটি নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমির ক্যালোসিটির একটি অনন্য প্যাটার্ন রয়েছে। এই প্যাটার্ন দেখেই বিজ্ঞানীরা পৃথক তিমি শনাক্ত করতে পারেন। নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমি প্রাথমিকভাবে আটলান্টিক মহাসাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
১৮৫১ সালে প্রকাশিত মবি ডিক উপন্যাসটি অনেকেই পড়েছেন বা নাম শুনেছেন। হারম্যান মেলভিলের লেখা সেই উপন্যাসে ‘পিকোড’ নামের তিমি ধরার জাহাজের ক্যাপ্টেন আহাবসহ নাবিকদের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। সেই উপন্যাসের নাবিকদের মতোই বাস্তবে অনেক নাবিক তিমি শিকার করেন। এসব তিমি শিকারির কারণেই নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। বর্তমানে তিমি শিকার কমলেও আমাদের বেখেয়ালি আচরণের কারণে মারা পড়ছে অনেক তিমি।
কোনো এক অজানা কারণে ২০১৭ সাল থেকে নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমি অস্বাভাবিক মারা যাচ্ছে। জানা গেছে, গত ছয় বছরে ৩৬টি তিমি মারা গেছে। গুরুতর আঘাত পেয়েছে বা অসুস্থতায় ভুগছে আরও ৪৫টি তিমি। এর মধ্যে বেশির ভাগ স্ত্রী ও শিশু তিমি। ধারণা করা হচ্ছে, সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহত বা মৃত্যু হচ্ছে তিমিগুলোর। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো এক দশকের মধ্যেই নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি ২০ বছর বয়সী পুরুষ তিমি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিচে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেই ঘটনার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে উত্তর ক্যারোলিনার মোরহেড সিটির কাছে সদ্য জন্ম নেওয়া একটি তিমি মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। গত বছরের শেষের দিকে কানাডার নিউ ব্রান্সউইকের উপকূলে মাত্র দেড় বছর বয়সী আরেকটি তিমির দেহ পাওয়া গেছে।
নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমির লেজ প্রশস্ত, গভীর খাঁজযুক্ত আর মসৃণ। এদের পেটের পুরো অংশটাই কালো হয়। মাঝেমধ্যে সাদা ছোপ দেখা যায়। পেক্টোরাল ফ্লিপারগুলি তুলনামূলক ছোট, প্রশস্ত এবং প্যাডেল আকৃতির হয়ে থাকে। জন্মের সময়ই প্রায় ১৪ ফুট লম্বা হয়ে থাকে নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল।
নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমি ধীরগতিতে সমুদ্রে বিচরণ করে। তিমির তেল সংগ্রহের জন্য এই নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমি বেশি শিকার করা হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমির ওজন প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার পাউন্ড। লম্বায় ৫২ ফুট দৈর্ঘ্যের হয় একেকটি তিমি। একেকটি তিমি গড়ে ৭০ বছর বেঁচে থাকে। ল্যাব্রাডর সাগর ও জর্জিয়া ফ্লোরিডা অঞ্চলে এদের বেশি পাওয়া যায়। এই এলাকায় বেশি জাহাজ চলাচল করে বলে নর্থ আটলান্টিক রাইট হোয়েল প্রজাতির তিমি বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে।