মাশরুকা ইসরাত যেবা
বাবা ! তিনি এমনই একজন মানুষ, যে হাজারো ব্যস্ততায় নিরবে প্রতিমুহূর্তে আমার খেয়াল রেখে যায়। বলা হয়ে থাকে-
‘পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতাহী পরমং তপঃ পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্ব দেবতা। পিতাই ধর্ম, পিতাই স্বর্গ, পিতাই পরম তপস্যা।’
প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী বাবা দিবস উদযাপিত হয়। সন্তানের প্রতি পিতার ভালোবাসাতো সব সময়ই। আমার প্রতি বাবা খুবই সংবেদনশীল। যে কোন খারাপ বা প্রতিকুলতা থেকে আমায় সবসময় আগলে রাখে। আমার প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতন থাকে, যেন ভূল করেও আমি কোন ভূল না করি।
আমার মনে পরে, যখন আমি একটা ছোট্ট মেয়ে ছিলাম তখন তিনিই ছিলেন আমার অন্যতম খেলার সাথী। ছুটির দিনগুলো তিনি পুরোটা আমাকে দিতেন। কখনোও আমার ছোট্ট ছোট্ট খেলার জগতের অংশীদার, কখনো আমার বোকা বোকা গল্পের অসাধারণ শ্রোতা।
মাঝে মাঝে তিনি আমাকে বাইকের পেছনে বসিয়ে বের হয়ে পড়তেন কাঞ্চন নদীর ব্রীজ বা কখনো শহর থেকে দূরের কোন হাঁটে….। চলতে চলতে প্রতি মুহুর্তে আমাকে তিনি শেখাতেন।
আমার মনে পরে, প্রথম পান খেয়েছিলাম দুই বাপবেটিতে মিলে। সেদিন রাত্রিবেলা দিনাজপুর বিশ্বরোড ধরে এক হাঁট থেকে বাসায় ফিরছিলেন। পেছনে ছোট্ট আমি শক্ত করে বাবার পেট জড়িয়ে ধরে বসে ছিলাম। রাস্তার ধারে কোন টঙ থেকে নিয়েছিলেন দুটো মিষ্টি পান। ফাঁকা রাস্তায় শোঁ শোঁ বাতাস কেটে যাওয়ার সময় আমাকে শেখাচ্ছিলেন কিভাবে পান চিবোতে হয়। আর আমি দেখছিলাম কিভাবে চাঁদমামাও আমাদের সাথে দৌড়ে যায়। হা হা…
আসলে আমরা সবাই বড় হয়ে যাই.. কিন্তু বাবার সাথে কতইনা মিষ্টি মধুর স্মৃতি পরে থাকে মনের কোঠরে, যেগুলো কোনদিন মরচে পরার নয়।
আসলে বাবাই প্রথম মানুষ যিনি আমাকে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করেছেন, আমার মাঝে বড় হওয়ার ইচ্ছে তেরী করেছেন, ভাবতে শিখিয়েছেন, অনুসন্ধান করতে শিখিয়েছেন। আমার চিন্তা চেতনা একটু একটু করে সমুন্নত করেছেন।
অনেক সময় চেতন বা অবচেতন মনে তাঁকে কতইনা আঘাত করে থাকি! কিন্তু তিনি সবসময়ই আমার প্রতি সদয়, কল্যানময়।
তিনি অন্যতম জ্ঞানী, বিচক্ষণ মানুষ। এবং আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ও সেরা ব্যক্তিত্ব। তিনি আমার শ্রদ্ধেয় বাবা!
সকল বাবাদের প্রতিই থাকলো আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
লেখকঃ মাশরুকা ইসরাত যেবা
শিক্ষার্থী, ২য় বর্ষ, মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগ, বশেফমুবিপ্রবি।