বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা : গুচ্ছ পদ্ধতিতে এবারও খেতে পারে হোঁচট

সমন্বিত নয়, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


করোনা মহামারীর মধ্যে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না হলেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে মহামারীর মধ্যে সেই পরীক্ষাও নেওয়া সম্ভব হবে কি-না সেই সংশয়ের পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হবে কিনা এমন সংশয়ে শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকরা।

তবে আশার কথা এই যে জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এইচএসসির চূড়ান্ত মূল্যায়ন ফল ঘোষণা করা হবে, যাতে জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।এমনই জানিয়েছেন সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি।

এদিকে পরীক্ষা নেয়া হলেও গেলবারের মতো এবারও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া হোঁচট খেতে পারে দেশের প্রধান কয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রক্রিয়ায় না যেতে চাওয়ার অনীহার কারণে।

আর এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বসতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি। তারা চাচ্ছে গুচ্ছ পদ্ধতিতেই পরীক্ষা নিতে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলছে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে। এজন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে ১৫ অক্টোবর সভা ডেকেছে ইউজিসি।

দেশে বর্তমানে ৪৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার আসনে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়। একারণে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা দিতে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরতে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি অভিভাবকদের আর্থিক ব্যয় হয়।

গত কয়েক বছর ধরেই সমন্বিত একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটসহ প্রধান পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। এরপরও গেলবছর কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও সাধারণ- এই চারটি গুচ্ছের আওতায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় ইউজিসি।

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর বলেন, ইউজিসি এখনও মনে করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়া দরকার। কারণ বোর্ডের রেজাল্টের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও আস্থা রাখতে পারেনি। এবার সমস্যাটা হবে যে এত শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা কিভাবে নেয়া হবে। এটা যদিও একদিনের ব্যাপার। করোনার আগে চিন্তা করে রেখেছি গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার। গুচ্ছ পদ্ধতির সুবিধাটা অনেক তাই করোনাকালীন সময়েও আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতেই আছি। এখনও এর কোনও বিকল্প চিন্তা করিনি।

উন্নত বিশ্বে উচ্চশিক্ষা অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হলেও দেশে উচ্চশিক্ষা নেয়ার মতো শিক্ষার্থী প্রচুর উল্লেখ করে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজ চৌধুরী বলেন, ‘অনেক দেশেই মেধা, ভর্তি পরীক্ষার ধরন, উচ্চমূল্যের টিউশন ফি প্রভৃতি কারণে উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় সবাই উচ্চশিক্ষা নিতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশে খুব কম জিপিএ নিয়েও উচ্চশিক্ষায় যাওয়া যায়। এবার যেহেতু অনেক শিক্ষার্থী পাস করবে সেক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষায় আসন সংকট না পড়লেও সবার উচ্চশিক্ষা কতটা দরকার সেটাও ভাবার সময় এসেছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সমন্বিত পদ্ধতিতে নিতে আশাবাদী শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি। তিনি বলেছেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখনও তিন মাস সময় রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশ হোক তারপর আমাদের অ্যাডমিশন কমিটি, ডিনস কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করে বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। হঠাৎ করে তো আর এই সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। বিজ্ঞানসম্মত বাস্তবতার মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আরও পড়ুন

৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে নিজস্ব পদ্ধতিতে

আর বাস্তবতার নিরিখেই সিদ্ধান্ত নেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে যাবে নাকি প্রতিবারের মতো নিজেরাই ভর্তি পরীক্ষা নেবে সেবিষয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment