বাংলাদেশের ওয়েডিং ফটোগ্রাফির জনক প্রীত: ‘জিরো থেকে হিরো হবার গল্প’

সানজিদ আরা সরকার বিথী
ঢাবি


মুহাম্মদ জাহিদ রেজা প্রীত। তবে প্রীত রেজা বললেই সবাই চেনেন। বাংলাদেশের ওয়েডিং ফটোগ্রাফির জনক হিসেবে খ্যাত।

বিয়ের ছবি তোলা যে বাংলাদেশে সম্মানজনক পেশা হতে পারে, সেই স্বীকৃতিও আদায় করে ছেড়েছেন ইউ এস স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই প্রফেশনাল ফেলো।

ওয়েডিং ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য করছেন সামাজিক আন্দোলন। একক প্রদর্শনী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম পিএএসইও আর্ট ফেস্টিভালে। চলুন জেনে নিই প্রীত রেজার জিরো থেকে হিরো হওয়ার গল্প।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ক্যাম্পাসে রাস্তার পাশে মানুষের ছবি তুলে প্রিন্ট করে দিয়ে ২০ টাকা পেয়ে ১০ টাকা লাভ করত; সেখান থেকেই শুরু। ভার্সিটির পুরোটা সময় দৃঢ় মনোবলকে সম্বল করে এই কাজটি চালিয়ে যান তিনি।

কথায় আছে, ভালো কাজ করতে চাইলে নিন্দুকেরা পাছে কিছু বলবেই।প্রীত রেজার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বন্ধুরা তার এই কাজকে সহজ ভাবে নিতো না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র রাস্তায় বসে মানুষের ছবি তুলে উপার্জন করছে এবং সে ছেলেটি তাদের বন্ধু; বিষয়টি তাদের আত্মসম্মানে লাগাতো। এমন অনেক বন্ধু ছিল যারা আশ্বাস দিত টাকা দরকার হলে তারা দিবে কারণ একজন ’স্ট্রিট ফটোগ্রাফারের’ বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেয়া তাদের জন্য সুখকর ছিলো না।

আস্তে আস্তে যখন পরিধি বড় হলো তখন ইভেন্ট ফটোগ্রাফি শুরু করেছিলেন তিনি। বিভিন্ন বিয়েতে গিয়ে ছবি তুলা শুরু করল। পরিচিত আত্মীয়-স্বজনের সাথে বিয়েতে দেখা হলে তারা তাকে দেখে অন্য দিকে চলে যেতো। কারণ একজন সামান্য ‘ক্যামেরাম্যান’ তাদের আত্মীয় বা পরিচিত সেটা তারা প্রকাশ করতে চাইতো না।

যখন নিজের একটা ফটোগ্রাফি ফার্ম গড়ে তুলল তখন প্রতিযোগী অনেক প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের শাখা খুলেছিলো। আর তার মাত্র একটি ব্রাঞ্চ ছিলো। মজা করে অনেকে জিজ্ঞেস করতো যে পরের ব্রাঞ্চটা কোথায় করবে? সে তখন বলত পরের ব্রাঞ্চটা হবে আমেরিকায়। আর আজকে তার দুটি ব্রাঞ্চ একটি ঢাকায় অন্যটি আমেরিকায়।

তিনি পাঠশালা, সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব ফটোগ্রাফি থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারি প্রীত আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেছেন দৈনিক ইত্তেফাক, দি নিউ এইজ, দ্য ডেইলি স্টার এবং দৃক নিউজের জন্য। ফটো এডিটর ছিলেন আইস মিডিয়া লিমিটেডের বিভিন্ন ম্যাগাজিনের (আইস টুডে, আইস বিজনেস টাইমস, চারবেলা চারদিক এবং বেঙ্গল বার্তা)।

নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান “ওয়েডিং ডায়েরী” ও “প্রীত রেজা প্রডাকশন” -এ দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান নির্বাহী / ডিরেক্টর/ ফটোগ্রাফার হিসেবে।

দেশের একমাত্র ফটোগ্রাফি নির্ভর লাইভ টিভি শো ‘ডার্করুম’ – এর উপস্থাপনার পাশাপাশি কাজ করছেন ‘কাউন্টার ফটো’র ফ্যাকাল্টি হিসেবেও। রেডিওতে তার ফটোগ্রাফি নির্ভর শো ‘ফটো টকউইত প্রীত রেজা’ ভীষণ জনপ্রিয় তরুণদের কাছে।

মেয়ে পথশিশুদের জন্য শেল্টার ”হ্যাপি হোম” নিয়ে একশন এইড বাংলাদেশ এর শুভেচ্ছা দ্যূত হিসেবে কাজ করছেন। ইউনেস্কো বাংলাদেশের ক্রিয়েটিভ কনসালটেন্ট হিসেবে ও কাজ করেছেন প্রীত।আন্তর্জাতিক পরিসরে পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করার পাশাপাশি প্রীত রেজা আলোকচিত্র সংশ্লিষ্ট একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মিলনীর বক্তা প্রীত পাবলিক স্পিকার হিসেবে ও জনপ্রিয়।

ফুজিফিল্মের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, হুয়াওয়ের ফটোগ্রাফার অ্যাম্বাসেডর প্রীত রেজা বাংলাদেশের আলোকচিত্র ইন্ডাস্ট্রির এক বড় অনুপ্রেরণার নাম।শুধু প্রীত রেজা নয়; প্রত্যেক সফল মানুষের সফলতার চাবিকাঠি হল পরিশ্রম।

Scroll to Top