বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থায় সমৃদ্ধ হোক জবি, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

ফারহান আহমেদ রাফি
জবি প্রতিনিধি


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সদরঘাটে অবস্থিত দেশের অন্যতম প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
তীব্র আন্দোলনের মুখে ২০০৫ সালে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এ রূপান্তরিত হয়।

স্বভাবতই তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভবপর হয়ে উঠে নি।
নানারকম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর একটি।

২০শের অক্টোবর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হয়। নানান প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ পেরিয়ে ১৬ তে পা দিচ্ছে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন ক্যাম্পাস টুডে’র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফারহান আহমেদ রাফি।

জান্নাত সরকার নিতু
ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ
সেশনঃ ২০১৮-১৯
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থীরা,কর্মকর্তা কর্মচারী সর্বোপরি সবার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ও স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় একটি দিন।
একজন জবি শিক্ষার্থী হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস – ২০ শে অক্টোবর আমার জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণ,ফাল্গুন উৎসব,পুজো পার্বণ,ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় দিবস,বিশ্ববিদ্যালয় দিবস অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয় প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে। প্রতিবার খুবই আনন্দঘন ও ঝাঁকজমক এর মধ্য দিয়ে দিনটি বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনার মধ্যে পালিত হয়।
এই দিনটির বিশেষত্ব হলো- এই দিনে শিক্ষার্থীরা একই সাথে একই সময়ে মিলিত হয়ে নতুন রূপে বিশ্ববিদ্যালয়কে মনে করে। মনে করে সেই কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপে পাওয়ার স্মৃতিকথা।

দ্বিতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে জীবন শুরু করার পর গতবছর এই দিনটি খুব কাছ থেকে দেখার ও ঐক্যবদ্ধভাবে উৎযাপন করার সু্যোগ হয়েছে। এ যেন বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্যরকম ভাবে স্মৃতিচারণ এর এর মিলনমেলা।
এই দিনে আমরা আমাদের বিভাগের বড় আপু-ভাই, ছোট ভাই-বোন,ক্লাসমেট দের সবাই মিলে একসাথে গল্প করা,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করার সু্যোগ পাই।

সবাই মিলে সব শিক্ষকদের সাথে সম্মিলিতভাবে সময় কাটানোর সুযোগ পাই। তবে এবারের করোনা মহামারীতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের সেই আমেজ ও আনন্দঘন মুহূর্তগুলো ফিরে দেখা হবে না। এ যেন এক বিষাদঘন ভাবনার সৃষ্টি করে। এটি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের,সর্বোপরি সবার মনে কেমন যেন এক বিষাদের সুর তোলে।

যাহোক, সবাই সবার অবস্থান থেকে নিজেদের মতো করে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অন্যরকম ভাবনায় স্মরণ করি ও স্মৃতি নিয়ে ভালো সময় কাটাই। আশা করব এবারের মহামারীতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস কাটানোর মুহূর্ত যেন জীবনে কখনো না আসে। আর গতবছরের মতো স্মৃতিগুলো যেন জীবনে বারবার ফিরে আসে।
গতবছরের সন্তুষ্টি নিয়েই কাটাতে হচ্ছে এইবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। এভাবেই কেটে গেলো আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।

মারিয়া অনি
বাংলা বিভাগ
সেশন ২০১৫-১৬
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে একটা ভালবাসা আর আবেগের নাম।কোন এক শীতের ঝরাপাতা হয়ে আমার আগমন ঘটেছিলো এর উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে। জবি যেনো আমাকে বরণ করে নিয়েছিলো পরম মমতায়।গুটি গুটি পায়ে হেঁটেছি এর প্রতিটি সিঁড়ি ও আঙ্গিনায়।
ইট পাথরের দেয়াল ঘেরা নিষ্ঠুর এই নগরীতে জবি আমাকে দিয়েছিলো প্রাণের পরশ আর নির্ভরতার আশ্বাস। তাই আমার প্রাণপ্রিয় বিদ্যাপীঠের জন্মদিবসকে কেন্দ্র করে বরাবরই অনেক পরিকল্পনা ও উত্তেজনা কাজ করে।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস মানেই যেনো বর্তমান ও সাবেক জবিয়ানদের মিলনমেলা।এখানে ভর্তি হয়ে ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যান্ত প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে মহাসমারোহে যেমন সেজেছিলো প্রিয় বিদ্যাপীঠ তেমনি আমরাও।
তবে অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে কেন্দ্র করে আমার আগ্রহটা ছিলো বরং অনেক বেশি।কারন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে এটাই ছিলো আনুষ্ঠানিক ভাবে আমার শেষ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন।

