ব্যক্তির বিরুদ্ধে বলিনি,দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলেছি

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক :রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং)বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমানকে বুধবার (১৭ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টার থেকে তাকে আটক করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) সকালে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

গত ২ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রানালয়ের দুর্নীতি নিয়ে তার ফেসবুক পাতায় দেওয়া এক স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। এতে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে নিয়ে কটূক্তি করা হয় উল্লেখ করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে এই স্ট্যাটাসটিতে কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ না থাকলেও প্রয়াত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন রাবি ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীরা। এছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহল থেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেন অনেকেই।

এই স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে রাবি শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাতে থানাহাজতে রাখার পর

নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ পারভেজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওসি জানান, বুধবার (১৭ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট তাপস কুমার সাহা বাদী হয়ে কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোহাম্মদ নাসিমের বিরুদ্ধে মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ করা হয়। মামলার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়।

মামলার এজহারে বলা হয়, মোহাম্মদ নাসিম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর পুত্র। তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এমন মিথ্যা তথ্য ফেসবুকে শেয়ার করায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও সংক্ষুব্ধ।

কাজী জাহিদুর রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো :
“তার আমলে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলিতে যে সকল নকল ও অকেজো যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে, তাকে এখন সেসব জিনিস দিয়েই চিকিৎসা সেবা দেয়া হক। যাদের সাথে সিন্ডিকেট করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে, সেই সিন্ডিকেট সদস্যদেরকে চিকিৎসক ও নার্স হিসেবে নিয়োগ করা হোক। অক্সিজেনের সাথে কার্বনডাইঅক্সাইড মিশিয়ে দিলেই বুঝতে পারবে ভেজাল জিনিস অন্তত চিকিৎসা ক্ষেত্রে চালানো উচিৎ নয়। যে ভেন্টিলেটর চলতে চলতে বন্ধ হয়ে যায় বা ঠিকঠাক কাজ করে না তার আমলের কেনা ভেন্টিলেটর দিয়ে তার শ্বাস নেবার ব্যবস্থা করা হোক। চোরের বাচ্চা চোর সুযোগ পেলেই পুরো দেশটাকেই গিলে ফেলতে চায়।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরকার সুজিত কুমার বলেন, “কথা বলার বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রেরই শর্ত। কাজি জহিদ কারো নামোচ্চারণ না করে যে বক্তব্য ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, তাতে কারো নাম নেই কিন্তু কাউকে ইঙ্গিত করেই তিনি কথাগুলো বলেছেন। তাকে সে জন্য গ্রেফতার করা বাকস্বাধীনতার ওপর কতোটা আঘাত, সেটা রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালকদের বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কিন্তু বলেছে, অপরাধীকে অপরাধী এবং দুর্নীতিবাজকে দুর্নীতিবাজ বলতে হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের আগে রাতেই পুলিশ আমাকে ফোন করেছিল, কিন্তু আমি ঘুমিয়েছিলাম। সকালে আমি ফোন করলে গ্রেফতারের বিষয়টি আমাকে জানায়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’

এর আগে গত ১৪ই জুন রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান মিশু ও রাবি ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী তাদের ফেসবুক পাতায় অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমানের পোস্ট স্কীনশর্ট দিয়ে তার শাস্তির দাবি জানান। পরদিন (১৫ জুন) বিকেলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।

এ বিষয়ে কাজী জাহিদ বলেন,”আমিতো কোথাও নাসিম সাহেবের কথা লিখিনি। উনার নাম নেই, পদও নেই। এটা যদি নাসিম প্রমাণ করতে হয় তবে ওটা আগে প্রমাণ করতে হবে যে উনিই ওসব দুর্নীতি করেছেন। সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী, এমনও লিখিনি।

তিনি আরও বলেন, আমি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে লিখিনি,আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখেছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *