নাসিমকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়ে মামলার শিকার শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক:সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম গত ১৩ জুন মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে ‘কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস’ দেয়ার অভিযোগ এনেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ার পর তাঁকে উদ্দেশ্য করে মাহির চৌধুরী নামের একজন শিক্ষার্থী তার ফেসবুক একাউন্টের একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লিখেন, “জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ছেলে তিনি। বাকি জাতীয় নেতাদের উত্তরসুরীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত তিনি। আওয়ামীলীগ যখন রাস্তায় মাইর খাইতো তখন সব জায়গায় এ লোককে দেখা যাইতো। রাজপথ কাপানো নেতাদের মধ্যে তিনি আছেন। আবার ২০০২ সালে দুদকের মামলা এবং ২০০৮ সালে তত্ত্ববধায়ক সরকারের ‘পকেট কাপানো’ নেতাদের মধ্যেও তিনি আছেন। ২০১৫ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়ও তিনি ছিলেন। এই লোক নিয়ে আসলে বলতে গেলে ব্যাঙ হয়ে যেতে হয়। কোন এক নেতা জানি একবার বলছিলো ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিছে’। মোহাম্মদ নাসিম ভালো থাকবেন ঐপারে!”

অভিযুক্ত মাহির চৌধুরী অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। তার বিরুদ্ধে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ এ মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গতকাল সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে নগরীর জালালাবাদ থানায় এ মামলা দায়ের করেন। জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অকিল উদ্দিন মামলা নথিভুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মামলা নম্বর-৫।

মামলার ব্যাপারে রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন বলেন, বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসার সাথে সাথেই তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। যখন বিষয়টা ফেসবুকে এসেছে তখন অনেকে তার উপর বিক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা বলেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। আমরা সেটাই করেছি। উপাচার্য স্যার e ব্যাপারে আমাদের সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

তবে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। তাদের ভাষ্যমতে যদি কোন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কারো জানমালের ক্ষতি করেন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিপন্থী কিছু করেন শুধুমাত্র তখনই বিশ্ববিদ্যালয় কোন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মাহিরের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ব্যঙ্গাত্মক। তবে তা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থী নয়। তবুও কেন এ মামলা করা হয়েছে এটা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনেক শিক্ষার্থী।

এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, সে একজন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে মান ক্ষুন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হওয়া মানে রাষ্ট্রের মান হানি হওয়া। তিনি আরও জানান,মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে। সে কিছুদিন আগে অনলাইন ক্লাস বর্জনের আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া পাওয়া যায়নি তার।

যদিও স্ট্যাটাসটি দেয়ার কিছুক্ষণ পর মাহির তার তার ফেসবুক ওয়াল থেকে এটি মুছে ফেলেন এবং এর জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমাও প্রার্থনা করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই স্ট্যাটাসটির চরম সমালোচনা করেছেন। তারা মাহিরের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন বলে জানা গিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *