বেকার সময়ে মৌসুমী ফল বিক্রিতে ঝুঁকেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

ছবির বা দিক থেকে রুমি, শাহীন, মিশকাত


ইমানুল সোহান

সময়টা জ্যৈষ্ঠ মাস। গাছজুড়ো তাই শোভা পাচ্ছে বাহারী রঙ্গের ফলের। এসময় অঞ্চলজুড়ে আম ও লিচুর জনপ্রিয়তার তারতম্য রয়ে যায়। অঞ্চলভিত্তিক জনপ্রিয় ফলগুলো জেলা শহরগুলোতে পৌছানোর মাধ্যম হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম; যা করোনা মহামারিকালে আরো বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

অনেকেই বাড়তি আয়ের জন্য অনলাইনে বিক্রি করছেন ফল। শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীরা যুক্ত হচ্ছেন মৌসুমি ফল ব্যবসায়। অনেকেই নিজেদের বাগান থেকেই এসব ফল অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে পৌছে দিচ্ছেন দেশের নানা প্রান্তে। অনলাইন ফল ব্যবসায় সব থেকে বেশি জনপ্রিয় ও চাহিদা সম্পন্ন ফল হচ্ছে আম ও লিচু।

এসব ফল বিক্রির সঙ্গে যেসব তরুণ-তরুণীরা যুক্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই দিনাজপুর, খুলনা, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের। কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ করে পূর্ণাঙ্গভাবে মৌসুমি ফল ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী করোনার এই বেকার সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন মৌসুমি ফল ব্যবসায়।

এতে যেমন তাদের অলস সময় পার হচ্ছে, সঙ্গে হাতখরচ চালানোর মতো কিছু টাকাও রোজগার করতে পারছেন। এরকম তিনজন তরুণ ফল বিক্রেতা উদ্যেক্তার গল্প শুনবো আমরা। যারা অনলাইন প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে আম ও লিচু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করছেন।

মৌসুমী ফলের রাজা আম। করোনার এই অলস সময়ে পড়াশুনার পাশাপাশি আম ও লিচুর ব্যবসা শিক্ষার্থীদের জন্য উপার্জনের একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। সেই সুযোগটা আমিও গ্রহণ করেছি। হ্যালো রাজশাহী ম্যাংগো পেজ খুলে আমি আমের প্রচারনা করে থাকি। বেশ সাড়াও পাচ্ছি। অনলাইনে গ্রাহকের কাছে আম পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়।

গাছ থেকে খুব যত্নসহকারে পাকা আম নামাতে না পারলে ডেলিভারি দিতে দিতে সে আমের মুখ কালো হয়ে যায় অথবা টক হয়ে যায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর অনলাইন আম ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে ফলে লাভের সম্ভাবনা কম তবে ধৈর্য নিয়ে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকলে ভালো কিছু হবে আশা করা যায়।

রাজশাহীর জনপ্রিয় গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আমরূপালী আম আমি বিক্রি করে থাকি। এবছর আম বিক্রিতে কুরিয়ার চার্য একটু বেশি। তাই লাভ একটু কমই হচ্ছে। তবে যে অভিজ্ঞতা হচ্ছে এটাই আমার কাছে বেশ ভালো লাগার।

শাহীন আলম
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদালয়।

করোনা মহামারি নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। আমার বাসা হাড়িভাঙ্গা আমের উৎপত্তিস্থল দিনাজপুরে। নিজের বাগান থাকায় আমি খুব সহজে পাইকারি দামে উন্নতমানের আম সরবরাহ করতে পারি।

অতি অল্প সময়ের মাঝেই আমি ব্যাপক ক্রেতার কাছে আম পৌঁছাতে পেরেছি। হাড়িহাঙ্গা আমের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় লালমাটিতে রোপন করা গাছ থেকে। আমাদের সবকয়টি বাগান লালমাটির।

প্রতিবছর প্রায় ছয় হাজারের অধিক মণ আম আমাদের পারিবারিক বাগান থেকে উৎপাদিত হয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে। পক্ষান্তরে প্রতিবন্ধকতার কথা বলতে গেলে শুরুতেই বলতে হয় যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থার কথা।

সেই সাথে রংপুর থেকে যদি রাজশাহীর মতো ট্রেন যোগাযোগ সরকার চালু করতো তবে আমার মতো অনলাইনে যারা পাইকারি দামে আম সরবরাহ করে তাদের জন্য বিজনেস করা অনেক সুবিধা হতো। উত্তরের আমঘর ফেসবুক পেজে আমের বিষয়ে নিয়মিত তথ্য দিয়ে থাকি। সবমিলে বেকার সময়টা আম বিক্রির ব্যস্ততাই কাটছে।

মোঃ মিরাজুল আল মিশকাত
শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

অনলাইনে আমরা ফেসবুক চালিয়ে অযথা সময় নষ্ট করে থাকি। সেই সময়টা অনলাইনকে কাজে লাগিয়ে মৌসুমী ফল বিক্রি শুরু করেছি আমি। গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রায় ২০ মণের উপর আম বিক্রি করেছি। তবে অনলাইনে আম বিক্রিতে ডেলিভারিতে সমস্যা প্রকট আকার ধারন করেছে।

কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর দায়িত্বশীলতার অভাব রয়েছে। এতে আমরা গ্রাহক হারিয়ে ফেলি। এছাড়াও আমের পরিবহণ খরচ অনেক বেশি। আম পরিবহণের যে ট্রেন রয়েছে, এটা শুধু উত্তরবঙ্গ থেকেই আসে। সব স্থানে বা পোস্ট অফিসে এ ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা সুলভ মূল্যে করা গেলে ভালো হতো।

রুমি নোমান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *