পড়তে পড়তে ক্যারিয়ার, নাকি পড়াশোনা শেষে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা

এম এইচ কে হৃদয়


“পড়াশোনা শেষ করে তারপর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা যাবে”এম এইচ কে হৃদয় এই ভাবনা টা কে একদমই সমর্থন করেন না। বরং একজন নিজেকে ভবিষ্যতে ঠিক কোন পর্যায়ে দেখতে চায় তা মাথায় রেখে ছাত্র অবস্থা থেকেই কাজ শুরু করে দেওয়া উচিত এমনটাই উনি সমর্থন করেন।

আর এই ভাবনা থেকেই উনি তৈরি করেছেন উনার ভবিষ্যত পরিকল্পনার একটি খসড়া।আর সেই খসড়ার একটা গুছানো রুপ দেওয়ার নিমিত্তেই তিনি এখন অনলাইন বিজনেস কনটিনিউ করছেন। আর বর্তমান সময়ে অনলাইন সেক্টর অনেক এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ভবিষ্যৎ আছে। যা আমরা করোনা পরিস্থিতি মধ্যেও দেখতে পাচ্ছি।

উনি মূলত বিভিন্ন ইভেন্ট যেমন ট্যুর, সভা-সমাবেশ ইত্যাদি প্রোগ্রাম কে বর্ণময় করে তোলার জন্য টি-শার্ট সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। টি-শার্ট এর পাশাপাশি তিনি হুডি,ক্যাপ,আইডি কার্ড, জার্সি সরবরাহের কাজও করেন।

এ ছাড়াও তিনি প্রতিবছর রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনলাইন ভিত্তিক আম নিয়ে কাজ করেন। যে ফেসবুক পেইজ টি Mango Point নামে পরিচিত। যেহেতু তিনি রাজশাহী থাকেন, আর রাজশাহীর আম দেশের সব স্থানে আলাদা ডিমান্ড সে দিক চিন্তা করে তিনি বিভিন্ন আম বাগান মালিকদের সাথে ভালো সম্পর্ক করেন এবং তাদের কাছ থেকে আম নিয়ে সারাদেশে অনলাইন ভিত্তিক আম পাঠাচ্ছেন সফলতার সাথেই।

উনি স্বাধীনচেতা। তাই উনি নিজের মতো করে কাজ করতে পছন্দ করেন যেখানে কারো তদারকি, খবরদারি থাকবে না। তার এই প্রকৃতিগত স্বভারের জন্যই বিজনেস এর প্রতি তার দূর্বলতা ছিলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই তিনি চেষ্টা করছিলেন নিজে কিছু করবেন । আর যেহেতু বিজনেসের প্রতি দূর্বলতা ছিলো তাই তিনি বিজনেস টা কেই বেছে নিলেন।
উনার কাছে পুঁজি ছিলো না বললেই চলে ! কিন্তু যা ছিলো তা পুঁজির থেকেও বেশি কিছু
আর তা হলো তার টেকনিক্যালি মাথা খাটিয়ে কাজ করার ক্ষমতা এবং কাজের প্রতি শতভাগ আন্তরিকতা!

প্রথমে তিনি অন্যান্য উদ্যোক্তাদের পাশে থেকে দেখেছেন, কাজ শিখেছেন, কাজে মনোনিবেশ করেছেন,তারপর তিনি নিজে কিছু করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তিনি বলেন, পরিকল্পনা মাফিক পরিশ্রম করলে যে কেউ সফল হতে পারবে।

এইভাবে কিছুদিন কাজ করার পর অর্জিত অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে ভাবলেন নিজেই অনলাইন সেক্টর এর সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য তিনি ফেসবুক পেইজ ওপেন করলেন। সেখানে তিনি সময় দিলেন, দেশের বড় বড় পেইজ গুলো থেকে অভিজ্ঞতা নিয়েছেন।

যেহেতু উনার বিজনেসের প্রধান কাস্টমার হচ্ছেন বিভিন্ন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তাই তিনি ফেসবুক পেইজের নাম দিলেন- Campus Fashion -ক্যাম্পাস ফ্যাশন। পেইজ খুলার পর উনার পাবলিসিটি আরো বেড়ে গেলো!

তখন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রোগ্রামের টি-শার্ট সরবরাহের কাজ টা তিনি খুব আন্তরিকতার সাথে করছিলেন।বলতে গেলে উনি তখন তার দিনের বেশিরভাগ টাইম এই Campus Fashion-ক্যাম্পাস ফ্যাশন এর পিছনে ব্যয় করতেন।

কিভাবে বিজনেসের পরিধি আরোও বাড়ানো যায়, কাস্টমার দের চাহিদা অনুযায়ী ঠিক সময়ে কি করে প্রোডাক্ট সরবরাহ করা যায়, কিভাবে পেইজ টা কে আরো অর্গানাইজড করা যায় ইত্যাদি। বস্তুত এইসবই ছিলো তখন তার অন্যতম কাজ।

সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে তিনি তার কাজের সঠিক মূল্যায়ন পেয়েছেন।তার পেইজ দেখলেই তার এই মূল্যায়নের স্বরুপ পাওয়া যায়।বর্তমানে তার এই বিজনেসের পরিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিস্তৃত।

শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রাম না এছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় আচার- অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশে টি-শার্ট,ক্যাপ,আইডি কার্ড সরবরাহের কাজ অত্যন্ত সফলতার সাথেই করে যাচ্ছেন।

টি-শার্ট তৈরি এবং প্রিন্টিং এর কাজ করা হয় রাজধানী শহর ঢাকা থেকে তিনি এবং আরও কজন উদ্যোক্তা মিলে করেছেন প্রিন্টিং কারখানা। যেসব কারখানা থেকে তিনি টিশার্ট তৈরি করেন এসব কারখানা পরিদর্শন করে তিনি এখন তার এই বিজনেস টা নিয়ে আরোও অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন….

এখন উনি স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতে তিনি নিজেই একটি পোশাক কারখানা দিবেন যেখানে তিনি নিজের পছন্দ মতো ডিজাইন দিয়ে ইউনিক ডিজাইনের পোশাক তৈরি করবেন যেসব পোশাকের চাহিদা থাকবে দেশের সীমানা পেরিয়ে দেশের বাইরেও!

উনি বিশ্বাস করেন কোনো মানুষ সবক্ষেত্রে সমান দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে না কিন্তু প্রত্যেকেরই এই এমন একটা ক্ষেত্র থাকে যে ক্ষেত্রটার প্রতি তার ভালোলাগা কাজ করে। আর সেই ভালো লাগা থেকে যদি কাজ শুরু করে দেয় তাহলে এই কাজই একদিন তাকে সফলতার পথ দেখাবে!


লেখকঃ শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় । 

Scroll to Top