কিন্ত দূর্ভাগ্যবশত বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকোপে সে স্বপ্ন যেনো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেলো।শেষ বেলায় স্মৃতি কুড়নোর সময়টুকুও আর হয়ে উঠলো না।তবে সব কিছু ছাপিয়ে একমাত্র আশার কথা হলো এই “১৫ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস” উপলক্ষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আমাদের বহুল প্রত্যাশিত প্রথম ছাত্রীহল “বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল”।
যা নিঃসন্দেহ আমার আগত ও অনাগত অনুজদের জন্য সুখের বার্তা বয়ে আনবে।আমি থাকি আর নাই থাকি জবির জন্য এ ভালবাসা মনের মণিকোঠায় থাকবে আমৃত্যু। ভালো থেকো ভালবাসার আশ্রয়স্থল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সফল হোক “১৫ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।

মোঃ ইব্রাহিম শেখ
২য় বর্ষ
মার্কেটিং বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ভালোবাসার আরেক নাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় । একজন মানুষের জন্ম তারিখ বা জন্মদিবস যেমন তাকে অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু আলাদা করে তোলে, তেমনি একজন ছাত্রকে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিবস ততটাই আলাদা করে।
এটি আমার দ্বিতীয় বাড়ি। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, আড্ডা সবকিছুর কেন্দ্রস্থল। সবাইকে অকৃত্রিম ভালোবাসায় জড়িয়ে রেখেছে এ ক্যাম্পাস। মানুষ হতে পেরেছি কি না জানি না, তবে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার যে শিক্ষা পেয়েছি, তার দাবিদার নিঃসন্দেহে এ জবি।

আরও পড়ুন

গবেষণা ও মান সম্মত উচ্চ শিক্ষায় দেশের রোল মডেল: বিইউপি

শিক্ষা, গবেষণা, শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম ও স্বীয় স্বকীয় গুণাবলীতে দেশে- বিদেশে সর্বত্রই অনন্য হয়ে উঠুক আমাদের প্রাণের স্পন্দন স্বরূপ।আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম বর্ষে প্রত্যাশা থাকবে বিশৃঙ্খল মুক্ত, ছাত্রবান্ধব ও বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা সমৃদ্ধ আগামীর ক্যাম্পাস।

নিশাত তাহসিন অপি
নৃবিজ্ঞান বিভাগ,
সেশন ২০১৮-১৯
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ঋতুতে এখন শরৎকাল।চারদিকে কাশফুলের ছড়াছড়ি,আর আকাশে সাদা মেঘের ভেলা।এরই মধ্য দিয়ে আমাদের প্রাণের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ তম বর্ষে পদার্পণ করছে। প্রতিবছর অনেক উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে বর্ণিল সাজে সেজে পালিত হতো বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।

আরও পড়ুন

শুভ জন্মদিন ভালোবাসার ৭৫ একর

কিন্তু দুঃখের বিষয় এটাই প্রতিবছর যেমন উৎসাহ আর উদ্দীপনা ছিলো সেটা এ বছর আর নেই।গতবছর ক্যাম্পাসে সাজসাজ রব ছিলো।আর এ বছর করোনার মহামারীর স্বীকার হয়ে আমরা সবাই ঘরবন্দি।এ বছরের উৎসব আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দ্বিতীয় উৎসব ছিলো।
উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে পরিবার পরিজন ছেড়ে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন পরিবার পেয়েছি।ছোট ক্যাম্পাসে সবাই এক বন্দনে উৎসব পালন করে আসছি সবাই।৭ একরের ক্যাম্পাস হলেও অনেক উৎসাহ আর ভালোবাসা নিয়ে সবাই একসাথে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করেছি।

এ বছরে আগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দিনের সেই রুপ অনেক মিস করবো। কিন্তু এখন ঘরে থাকাটাই সবথেকে ভালো।সবাই সবার জায়গা থেকে ঘরে বসে আমরা আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় কে স্বরণ করবো,যার যার জায়গা থেকে পালন করার চেষ্টা করবো।অনেক মিস করি গতবছরের এই দিনটি।মহামারী শেষে অবশ্যই আবার দেখা হবে আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাসে।শীক্ততা আর ভালোবাসা নিয়ে বলতে চাই “শুভ জন্মদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়”।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment