বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বাচঁতে দিন!

তানভীর আহমেদ রাসেল: ১৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চালু করা হয়েছে অনলাইন ক্লাস। এসাইনমেন্ট বা অটোপাশের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হলেও মারাত্মক স্থবিরতা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।তথাকথিত অনলাইন ক্লাস চালু থাকলেও বন্ধ রয়েছে সব ধরনের পরীক্ষা।

ফলে প্রায় দেড় বছরে একটি সেমিস্টারের গন্ডি পেরোতে না পেরে ভয়াবহ সেশনজটের কবলে পড়ে উৎকন্ঠা ও হতাশায় দিন যাপন করছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থী।

অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে গত ২৪ মে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও জড় হয়ে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।মানববন্ধনে আগত শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে হতাশা, উৎকন্ঠার ও ক্ষোভের আগুনে সেদিন ৩৭ সেলসিয়াস সূর্যের প্রখর তাপ হার মেনেছে।

প্রায় দেড় বছরে একটি সেমিস্টার দিতে না পারা,কেউ কেউ ৬ বছরেও অনার্স সম্পূর্ণ করতে না পারা, নিদিষ্ট বয়সের সময়সীমায় চাকুরিতে প্রবেশের যোগ্যতা হারানোর আশঙ্কায়, কারো আবার অসহায় পরিবারের হাল ধরতে না পারার আর্তনাদে সেদিন ভারী হয়ে এসেছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। এমন দুশ্চিন্তা ও বোবা আর্তনাদ শুধু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নয়, বরং দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থীর।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক থেকে জানা যায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত এক অনলাইন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতির আগের চেয়ে পরে মানসিক সমস্যা চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৯১ দশমিক ৪ শতাংশ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ অনিদ্রায় ভুগছেন।

এ ছাড়া ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ এবং ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা ও শঙ্কার কথা উল্লেখ করেন। ৬৮ দশমিক ২ শতাংশ সামগ্রিকভাবে আতঙ্কিত। ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে তাদের কাছে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। যা শিক্ষার্থীদের কখনো আত্নহত্যা দিকে ধাবিত করার আশঙ্কা তৈরি করছে।

গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে কয়েক ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধি করে চলতি বছরের ২৯ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছেন।এ সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রদান করার পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমানে ভ্যাকসিন সংকটে তা কার্যকর করা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আরো বৃদ্ধি করার আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।তাই উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে ও শিক্ষার্থীদের মানষিক স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের কথা ভেবে ভ্যাকসিনের জন্য কালক্ষেপণ না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনতিবিলম্বে খুলে দিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিচরণ বন্ধ রাখলেও জীবনের তাগিদে হাট বাজার,শপিংমলে সব জায়গায় অবাধে চালাচল করছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় চলাচল অবাধে করতে দেওয়া হলেও সংক্রমণ ছড়ানোর অযুহাতে আর কতকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে? হাটবাজার, কল-কারখানা, অফিস আদালত, গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার সক্ষমতা অনেক কম ও মানা হয়না বললেই চলে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যথেষ্ট সক্ষমতা ও শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট সচেতনতা থাকা সত্ত্বেও মাসের পর মাস শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা অযৌক্তিক।

জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংশের হাত থেকে রক্ষা করতে ও হাজারো শিক্ষার্থীদের মানষিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

লেখকঃ  শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও 
সভাপতি, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

Scroll to Top