পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

নুর নওশাদ, চবি প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চলমান ও জটের কারণে বিলম্বিত অনার্স-মাস্টার্সের পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন চবি শিক্ষার্থীরা।

গত ২২ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় ২৪ মে থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হবে এবং ১৭ মে থেকে হল খুলে দেয়া হবে।হল খোলার আগে শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা নিশ্চিত করা হবে।এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরই সব বিশ্ববিদ্যালয়কে পরীক্ষা নিতে হবে। চবি কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়,তারা শিক্ষা মন্ত্রণালায়ের সাথে একমত থাকবেন।প্রজ্ঞাপন হাতে পেলে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

কিন্তু প্রজ্ঞাপন হাতে না পাওয়ায় এখনো কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি চবি প্রাশাসন। এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি তাদের চলমান পরীক্ষাগুলো স্থগিত না করে যেন নিয়ে নেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চবির ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের ৩য় বর্ষ পরীক্ষা হওয়ার কথা ২০১৯ সালে কিন্তু সেই পরীক্ষা আমরা ২০২১-এ এসেও দিতে পারছি না।২০২০ সালে জানুয়ারি মাসে পরীক্ষা হবে বলা হয়েছিল কিন্তু সেই পরীক্ষা মার্চ মাসে নিয়ে যাওয়া হয়।এরপর কোভিড ১৯-এর কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়।পরবর্তীতে আমরা রুটিন পাই কিছুদিন আগে।রুটিন অনুযায়ী আমাদের ৪ঠা মার্চ থেকে পরীক্ষা শুরু।কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকে আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছি পরীক্ষা হবে কি হবে না।ইতোমধ্যে আমাদের জীবনের ২টা বছর নষ্ট হয়ে গেছে।এমতাবস্থায় যদি পরীক্ষা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরো পেছানো হয় তাহলে আমরা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হব।’’

চবি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল্লাহ কায়সার বলেন, “স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত তাদের নিজস্ব ক্ষমতায় পরীক্ষা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ছাত্রদেরকে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দেয়া।এটা হলো স্বায়ত্তশাসনের নিজস্ব অধিকার।’’

চবি বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম সবুজ বলেন, “পরীক্ষা না আমরা দীর্ঘ সেশনজটে পড়ে যাবো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত চলমান পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন, শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তায় না রেখে যেন দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।’’

চবি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় সাহা বলেন, “পরীক্ষার গ্রহণে সিদ্ধান্ত নিয়ে হঠাত পরীক্ষা না নিলে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ।স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রশাসনের উচিত হবে চলমান পরীক্ষাগুলো চালিয়ে যাওয়া।’’

না প্রকাশ না করে চবি আইইআর বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “দীর্ঘ অনেকদিন সেশন জটে থাকার পর আমরা কয়েকদফা আন্দোলন করে পরীক্ষায় বসি।এখন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের জন্য আমরা অনিশ্চয়তায় পড়ে যাচ্ছি।প্রশাসন যেন আমাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে সহানুভূতিশীল হয়।’’

এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে ২দফা দাবি নিয়ে আগামিকাল(বৃহস্পতিবার) দুপুরে মানববন্ধন করবে চবি শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলন নিয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি কানন বলেন, “চবির পরীক্ষা স্থগিত না করতে এবং শাটল ট্রেন চালু না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালুর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন করা হবে।”

আন্দোলনের ডাক দেওয়া অর্থনীতি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী দেওয়ান তাহমিদ বলেন, “করোনার কারণে দীর্ঘ সেশনজটে পড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা যেখানে অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত, পরীক্ষা স্থগিত করা হলে তাদের হতাশা আরো বাড়বে। আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করবো “স্বায়ত্তশাসন” শব্দটির মান রেখে পরীক্ষাগুলো চলমান রাখতে ও শিক্ষার্থীদের আনুষাঙ্গিক প্রয়োজনগুলোর দিকে নজর দিতে।’’

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment