প্রাক্তনের বাড়ির সামনে একদিন

সত্যব্রত বিশ্বাস বাপ্পি


প্রাক্তন প্রেমিকার এলাকায় গেছি।আমার ইচ্ছা করছে কোন কারণ ছাড়াই তার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। দোকান থেকে কয়েকটা বেনসন সিগারেট কিনে ওদের গেটের বিপরীতে দাঁড়িয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে সিগারেট টানছি।

মিনিট পাচেক পর দাড়িতে রঙ করা একজন মুরুব্বি গেট থেকে বের হয়ে সোজা আমার দিকে হেটে আসলেন। এসেই প্রশ্ন ছুড়লেন, “এই ছেলে, তুমি আমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এভাবে সিগারেট টানছ কেন?এটা তো নিশ্চয়ই কোন টংয়ের দোকান নয়।”

–আঙ্কেল, আপনিও একটা ধরান না। দিব?

শুনা মাত্র তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন।রীতিমত রেগে গিয়ে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠে বললেন,” চুপ কর বেয়াদব। আর একটা উল্টাপাল্টা কথা বললে এলাকার ছেলে দিয়ে তোমাকে পিটাবো।”

–সেটা তো আপনি পারবেন না। ওই যে ক্যামেরা হাতে যে ছেলেটা দেখছেন সে আমার বন্ধু এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক। আপনার নামে এটেমড টু মার্ডার কেইস হলে কি আপনার চাকুরী থাকবে?

এবারে একটু থমকে গেলেন। অনেকটা অনুরোধের ভঙিতে আমতাআমতা করে বললেন, “এই সাত সকালে তুমি আমার পেছনে কেন উঠেপড়ে লাগলে?কে তুমি বাবা?”

–আমি আপনার মেয়ের প্রাক্তন প্রেমিক।

চেহারা দেখে মনে হল আমার কথায় তার হাসি পেয়েছে।হ্যায় এ কি! সত্যিই তো মুচকি হাসি দিয়ে চোখ টিপে বললেন,”তার তো বিয়ে হয়ে গেছে একবছর হল। তুমি এখন এসে এই সব জ্বালাতন শুরু করছ কেন?”

–বিয়ের এক বছর আগে সে আমার সাথে ব্রেকাপ করছিল।তারপর একটা লম্বা সময় ধরে স্লিপিং পিল,সিগারেট, ড্রাগ নেওয়া লাগছিল আমার।আমি সেই পাওনা টাকা নিতে এসেছি।

এতক্ষন অবধি যা আচ করেছিলেন তাই এবারে স্ট্রেট ফরওয়ার্ড বলেই দিলেন, “তুমি কি ভুলভাল কিছু খাইছ বাবা?

–সকাল থেকে কিছুই খাইনি।আপনার স্ত্রী বিরিয়ানি রান্না করলে আমার খেতে আপত্তি নেই।

এবারে চলে আসলেন তুই তে। ঠিক মেয়ের মত স্বভাব।কখনো তুই কখন ও তুমি কখনও আপনি।”তোরে ঘর পর্যন্ত নিচ্ছে কে শুনি?”

–কেন আপনি,আন্টি। টানা দুই বছর আপনাদের শ্বশুর -শাশুড়ী কল্পনা করেছি, একটু খেদমত তো আশা করতে পারি।

–আমার বিরক্তির সীমা অতিক্রম না করে তুমি বলো কি জন্য এসেছ?
–আঙ্কেল একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে।
—দ্রুত প্রশ্ন করে বিদায় হও।
–বলছি ব্রেকাপ না হলে আমাকে কি জামাই হিসাবে মেনে নিতেন?নাকি বাংলা সিনেমার চৌধুরী সাহেবের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মেয়েকে ভুলে যাওয়ার অফার দিতেন?
–তোমার মত রাস্কেলের সাথে মরে গেলেও মেয়ে বিয়ে দিতাম না।
–তাহলে তো টাকা পয়সা কিছু পাচ্ছি।কি বলেন?

কথাটা শুনে জবাব না দিয়ে গেট দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলেন।যাক বাবা প্লান কাজে দিয়েছে কিছু টাকা পয়শা পাওয়া যাচ্ছে তাহলে। এরে আল্লাহ, এ কি!
গেটের ওপাশ থেকে মুরুব্বি মুগুর টাইপ কি একটা নিয়ে ধেয়ে আসছে।লজ্জা শরম ফেলে পালানো উত্তম।

 

সত্যব্রত বিশ্বাস বাপ্পি, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Scroll to Top