পেনশনের নীতিমালা করতেই ব্যয় সাড়ে ৭ লাখ টাকা

বাংলাদেশের ১৫৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বশেমুরবিপ্রবি প্রথম!

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা,কর্মচারীদের পেনশন ও ভবিষ্যত তহবিল নীতিমালা সংশোধন এবং অনুমোদনের জন্য সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার ব্যয় দেখানো হয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)। এমনকি রিজেন্ট বোর্ড এবং অর্থ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই এই সম্পূর্ণ অর্থ অগ্রীম প্রদান করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বশেমুরবিপ্রবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং পেনশন ও ভবিষ্যত তহবিল নীতিমালা কমিটির সদস্য সচিব গোলাম হায়দারকে এই অর্থ প্রদান করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে ২০২০ সালের ২ জানুয়ারির অর্থ প্রাপ্তির আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, “নীতিমালা সংশোধন, সারসংক্ষেপ তৈরি এবং নীতিমালা দুইটি অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এর অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবসহ তাদের দপ্তরের কর্মকতা ও কর্মচারীবৃন্দ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। মন্ত্রনালয়ের নিয়মানুযায়ী এর সাথে কাজ করার জন্য মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবসহ তাদের দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির সদস্য বৃন্দ তাদের প্রাপ্ত বেতনের বেসিক অনুযায়ী একটি করে বেসিক সম্মানী হিসেবে পাওয়ার দাবীদার।”

অনিশ্চিত হয়ে গেল ২ হাজার ৫০০ শিক্ষক নিয়োগ

আন্তর্জাতিক দ্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেলেন খুবি ছাত্র ইউসুফ

আবেদনপত্রে এই হিসেবে অনুযায়ী আনুষঙ্গিক খরচসহ মোট সাত লাখ টাকার নথি পেশ করা হয়। নথিতে দেখা যায় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, একজন যুগ্ম সচিব এবং সাতজন কর্মকর্তা কর্মচারীসহ মোট নয়জনকে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩০ টাকা প্রদান করার তালিকা দেয়া হয়েছে।

এদের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো: আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীকে ৭৬,৪৯০ টাকা, যুগ্মসচিব (বৃত্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা) সৈয়দ আলী রেজাকে ৬৩,৫৭০ টাকা, বৃত্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: আবুল কালাম আজাদকে ২০,৪৪০ টাকা, কম্পিউটার অপারেটর হামিদা মুক্তিকে ১২,৭৪০ টাকা, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক চায়না আক্তারকে ১১,৩২০ টাকা, অফিস সহায়ক জান্নাতুল ফেরদৌসকে ১৫,৯৬০ টাকা, অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) এর দপ্তরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলামকে ৩৪,০১০ টাকা এবং অফিস সহায়ক মো: আসাদকে ১৩,৯০০ টাকা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আবেদনপত্র অনুযায়ী২০২০ সালের ০২ জানুয়ারি ভর্তি কোর কমিটির ৬ জন সদস্যের অনুমোদন সাপেক্ষে তৎকালীন উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি তহবিল থেকে বর্ণিত ব্যয়ভার বহনের জন্য অনুমোদন করেন। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির অনুমোদন নেয়া হয়নি এবং অর্থ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস.এম গোলাম হায়দারকে একইদিনে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা অগ্রীম প্রদান করা হয়।

এ বিষয়ে পেনশন ও ভবিষ্যত তহবিল কমিটির সদস্য সচিব এস এম গোলাম হায়দার বলেন, “কমিটির সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাকাটা আমার নামে দেয়া হয়েছিলো। তবে তালিকায় উল্লেখিত শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং যুগ্ম সচিবকে এখনও কোনো টাকা দেয়া হয় নি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা কমিটিতে ছিলেন তাদের মধ্যে ৩-৪ জন ছাড়া আর কেউ এখনও টাকা গ্রহণ করেন নি।”

এসময় তিনি আরও বলেন, “আমরা এখনও অর্থ সমন্বয় করিনি, এর মধ্যে কেউ টাকা ফেরতও দিতে পারে।”

তবে এস এম গোলাম হায়দার কমিটির সকলের সিদ্ধান্তে অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে দাবি করলেও এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত জানিয়েছেন কমিটির সদস্য এবং মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি তাপস বালা। তিনি বলেন, “অর্থ উত্তোলন করা হবে এ বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয় নি, এমনকি এ বিষয়ে অর্থ উত্তোলনের পূর্বে কোনো মিটিংয়েও আমাকে ডাকা হয় নি।”

এ বিষয়ে তৎকালীন উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) এবং পেনশন ও ভবিষ্যত তহবিল কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. মো: শাহজাহান বলেন, “টাকাটা অগ্রীম তোলা হয়েছিলো এবং পরবর্তীতে সমন্বয় করার কথা ছিলো। এছাড়া কথা ছিলো অর্থ কমিটির অনুমোদন পেলে টাকাটা বিতরণ করা হবে।” তবে আবেদনপত্রে অর্থ কমিটির অনুমোদনের শর্ত সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, “কোনো কমিটি গঠন করা হলে কমিটির মিটিং আয়োজনের জন্য কিছু পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয় তবে সেই অর্থের পরিমাণ এত বড় অংকের হয় না। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে নীতিমালা তৈরি এবং অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের একটি সম্মানি দেয়া হয়। তবে সেটি অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী রিজেন্ট বোর্ড, অর্থ কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। এখানে যে কারণ দেখিয়ে যে পদ্ধতিতে অর্থ নেয়া হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত।”

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. এ.কিউ.এম মাহবুব বলেন, “আমি বিষয়টা সম্পর্কে ইতোমধ্যে জেনেছি। এখানে কিছু নিয়মের ব্যতয় ঘটেছে। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment