বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে রোপিত প্রতিটি বৃক্ষ যেনো হয় ফলের গাছ

মামুনুল ইসলাম রনি:

জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী শতলক্ষ (এক কোটি) গাছের চারা রোপন করা হবে। আমরা এই উদ্যোগকে আন্তরিক অভিবাদন জানাই।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের এই পথ ধরে বাংলাদেশ আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার পথে বর্তমান প্রজন্মের দায়িত্বের অংশ হিসেবে বৃক্ষ রোপন হতে পারে একটি দীর্ঘমেয়াদে সুফল প্রদানকারী কর্মপ্রক্রিয়া। কিন্তু আমাদের দীর্ঘদিনের মাঠকর্মের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি বৃক্ষ রোপন প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীতার অংশ হয়েও কখনো কখনো এই বৃক্ষ রোপনই ডেকে আনতে পারে দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভোগ।

যদি বৃক্ষের সঠিক প্রজাতি নির্বাচনে ভুল করা হয় তাহলে এই মহৎ কাজটিই হয়ে উঠতে পারে পরিবেশ-প্রকৃতি-অর্থ-পুষ্টি ও বাস্তুসংস্থানের জন্য বিপর্যয়কর সিদ্ধান্ত। বেশ কিছু অতিমাত্রায় রোপিত বৃক্ষ (যেগুলো মূলত বিদেশী সাহায্য সংস্থার পরামর্শে শুরু করা হয়েছিল) আমাদের পরিচিত বাস্তুসংস্থান এবং হাজার বছর ধরে পুষ্টি-অর্থের নির্ভরযোগ্য উৎসগুলো ধ্বংস করে দেয়ার পেছনে ভূমিকা রাখছে। এগুলো হলো রাক্ষুসে প্রজাতির রেইন ট্রি, অতিমাত্রায় পানি শোষণকারী এবং পাতায় পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থের উপস্থিতির কারণে অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনাময় ইউক্যালিপ্টাস, অতিমাত্রায় রোপিত উপকারী অনুজীব ধ্বংসকারী মেহগনি, এবং এলার্জির অন্যতম অনুঘটক উৎপাদনকারী একাশিয়া।

উল্লেখিত চার প্রজাতির বৃক্ষ আমাদের দেশের সর্বত্র দেশীয় ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষের জায়গায় প্রতিস্থাপিত হয়ে দেশের বিপুল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বিচারে এসব বৃক্ষরোপনের ফলে দেশের পাখি-পতঙ্গ, ফসল এবং জন-মানুষ অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে। আমাদে অতি উর্বব মাটি ব্যাপক আকারে হারাচ্ছে উৎপাদন ক্ষমতা। বিপুল পরিমাণে অপরিচিত বায়োমের বৃক্ষ আমাদের হাজার হাজার বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে প্রস্তুত পরিবেশকে এবং এর উপর নির্ভরশীল প্রাণ-প্রকৃতিকে ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে যেতে বাধ্য করছে। আমাদের পাখি বাস্তুচ্যুত হয়েছে ফলত কীটনাশক আমদানিতে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে, আমাদের জমি উর্বরতা হারাচ্ছে ফলত আমাদের ফসলের জন্য ক্ষতিকর মাত্রায় সার ব্যবহার করে জমির ভবিষ্যত ফলনশীলতাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। সার-বীজ-কীটনাশকের আমদানি ও ক্ষতিকর ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের স্বাস্থ্য ও অর্থের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

প্রাকৃতিকভাবে উর্বব জমির অধিকারি কৃষি প্রধান দেশ হয়েও আমাদের আমদানী করতে হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার ফল। আমদানিকৃত ফলকে দীর্ঘদিন সতেজ রাখার জন্য মেশানো হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকর ক্যামিকেল, এসব ক্যামিকেলযুক্ত দূষিত খাবারের কারণে আমাদের চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত। এমন বহুবিধ ক্ষতির শিকার হওয়া থেকে জাতিকে বাঁচানো সম্ভব পরিকাল্পতভাবে সারাদেশে ফলের গাছ রোপনের মাধ্যমে।

তাই আমাদের অনুরোধ বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে রোপিত প্রতিটি বৃক্ষ যেনো হয় ফলের গাছ। আগামী পাঁচ বছর পরে যেনো বাংলাদেশ ফল রপ্তানীকারক দেশের অন্যতম একটি দেশে পরিণত হয়। এই গাছগুলো যখন বড় হবে তখন বাংলাদেশ যেনো একটি পুষ্টি, অর্থ ও প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি দেশে পরিণত হয়। মানুষ যেনো হয় সুস্বাস্থ্যের অধিকারি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর ফল যেনো আমরা আরা শতবর্ষ ধরে পেতে থাকি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেনো একটি রসালো ফলের আস্বাদ নিতে নিতে বলতে পারে এই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর অবদান।

বনমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ‘আগামী ১৬ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৯২টি উপজেলার প্রতিটিতে ২০ হাজার ৩২৫টি করে গাছের চারা রোপন করা হবে। দেশীয় ফলদ, বনজ ও ঔষুধি গাছের চারা রোপনের এ কর্মসূচীর পঞ্চাশ শতাংশের বেশি থাকবে ফলদ গাছ।’

ফলদ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমাদের অনুরোধ অন্তত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শতভাগ ফলের গাছ লাগানো হোক। দেশীয় প্রজাতির অন্তত দেড়শত জাতের ফলের গাছ আমাদের দেশে আছে। এদের অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে, অনেক দেশীয় ফলের নাম বর্তমান প্রজন্ম শোনেওনি। এই ফলের প্রজাতিগুলো রক্ষার প্রয়োজনে, আমাদের পুষ্টি ঘাটতি পুরণের লক্ষ্যে, ফল আমদানিতে আমাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের স্বার্থে, দেশীয় বাস্তুসংস্থানকে সংরক্ষণের প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর প্রত্যেকটি গাছ হোক ফলের গাছ। আমরা যেনো বলতে পারি জন্মের একশত বৎসর পরেও বঙ্গবন্ধু আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতি-পাখি-পতঙ্গ ও জন-মানুষের দুঃখ লাঘবের জন্য সারা বাংলাদেশে এককোটিবার জন্ম নিচ্ছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment