ভর্তি পরীক্ষায় বোর্ড পরীক্ষার নাম্বার এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড

ভর্তি পরীক্ষায় বোর্ড পরীক্ষার নাম্বার এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড

মোঃ ইসতিয়াক হোসেন সোয়েব


শিক্ষার্থীদের জীবনে ইন্টার প্রথম বর্ষ এবং দ্বিতীয় বর্ষ অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়।এটা এমন এক সময় যখন শিক্ষার্থীরা পুরোনো ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে ভালো ফলাফলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে থাকে। আবার অনেক শিক্ষার্থীই পুরোনো ফলাফলে অতিরিক্ত আত্নবিশ্বাসী হয়ে এই সময়টায় খারাপ করে ফেলে।অনেক ভালো ভালো মেধাবী শিক্ষার্থীরা এসময়টায় বখে যায়।

ভবিষ্যত জীবনের অনেক সাফল্য, ব্যার্থতা নির্ভর করে ইন্টার প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের সময়ের উপর।বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ভর্তি পরীক্ষায় অনেক গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু এবছর কোভিড-১৯ এর কারণে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না। এজন্য শিক্ষামন্ত্রানলয় জেএসসি এবং এসএসসির ফলাফলের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রতিবছর এইচএসসির ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থী যারা এসএসসি, জেএসসি তে ভালো ফলাফল করেছে তাদের অনেকেই এইচএসসি তে এসে ফলাফল খারাপ করে ফেলেছে।আবার অনেক শিক্ষার্থী যারা জেএসসি কিংবা এসএসসিতে সেরা ফলাফল করতে পারে নাই তারা ইন্টারে এসে বাজিমাত করে ফেলে।পুরো কলেজে এরাই সেরাদের মধ্যে থাকে।পর্যায়ক্রমে এরাই এইচএসসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাতে অনেক ভালো ফলাফল করে।

কিন্তু এবার জেএসসি-এসএসসির ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এইচএসসির ফলাফল তৈরি করলে কলেজে এসে ভালো করা এই পরিশ্রমী মেধাবীগুলো আগের মতো তলানীতেই পড়ে থাকবে।এইচএসসিতেও তাদের সেরা ফলাফল হবে না।তাদের দুইবছরের পরিশ্রম বৃথা যাবে।দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য এবং চান্স পাওয়ার জন্য বোর্ড পরীক্ষার নাম্বার অনেক গুরুত্ব বহন করে।ভর্তি পরীক্ষায় বোর্ড পরীক্ষার উপর যে নাম্বার রাখা হয় সেখানে তারা পিছিয়ে পড়বে।তারা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পছন্দের সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে পারবে না।যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় থাকছে না।

২০১৫ সালে এসএসসি তে সারাদেশে মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা ছিলো মোট ১,১১,৯০১ জন। অন্যদিকে এই একই এসএসসি-১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই ২০১৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলো মোট ৩৭,৭২৬ জন।অথ্যাৎ এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর তিনভাগের দুইভাগই এইচএসসিতে এসে জিপিএ-৫ পায়নি।এইচএসসি ২০১৮ সালের ব্যাচের অবস্থা আরও খারাপ।এদের সময় এইচএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা ছিলো মোট ২৯ হাজার ২৬২ জন।এই ব্যাচই ২০১৬ সালে এসএসসিতে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিলো ১,০৯,৭৬১ জন। অথ্যাৎ এসএসসি-এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যায় বিশাল পরিবর্তন।

এমন অবস্থায় জেএসসি-এসএসসির রেজাল্ট এর উপর ভিত্তি করে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ কতটা যুক্তিযুক্ত? এসএসসি-এইচএসসির পড়াশোনায় আকাশ পাতাল পার্থক্য।একটা দিয়ে আরেকটার সঠিক মূল্যায়ন কখনোই সম্ভব না।এমন উপায়ে ফলাফল প্রকাশ করলে উপরে বর্ণিত কলেজে এসে ভালো ফলাফল করা মেধাবীগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।এছাড়া যারা ইম্প্রুভ দিয়ে ভালো ফলাফলের চেষ্টা করছিলো তারাও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।পূর্বের বোর্ড পরীক্ষার নাম্বারের জন্য তারা ভর্তি পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়বে।আমরা সকলেই জানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় কি পরিমাণ প্রতিযোগিতা হয়।

এক নাম্বারের জন্য হাজার সিরিয়াল পিছনে পড়ে যাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা।এতে অনেক স্বপ্নের অকাল মৃত্যু ঘটবে।মেধাবীদের সাথে অন্যায় হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় প্রশাসনের উচিত হবে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে বোর্ড পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে যে নাম্বার রাখা হয় তা বাতিল করা।এমন উপায়ে পরীক্ষা নিলে যারা সত্যিকারের মেধাবী তারাই ভর্তি পরীক্ষায় সামনের দিকে থাকবে সাথে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও বজায় থাকবে।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment