আজ ২রা সেপ্টেম্বর। বাংলা গদ্যে চলিতরীতির প্রবর্তক এবং বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রাবন্ধিক, কবি ও লেখক প্রমথ চৌধুরীর মৃত্যু বার্ষিকী আজ। ১৯৪৬ সালের এই দিনে ৭৮ বছর বয়সে শান্তি নিকেতনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বাংলা সাহিত্যের এই বিখ্যাত দিকপাল, মননশীল, যুক্তিবাদী, সৃষ্টিশীল ভাষাবিদ, কবি, সুপ্রাবন্ধিক, গল্পকারের ছদ্মনাম: বীরবল, নীললোহিত।
তার জন্ম ১৮৬৮ সালের বাংলাদেশের পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। প্রমথ চৌধুরীর শিক্ষাজীবন ছিল অসাধারণ কৃতিত্বপূর্ণ। তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রাস ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে এফ এ পাস করেন। ১৮৮৯ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনে অনার্স করার পর ১৮৯০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন এবং পরে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলাত যান। বিলাত থেকে ফিরে এসে ব্যারিস্টারি পেশায় যোগদান না করে তিনি কিছুকাল ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন এবং পরে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।
কর্মজীবনে প্রমথ কিছুদিন কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা করেন। তারপর কিছুকাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে পড়ান। তিনি ঠাকুর এস্টেটের ম্যানেজার ছিলেন। এছাড়াও তিনি মাসিক সবুজপত্র ও বিশ্বভারতী সম্পাদনা করেন।
তার সম্পাদিত সবুজ পত্র বাংলা সাহিত্যে চলতি ভাষারীতি প্রবর্তনে আগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যা সে সময়ের নব্য লেখকদের জন্য বৃহৎ প্লাটফরম হিসেবে কাজ করেছে। তার প্রবর্তিত গদ্যরীতিতে ‘সবুজ পত্র’ নামে বিখ্যাত সাহিত্যপত্র ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তারই নেতৃত্বে বাংলা সাহিত্যে নতুন গদ্যধারা সূচিত হয়। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চলিত রীতিতে গদ্য লিখতে তিনি উৎসাহিত করেন।
রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীর সাথে তার বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভাইঝি জামাই। এছাড়াও লেখক আশুতোষ চৌধুরী সম্পর্কে প্রমথ চৌধুরীর অগ্রজ। রবীন্দ্রনাথের ভগিনী প্রতিভা দেবীর সাথে আশুতোষ চৌধুরী বিয়ে হয়।
তিনি বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য জগত্তারিণী পদক কে ভূষিত হন।তাঁর রচনাসম্ভার নিম্নে উল্লেখ করা হল:
কাব্যগ্রন্থ: সনেট পঞ্চাশৎ (১৯১৯),পদচারণ (১৯২০)।
গল্পগ্রন্থ: চার ইয়ারি কথা (১৯১৬), আহুতি (১৯১৯) ঘোষালের ত্রিকথা,(১৯৩৭),নীল লোহিত (১৯৩৯),অনুকথা সপ্তক (১৯৩৯) সেকালের গল্প (১৯৩৯),ট্রাজেডির সূত্রপাত (১৯৪০),গল্পসংগ্রহ (১৯৪১), নীল লোহিতের আদি প্রেম (১৯৪৪)দুই বা এক (১৯৪০)।
প্রবন্ধগ্রন্থ: তেল–নুন–লাকড়ি (১৯০৬), নানাকথা (১৯১১), বীরবলের হালখাতা,(১৯১৭), আমাদের শিক্ষা, (১৯২০), দুই ইয়ারির কথা (১৯২১), বীরবলের টিপ্পনী (১৯২৪), রায়তের কথা (১৯২৬), নানাচর্চা (১৯৩২), ঘরে বাইরে (১৯৩৬), প্রাচীন হিন্দুস্থান (১৯৪০), বঙ্গ সাহিত্যের সংপ্তি পরিচয় (১৯৪০), প্রবন্ধ সংগ্রহ (১ম ও ২য় খণ্ড) [১৯৫২–১৯৫৩]