বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, কতটুকু সচেতন আমরা?

বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, কতটুকু সচেতন আমরা?

হৃদয় পাল: একবিংশ শতাব্দীর মতো সময়ে যখন বিজ্ঞানের অগ্রগতি চরম পর্যায়ে, তখন একটি ভাইরাস জনজীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে; সেটি ছিল কল্পনাতীত।চীনের উহানে করোনা ভাইরাস উৎপত্তি হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে ৮ ই মার্চ। তারপর কয়েক দফা লকডাউন এর পরে ফেব্রয়ারি, ২০২১ পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হয়। এরপর মার্চের দিকে করোনা সংক্রমণ আবার উর্ধ্বমুখী হয়।এবছরের মে মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নামকরণ করে।

আসলে যেকোনো ভাইরাসই ক্রমাগত নিজের ভেতর নিজের পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটাতে থাকে এবং তার ফলেই তার নানা ধরনের সৃষ্টি হয়।সাধারণত আসল ভাইরাস থেকে মিউটেন্ট ভাইরাস দুর্বল হয়।কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যার বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.৬১৭, এটি অতিসংক্রাম এবং খুব দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম।

বাংলাদেশ ভারতের প্বার্শবর্তী দেশ এবং বাংলাদেশের সাথে ভারতের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কারণে;ভাইরাসটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং দ্রুততম সময়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রথমদিকে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ দেখা দিলেও বর্তমানে সারা দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। গত ১ জুলাই থেকে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়,যা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৪ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

লকডাউনের বিধিনিষেধ হিসেবে বলা হয়েছে-লকডাউনে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। কেবল অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হতে পারবে না।তবে গণমাধ্যম এ নির্দেশ এর আওতাধীন নয়।

এদিকে দেশের মাত্র দুই শতাংশ মানুষ করোনার দুইডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে।তিন শতাংশের মতো মানুষ প্রথম ডোজ পেয়েছে। ভারতে করোনার সংক্রমণ অতিমারী আকারে ধারণা করলে,তারা চুক্তিঅনুযায়ী টিকা পাঠাতে পারে না বাংলাদেশে।

তবে বর্তমানে মর্ডানা ও সিনোফার্মের ৪৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছেছে।আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে।বিশ্বব্যাপী গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনায় কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের।বর্তমানে সুরক্ষা এ্যাপের রেজিষ্ট্রেশন করে প্রবাসীদের ও শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।

বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার উচ্চ পর্যায়ে, প্রতিদিন ২০০ বা তার কাছকাছি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে সামাজিক দূরত্ব অন্যতম হাতিয়ার। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই সামাজিক দূরত্ব মানতে চায়ছে না।ফেলে হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ।ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উচ্চ সংক্রমণ হার থেকে রেহায় নেয় গ্রামীণ জনপদেরও।

গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমিত মানুষের অর্ধেকই গ্রামের। তবে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে বেশিরভাগ মানুষ লকডাউন অমান্য করছে। শহরের প্রধান জায়গার দোকানপাঠ বন্ধ থকলেও, অলিগলির দোকানগুলোতে হরহামেশাই লোকজন যাওয়া-আসা করছে।গ্রামের দিকে বেশিরভাগ দোকানই খোলা থাকছে দিনের সময়টাতে।

এদিকে মাস্ক পড়লেও বেশিরভাগ লোকের মাস্ক থাকছে নাকের নিচে।কথা বলা বা কাশি দেওয়ার সময় মাস্ক খুলে ফেলার কারণেও এক মানুষ থেকে অন্য মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। আবার অনেকেই মাস্ক ছাড়া ঘোরাঘুরি করছে।ঠিকমতো স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেও দেখা যাচ্ছে না কাউকে।

এমতাবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি অতিরিক্ত খারাপ হবে,ভারতের মতো অতিমারিতে যাতে সংক্রমণ রূপ না নেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।জনমনে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে মাইকিং করা যেতে পারে, তারসাথে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।

সামাজিক দূরত্বের সুফল সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বাস্তবে মানুষকে সচেতন করতে হবে।লকডাউন এবং সরকার প্রদত্ত বিধিনিষেধ যথাযথভাবে মানতে হবে।সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দ্বারাই করোনা ভাইরাসকে মোকাবেলা করা সম্ভব।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *