পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ শতাংশ শিক্ষকই ছুটিতে, বেড়েছে খন্ডকালীন ও চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষক

ইউজিসি UGC

টিসিটি টুডে

দেশের ৪৩ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ১৫ হাজার ২৯৩ জন। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ২৭ জন অন্তত ৫ ধরনের ছুটিতে আছেন। এটা মোট শিক্ষকের ২৬ শতাংশের বেশি। ১ বছরের মধ্যে এ হার বেড়েছে প্রায় আড়াই শতাংশ। আর গত ৩ বছরে ছুটি নেয়ার হার মোট বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ।

গত সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয় ইউজিসির সর্বশেষ (২০১৯ সালের) বার্ষিক প্রতিবেদন।আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তিনটি বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ২৭ শিক্ষক অন্তত ৫ ধরনের ছুটিতে ছিলেন। এসব শিক্ষকের মধ্যে ২২৬৪ জন আছেন শিক্ষা ছুটিতে। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ২১৩৩। প্রেষণ বা লিয়েন নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে প্রতিবেদনের বছরে আছেন ৭৮ জন। আগের বছরের চেয়ে এ ক্ষেত্রে সংখ্যা বেড়েছে ৮ জন। এছাড়া বিনা বেতনে ছুটিতে আছেন ৬৫ জন আর ছুটি শেষ হওয়ার পরও অননুমোদিতভাবে বিদেশে অবস্থান করছেন ১৩ জন। এ সংখ্যা গত বছর ছিল যথাক্রমে ৭০ জন ও ২৫ জন। খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন ১৬১৯ জন। এবছরে এ সংখ্যা বেড়েছে ৫২২ জন। গত বছর এ ছুটিতে ছিলেন ১০৯৭ জন। ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী মোট শিক্ষকের ২৪ শতাংশই ছিলেন ছুটিতে।

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জানা যায় , বড় কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে শিক্ষক সংকট। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষকের সংকট বেশি। বিজ্ঞপ্তি দিয়েও ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে জুনিয়র শিক্ষক দিয়েই চলছে সেখানকার লেখাপড়া। এর মধ্যে আবার শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের ছুটিতে যাওয়ায় লেখাপড়া ও গবেষণার ওপর প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র মতে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এনজিও ব্যবসা, বিদেশি সংস্থায় পরামর্শকসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজ করছেন আরও ৫ শতাধিক। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা করছেন ৪ হাজার ২০৯ জন। সাধারণত এসব শিক্ষকের বেশিরভাগই কোনো রকমে ক্লাস নিয়ে ক্যাম্পাসে বাইরে ছুটে যান। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে পেশ করা ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৭টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ শতাংশ শিক্ষকই আছেন শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৯৪০ শিক্ষক অন্তত ৫ ধরনের ছুটিতে ছিলেন। এর মধ্যে ২১০১ জন শিক্ষাছুটিতে, প্রেষণ বা লিয়েনে ৮৪ জন, বিনা বেতনে ছুটিতে আছেন ৫৮ জন, অননুমোদিত ছুটিতে ১৭ জন এবং খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়েছেন ৬৮০ জন।

এদিকে খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকের ব্যাপারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউজিসিকে দেয়া তথ্যের সঙ্গে মিল নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরবরাহকৃত তথ্যে।

ইউজিসির উল্লিখিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ২০৯ শিক্ষক খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। তাদের মধ্যে ১৩০৮ জনই অধ্যাপক। এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক ৬০৩ জন, ৭৪৩ জন সহকারী অধ্যাপক এবং ১৩২৮ জন প্রভাষক। অন্যান্য ধরনের খণ্ডকালীন শিক্ষক আছেন ২২৭ জন। সংশ্লিষ্টরা জানান, খণ্ডকালীন শিক্ষকের বেশিরভাগই বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাড়া করা। অথচ ইউজিসির প্রতিবেদনে এ সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১০৯৭ জন। গত বছর বা ২০১৮ সালে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৪ হাজার ১৪৫ শিক্ষক ছিলেন খণ্ডকালীন।
তবে বিগত ৩ বছরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা কমেছে। ২০১৭ সালে ৯০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৭৩৩ শিক্ষক খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। তাদের মধ্যে ১৬০৬ জনই অধ্যাপক। এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক ৭৫৮ জন, ৯১৯ জন সহকারী অধ্যাপক এবং ১৪৫০ জন প্রভাষক।

জানা গেছে, প্রায় এক দশক আগে উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প (হেকেপ) গ্রহণকালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরি করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যাপারে একটি ডাটাবেজ তৈরির কথা ছিল। তাতে একজন শিক্ষক কতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন সেই তথ্য বের করার কথা ছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেই কাক্সিক্ষত সফটওয়্যারই তৈরি করা হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি শেষ হয়ে গেছে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার বিষয়টি সবচেয়ে রমরমা। ঢাকার বাইরে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। এ সুযোগের অপব্যবহার করে থাকেন অনেকে। যদিও করোনাকালে খণ্ডকালীন শিক্ষকতার বাজার মন্দা নেমে এসেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা আর ছুটি অনেকটা সমর্থক হিসাবে ধরা যায়। তবে এ ছুটিটা হচ্ছে গবেষণা বা উচ্চশিক্ষার ছুটি। এতে শিক্ষকের জ্ঞানের পরিধি বাড়ে। কিন্তু সমস্যা হয় যখন ভারসাম্য রক্ষা করে ছুটি মঞ্জুর করা না হয়। এখন একটি বিভাগ যদি একই বছরে তিন শিক্ষককে ছুটি দেন তাহলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ছুটির বিপরীতে নিয়োগের বিধান আছে। বিভাগে পদ থাকলে নিয়োগ করা যায়।

তিনি বলেন, আরেকটা সমস্যা হচ্ছে- উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া কেউ কেউ সময়মতো ফিরতে পারেন না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অধ্যাদেশে নির্দেশিত পন্থায় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এছাড়া শিক্ষকরা আরও কিছু ছুটি নিয়ে থাকেন। এরমধ্যে লিয়েন, প্রেষণ ইত্যাদি আছে। তবে জাতীয় প্রয়োজনে লিয়েনসহ অন্যান্য ছুটি নিয়ে শিক্ষকরা বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হন। ঢাকার বাইরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংকট আছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে সিনিয়র শিক্ষকের সংকট পূরণে উদ্যোগ নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment