বিজ্ঞান মেলায় প্রথম হলেও অর্থাভাবে মিলছে না মেধার সঠিক মূল্যায়ন

বিজ্ঞান মেলায় প্রথম হলেও অর্থাভাবে মিলছে না মেধার সঠিক মূল্যায়ন

রবিউল হাসান সাকীব, বেরোবি প্রতিনিধিঃ রিয়াদ আহমেদ শিথিল। বিশ বছর বয়সী এক হাস্যোজ্জ্বল কিশোর। বর্তমান পান্টি ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তার জন্ম কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের মধ্যবিত্ত এক পরিবারে। শিথিল শুধু স্বপ্নবাজ ছেলে নয় বরং স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদানে বিশ্বাসী কিশোর। চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে একমাত্র শখের মোবাইল ফোন বিক্রি করে তার মাস্ক শনাক্তকারী ডোর তৈরিতে খরচ করেছে।

শিথিল বিশ্বাস করে অধ্যবসায় আর আত্মবিশ্বাসই পারে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণে পৌঁছে দিতে। দোকানদার বাবা নজরুল ইসলাম, মা শেলীর অনুপ্রেরণায় তার আজকের এই অবস্থান। ছোটবেলা থেকেই তার প্রবল আগ্রহ দেশ ও দশের উন্নতির পেছনে কাজ করা। তার স্বপ্ন সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলছে দূর্বার গতিতে।

এরই মধ্যে শিথিল কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার ৪২তম জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় তার তৈরি covid-19 safely face mask detector in automatic door উপস্থাপন করে পান্টি ডিগ্রি কলেজের হয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। তার এই অভিনব পদ্ধতিতে তৈরির জন্য বিভিন্ন মহল থেকে ভূয়সী প্রশংসাও পেয়েছে।

মাস্ক শনাক্তকারী ডোর তৈরির অল্প দিনেই পুরস্কারের ঝুড়িতে যুক্ত হলো উপজেলা পর্যায়ে ৪২তম জাতীয় বিজ্ঞান মেলার সেরা প্রথম স্থানের।

ইতোপূর্বে ২০১৯ সালেও এই মেলাতেই ১ম ও জেলা পর্যায়ে ২য় স্থান অধিকার করে। সঠিক দিকর্নিদেশনা আর অর্থের অভাবে জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। মাস্ক শনাক্তকারী ডোর তৈরির সহযোগী ছিল পান্টি ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের তারই দুই বন্ধু। তারা হলেন সাগর হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান নয়ন।

শিথিল বলেন, ‘‘আমি ছোটবেলার থেকেই টেকনোলজি জাতীয় কাজ করতে ভালোবাসি। রোবটিস্ক নিয়েও কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আমি গত ২০১৯ সালে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় একটি ইন্টারনেট কন্ট্রোল পিআই রোবট তৈরি করি। ওই রোবটটির কাজ ছিল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে রোবটের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করা। যে সব দুগর্ম স্থানে মানুষ সহজে যেতে পারে না, সে সব স্থানে এটি সহজে পাঠানো যাবে ও সেই স্থানের সব তথ্য গ্রহণ করা। আমার অনেক অগ্রগতি ছিল রোবটিস্ক নিয়ে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের মহামারিতে আমার পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই মুহূর্তে আমি কিছুটা আর্থিক সাহায্য পেলে আমার বাকি কাজগুলো শেষ করতে পারতাম।’’

Covid-19 safely face mask detector in automatic door তৈরির সুবিধা হলো- ফেস মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে পারবে না, শুধু মাস্ক থাকলে প্রবেশ করতে পারবে, মাস্ক থাকলে একটি সবুজ বাতি জ্বলে উঠবে ও খুলে যাবে, মাস্ক না থাকলে মাস্ক পড়ার অনুরোধ করা হবে, মাস্ক থাকলে স্বাগতম জানানো হবে।

কুষ্টিয়ার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক জেলা প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন জাফর বলেন, ‘আমার নিজ এলাকার ছেলের এই অভিনব মাস্ক শনাক্তকারী ডোর তৈরির কথা শুনতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। শিথিলের এই কাজের পেছনে যতটুকু সহযোগিতা দরকার, আমরা করবো। যাতে আমাদের গ্রামে ওর মাধ্যমে সুনাম বয়ে আনে এই কামনায়ই করি।’

পান্টি ডিগ্রি কলেজের প্রিন্সিপাল বজলুর বয়েজীদ বলেন, ‘কুমারখালী উপজেলার ৪২তম জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় আমাদের কলেজের একজন শিক্ষার্থী মাস্ক শনাক্তকারী ডোর তৈরি করে প্রথম হয়। এটা আমাদের জন্য খুবই গর্বের বিষয়। বর্তমান সরকার যেমন মাস্ক ব্যবহারে কঠোর হয়েছেন। আমি মনে করি এটার দিকে সরকার নজর দিলে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে অনেকটা সহজ হবে। আমাদের কলেজ থেকে আমরা সবসময় তাকে সহায়তা করবো।

প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন বিনিয়োগের অভাবে এভাবেই অঙ্কুরে বিনষ্ট হচ্ছে এসব তরুণ প্রতিভা। সরকারের উচিত এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তি খাতের সার্বিক উন্নয়ন করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *