বদলে যাওয়া বেরোবি, পথ দেখাচ্ছেন উপাচার্য

আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল


অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন নানা সমস্যায় জর্জরিত উত্তরবঙ্গের মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে (বেরোবি)।

২০১৭ সালের ১৪ জুন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত তিন বছরে একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে ক্যাম্পাসের দৃশ্যপট।

পূর্ববর্তী দুই উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল জলিল মিয়া ও অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর উন নবীর আমলে স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা আর দুর্নীতি-লুটপাটের কারনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। দুর্নীতির মামলায় বাংলাদেশের প্রথম উপাচার্য হিসেবে একজনকে জেলেও যেতে হয়েছিল এবং অন্যজনের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। এসব মামলাই তাঁদের সীমাহীন দুর্নীতি প্রমাণ করে।

ড. কলিমউল্লাহ দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ ফিরিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যদিও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যানারে অনেকে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল কোন কোন পক্ষ, কিন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ড. কলিমউল্লাহ তা হতে দেননি।

বরং কঠোর হাতে দমন করেছেন। সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতা দিয়ে তিনি গোটা ক্যাম্পাসে একটা টিম ওয়ার্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। আর এ কাজে উনাকে সবচেয়ে বেশী উৎসাহ এবং সহযোগিতা করছেন কয়েকজন শিক্ষক।

সেশনজট নিরসন ও প্রশাসনে গতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক -কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষ করার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো বুনিয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। তার নিয়োগের পর থেকে অর্থাৎ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে দু একটা ব্যতিক্রম ছাড়া কোন সেশনজট নেই।

এ সময় নবীনবরণের দিনেই শিক্ষার্থীরা হাতে পেয়েছেন আইডি কার্ড অথচ পূর্ববর্তী ভিসিদের আমলে ক্ষেত্রবিশেষ দুই বছরেও আইডি কার্ড পাওয়ার যেত না।দায়িত্ব নেওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে লাইব্রেরী বিকেল ৫ টার পরিবর্তে ৭ টা পর্যন্ত খোলা রাখা,পরিবহন সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন বাস ক্রয় করেছেন ,একাধিক নতুন রোডে বাস চালু করেছেন।

ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যলয়ের করার লক্ষ্যে পুরো ক্যাম্পাসকে ওয়াইফাই সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা, প্রতিটি বিভাগে একটা করে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, ফাইল ট্রাকিং ও ই টেন্ডারিং এর ব্যবস্থা করেছেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের বারো বছরের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন এবং দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ক্যাফেটেরিয়া চালু করেছেন।মহামারী করোনা ভাইরাসে শিক্ষার্থীদের হলের সীট ভাড়া মওকুফের পাশাপাশি দারিদ্র শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যলয়ের পক্ষ থেকে এককালীন আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

সব ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হল দলবাজি ও স্বজন-প্রীতিকে প্রশ্রয় না দিয়ে মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া। ফলে বিভিন্ন সময় আত্নীয় স্বজনের চাকুরী না হওয়ায় মনঃক্ষুণ্ণও হয়েছেন প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন শিক্ষক।নিয়োগের ক্ষেত্রে তদবিরকে প্রধান অযোগ্যতা ঘোষনা করেছেন।

তবে এই তিন বছরে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকা, সিন্ডিকেট সভা, নিয়োগ বোর্ডসহ বেশ কিছু সভা ঢাকার লিয়াজো অফিসে করা নিয়ে বিতর্কিতও হয়েছেন।। এছাড়াও উপাচার্য বাণিজ্য ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং এর পাশাপাশি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন অথচ এ দুটি অনুষদে দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত শিক্ষক রয়েছেন।

প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেলেও নিজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বারবার আশাহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ধারণা ছিল তিনি সাবেক উপাচার্যদের বৃত্তের বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসবেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অন্যতম একটি চাওয়া ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে একটি অত্যাধুনিক গেট নির্মাণ যা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

গত তিন বছরের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে আলাপ কালে তিনি জানান, পূর্ববর্তী উপাচার্যদের হেঁয়ালিপনায় বিশ্ববিদ্যালয় অনেক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে।দাযিত্ব নেওয়ার পর ডিসিপ্লিন ফিরিয়ে এনে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা ছিলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের। আমি এ লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *