বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ মুক্তি পাক
আবরার ফাহাদ! বুয়েট ক্যাম্পাসের উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলোর একজন ছিলো সে। কাল থেকে দেশের মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত নাম। কিন্তু কেনো? কারন তার উপর করা বর্বরোচিত আঘাত এবং তারই ফলশ্রুতিতে এই সুন্দর পৃথিবী থেকে প্রস্থান ঘটেছে ছেলেটির।
কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, নটরডেম থেকে বুয়েটের ইইই। দেশসেরা ছাত্রদের একজন। বুয়েটের মত প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর জন্য তার নিজের, বাবা-মা’র, শিক্ষক সহ কতজনের কত শ্রম ছিলো, সবকিছু মাত্র ক’ঘন্টার ব্যবধানে পন্ড হয়ে যাবে কে ভেবেছিলো! কি দুর্ভাগা তার বাবা-মা!
বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ মুক্তি পাক
কত স্বপ্নের বীজ বপন করে রেখেছিল পরিবারটি। ভেবেছিলো এইতো কিছুদিন পর পরিবারের হাল ধরবে, সবার মুখে হাসি ফোটাবে। নরপিশাচরা একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে অতি জঘন্য ভাবে সব স্বপ্ন শেষ করে দিলো।
আবরারের বাবার স্টেটমেন্ট শুনলাম। যেখানে উনি বলছেন “আমাদের পরিবার আগাগোড়া নৌকায় ভোট দেই!”
মাত্রই মারা যাওয়া পুত্রশোকে কাতর বাবাকে পরিবারের রাজনৈতিক সমর্থনের পরিচয় দিয়ে বিচার চাইতে হয়! হায়! কোন দেশে আমরা আছি! কেনো শুধুমাত্র ভিন্নমত ধারণ করার কারনে কারোর জীবন চলে যাবে? কেনো এসব দিনেদিনে বাড়ছে? স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধশতকের কাছাকাছি সময়ে এসে এমন পরিনতি কি আমাদের কাম্য ছিলো? সত্যিকার অর্থেই ভাষাহীন হয়ে গেছি!
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমাদের দেশের ক্যাম্পাস গুলোতে অহরহ ঘটেছে। বিচারের জন্য অনেকেই হন্যে হয়ে ঘুরেও ন্যায়বিচার পায়নি।
ছেলেটি বুয়েটের না হয়ে গ্রামের কোনো এক কলেজের হলে কি এমন শোরগোল শোনা যেতো? এতো লিখালিখি বা নিউজ হতো? আমি নিশ্চিত হতো না।
কেনো ঘটছে এমন ঘটনা। সমাজে মানুষ বড় হয় মানবিকতা ও যুক্তিতর্কের মাঝে। আজকাল এই দুটি গুণ অনেকের মধ্যে দেখা যায় না। কণ্ঠরোধের সংস্কৃতি একটা দেশকে দিনকে দিন পিছিয়ে দিতে পারে কারন যেখানে তর্ক নেই সেখানে উন্নয়নের সুযোগ সীমিত। মানবিকতা গড়ে ওঠে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। অর্থ উপার্জন ও সামাজিক স্ট্যাটাস অর্জন মূখ্য উদ্দেশ্য হতে পারেনা। প্রতিষ্ঠান মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ। যার ফলশ্রুতিতে মানসিক বিকারগস্ত মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। সাথেসাথে ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহার ও শো-অফ মানসিকতাও অনেকাংশে দায়ী।
শুনলাম অমিত সাহা নামের একজনের রুমে অবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সেই হত্যায় সবচাইতে নিষ্ঠুর ভূমিকা পালন করে বলে খবরে এসেছে। কিন্তু তার নাম এজাহার থেকে বাদ, গ্রেফতারও হয়নি, ছাত্রলীগ ১১ জনকে বহিষ্কার করেছে, সেখানেও তার নাম নেই। হয়তো আরেকটি বিচারহীনতা দেখতে যাচ্ছে দেশ। এমন তো হবার কথা নয়।
আজ ছেলেটি বুয়েটের না হয়ে গ্রামের কোনো এক কলেজের হলে কি এমন শোরগোল শোনা যেতো? এতো লিখালিখি বা নিউজ হতো? আমি নিশ্চিত হতো না। তার অর্থ একটা ঘটনা যতক্ষণ না দেশের সবার কাছে পৌঁছাতে পারছে ততক্ষণ সবাই নিরব থাকছি, ততক্ষণ বিচার ঠিকমত হবে কি না তা নিয়ে আশংকায় থাকছি।
কিন্তু আমরা আশাকরি বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ মুক্তি পাক। দেশের বিরাজমান বিচারব্যবস্থায় যে শাস্তির বিধান রয়েছে তার সবকিছুর প্রয়োগ হোক। আমরা চায়না এমনভাবে আর কোনো মা’য়ের কোল খালি হোক। ক্যম্পাসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল চরিত্র ফিরে পাক। সুষ্ঠু লেখাপড়া ও গবেষণার পরিবেশ দ্রুতই নিশ্চিত হোক।
লেখকঃ নাসির উদ্দিন, প্রধান সম্পাদক, দ্য ক্যাম্পাস টুডে।