বজ্রপাত রোধে চাই সচেতনতা

তাজমিন রহমান


বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত গতিতে। তাপমাত্রা বাড়ছে, বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা । সাইক্লোন,টর্নেডো, সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে ।

প্রতিনিয়ত যাদের সাথে সংগ্রাম করতে হচ্ছে ।দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগ পূর্ণ দেশ।যেখানে সাইক্লোন, টর্নেডো নিয়মিত ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছে।শুধু এগুলোই নয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর সাথে যোগ হয়েছে বজ্রপাত।

দেশে বজ্রপাত ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুর হার। বিগত কয়েক দিনে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে বজ্রপাত হলেও মৃত্যু হার কম। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মৃত্যুর হারের সংখ্যা বেশি।

কেন বাড়ছে বজ্রপাত ? কেন বাড়ছে মৃত্যুর হার? আবহাওয়াবিদরা অনেক কারণ চিহ্নিত করেছেন যার মধ্যে অন্যতম কারণ ,বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন। তাপমাত্রা যত বাড়বে বজ্রপাত ও তত বাড়বে। রেকর্ড অনুযায়ী ১৯৮১ সাল থেকে দেশব্যপী বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই এমন হচ্ছে।

চলতি বছরের এপ্রিল, মে ও জুন মাসেও তাপমাত্রা স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি। এ কারণে এ বছরে বজ্রপাত ও বেশি হচ্ছে। এছাড়াও গত কয়েক দশকে দেশের বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে যার কারণে ও বজ্রপাত বাড়ছে। বজ্রপাতের আরো উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে আছে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান।

বাংলাদেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। যেখান থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস আসছে। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা,কিছু দুরে হিমালয় রয়েছে। সেখানে থেকে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। এদুটির বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। যার ফলে অত্যাধিক বজ্রপাত হচ্ছে।

তবে একটু সচেতন হলেই এই দুর্যোগ কমিয়ে আনা সম্ভব। কেননা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, ভারতের কয়েকটি অংশ, নেপাল ও বজ্রপাত হয় তবে সেখানে মৃত্যুর হার কম। কিন্তু বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় মৃত্যুর হার অনেক বেশি।

বজ্রপাত কে ২০১৫ সালে জাতীয় দুর্যোগ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। বজ্রপাত কে রোধ করতে ১০ লাখ তাল গাছ লাগানো হয় সরকারি ভাবে কিন্তু সঠিক পরিচর্যার অভাবে তার অধিকাংশ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে সঠিক গন্তব্যে পৌছানো সম্ভব হয়নি।তবে হাওড় অঞ্চলে বজ্রপাত রোধের জন্য ইলেকট্রনিক সেন্সর বসানো হয়েছে তার ফলে ঐ এলাকায় বজ্রপাত কমিয়ে আনতে পেরেছে। কিন্তু এই ইলেকট্রনিক সেন্সর সব জেলায় বসানো সম্ভব হবে না কেননা এটি অনেক ব্যয়বহুল।

তবে আমরা যদি ব্যক্তি সচেতন হয়ে নিজ উদ্যেগে তালগাছ রোপন করি তবে তুলনা মুলক ভাবে বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।কেননা বজ্রপাত ও মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে দরকার সচেতনতা ও তালগাছ রোপন করা। প্রশ্ন হলো শুধু তালগাছ কেন??কেননা বজ্রপাত সবসময় উচু স্থানে আঘাত করে,আর তালগাছ সবচেয়ে উচু গাছ । আর খুব সহজেই এটি বেড়ে ওঠে।

বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গাতে,পতিত জমিতে রাস্তার ধারে এ গাছ লাগাতে হবে।শুধু বজ্রপাত রোধ নয় এর পাশাপাশি মাটির ক্ষয়রোধ,পথচারীদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা ও করা সম্ভব। তাই সরকারের পাশাপাশি আমাদের নিজের জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে।তবেই বজ্রপাতের মতো বড় চ্যালেঞ্জ কে মোকাবিলা করা সম্ভব।


তাজমিন রহমান
ফোকলোর স্টাডিজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *