পানির অপচয় ও দূষণ

পানির অপচয় ও দূষণ

মানুষ প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতির নানা উপাদানের উপর নির্ভর করে মানুষ জীবন ধারণ করে। সেসব উপাদানের মধ্যে অন্যতম হলো পানি। পানি ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব না। তাই তো পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু পৃথিবীতে আজ মিঠা পানির চরম সংকট। এর জন্য দায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন, পানির অপচয়, দূষণ ইত্যাদি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর সমগ্র মিঠাপানির অর্ধেকের বেশি ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এভাবে চললে ২০২৫ সাল নাগাদ বাকি যা আছে তাও শেষ হয়ে যাবে। আর ভূগর্ভস্থ পানি যে হারে উত্তোলন করা হচ্ছে সেই হারে পূরণ হচ্ছে না। কারণ বৃষ্টির পানি ভূমিতে পড়লে তা ঘাস, মাটি ও গাছের শিকড়ের মাধ্যমে পরিশোধিত হয়ে ভূগর্ভস্থ পানি জমা হয়। কিন্তু নগরায়নের ফলে খোলা মাটির বেশ অভাব। সেইসঙ্গে আশঙ্কাজনক হারে কমছে গাছ। বাড়ছে কংক্রিটের দালান ও পিচের রাস্তা। ফলে বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে পৌঁছানোর সুযোগ পাচ্ছে না।

এবার আসা যাক দূষণের কথায়। শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত পানি পরিশোধন না-করেই সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদী কিংবা খালে-বিলে। ফলে দূষিত হচ্ছে সেসব জলাশয়। কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হচ্ছে নানান রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। সেসব রাসায়নিক সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদী ও অন্যান্য জলাশয়ে মিশছে। ফলে দূষিত হচ্ছে পানি। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। মিঠাপানির সংকটের বর্তমান রূপ বোঝাতে দুটি শহরের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। একটি হচ্ছে ইয়েমেনের রাজধানী সানা আর অন্যটি পাকিস্তানের শহর কোয়েটা। সানার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ছয় মিটার নেমে যাচ্ছে। একই রকম ঝুঁকিতে আছে পাকিস্তানের প্রদেশ বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা। শহরটি তৈরি হয়েছিল পঞ্চাশ হাজার লোকের জন্য। কিন্তু সেখানে এখন বাস করে দশ লাখেরও বেশি মানুষ। ফলে সেখানে দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।

ঢাকা শহরের অবস্থাও ঠিক তেমনি। অতিরিক্ত জনসংখ্যার পানির চাহিদা মেটাতে ও পানির অপচয় ও দূষণের ফলে দিন দিন নিঃশেষ হচ্ছে মিঠা পানির আধার। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে মাটি ও পানির স্তরের মাঝে খালি জায়গা তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন এর কারণে এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে সামান্য ভূমিকম্পেই দেবে যেতে পারে আমাদের প্রাণের এই শহর। পানিদূষণ আজ কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা গোষ্ঠীবিশেষের সমস্যা নয়। এই সমস্যা সমস্ত পৃথিবীর। তাই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে।

নিজ নিজ অবস্থান থেকে পানিদূষণ রোধ এবং পানির পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পৃথিবীর প্রত্যেকটি ধর্ম মানুষকে পানি ব্যবহারে সচেতন ও মিতব্যয়ী হওয়ার কথা বলেছে। পানির সুষম বণ্টনের কথা বলা হয়েছে মানুষসহ সকল উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মধ্যে। তাই আসুন, পানি ব্যবহারে সচেতন হই এখনই। পরবর্তী প্রজন্মের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে পানিসহ সব প্রাকৃতিক সম্পদ অপচয় রোধ করি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *