ভাইস-চ্যান্সেলর ও বিশ্ববিদ্যালয় কড়চা

মো. মজনুর রশিদ


গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি ) এ অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের পর থেকে বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি উচ্চ শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির কলবর বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজ, শেখ হাসিনা কৃষি ও আইসিটি ইনস্টিটিউট এবং ৮টি অনুষদসহ ৩৪ টি বিভাগে পরিচালিত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

বিদেশী শিক্ষার্থীসহ এখন প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। রয়েছে ৫ টি আবাসিক হল। প্রায় ৫৫ একর ভূমি বেষ্টিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন পাস হয় ৮ জুলাই ২০০১ সালে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে সেই বছরের ২১ জুলাই প্রকল্পটি স্থগিত ঘোষণা করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক। পরের বছর ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল প্রকল্পটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

দীর্ঘ সময় পরে নভেম্বর ২০০৯ সালে প্রকল্পটি পুনরায় চালু করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি আলোর মুখ দেখে এবং অবকাঠামোগত কার্যক্রমের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়। দীর্ঘসূত্রতা থাকলেও উক্ত উন্নয়ন কার্যক্রম বর্তমানেও অব্যহত রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২৬ ডিসেম্বর ২০১১ সাল থেকে। ক্যাম্পাস ও একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ সালে।

নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় ৭/ ৮ বছর পর ২০১৯/২০২০ সালে এসে বিভিন্ন ঘটনা-অঘটনার মধ্য দিয়ে সারা বাংলাদেশে বেশ পরিচিতি লাভ করে। সে পরিচিতি যতটা না ছিলো সুখকর তার চেয়ে ঢের বেশি দুর্ভাবনার ও নিরব সংঘাতের। আন্দোলন, অবরোধ, ক্লাস বর্জন, ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলানো, অনশণ, অস্থান কর্মসূচি প্রভৃতি ঘটনার কারণে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে পরে (দৈনিক সংবাদপত্র,  বশেমুরবিপ্রবিসাস  সেপ্টেম্বর/অক্টোবর ২০১৯)।

এসব ঘটনাতে চরম ব্যাঘাত ঘটে শিক্ষা কার্যক্রমে। অনেকে মনে করে এ সবই ছিল বিগত ভাইস-চ্যান্সেলের হটকারি সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত পরিণতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনের একক সিদ্ধান্তের নানা উদ্ভট কর্মকান্ড, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার আতুর ঘরে পরিণত হয়েছিল বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পাই সেই সময়ে।

অপর পক্ষে ছিলো কিছু সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তি বর্গের নিরবিচ্ছিন্নভাবে কার্যকরী প্রশাসনকে অসহোযোগিতা করার বাস্তব চিত্র! অথচ একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশ ও দেশের বাহিরে বেশ সুনাম অর্জন করে তার মান সম্মত উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠরূপে পরিচালনার দক্ষতার জন্য। সে সবই আজ মরিচীকার মতো অতীত।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরা করোনা ভাইরাস বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাতে এনেছে  ছন্দ পতন ও বিপর্যয়। বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠতে চেষ্টার কমতি নেই সরকার প্রধানের। মহামারীর এমন সময়ে যখন সবকিছু বন্ধ তখন বশেমুরবিপ্রবির ক্যাম্পাসসহ দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যলয়গুলো শিক্ষা কার্যক্রমের বর্তমান হালচাল নিয়ে শঙ্কিত । কেননা দীর্ঘ বন্ধের পরে ব্যাহত হওয়া শিক্ষা কার্যক্রমকে কিভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায় সেই ভাবনা এখন সবার মাঝে।

শিক্ষা বান্ধব, যোগ্য নেতৃত্ব, প্রশাসনিক দক্ষতা, সাধারণ, সৎ, নিষ্ঠাবান, জবাবদিহিতা, দুরদর্শীতা, নিয়মানুবর্তিতা, ছাত্র-শিক্ষক বান্ধব ও দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ মেধাবী ভাইস চ্যান্সেলর পারবেন করোনা দুর্যোগ পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিকভাব পরিচালনা করতে। কিন্তু গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর নামে ও তাঁরই জন্ম ভূমির ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আজ ৮ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও স্থায়ী কোনো ভাইস-চ্যান্সেলর নেই। বিষয়টি সুষ্ঠুরুপে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্তরায়। দেশের ক্লান্তিকালীন সময়ে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগ দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। স্থায়ী সর্বোচ্চ অবিভাবক প্রাপ্তির মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে সামগ্রিক শৃঙ্খলা ফিরে আসতে পারে বলে অনেকেই মনে করে।

দৈনিক সংবাদপত্র ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বহুল প্রচারিত বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জের ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে সংগঠিত হয় তৎকালীন ভিসি অপসারণ আন্দোলন। ভিসি অপসারণের উক্ত আন্দোলন ছিলো ক্যাম্পাসের সব ধরনের অনিয়মের বিপক্ষে। আপাত দৃষ্টিতে বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন এনে শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি, প্রগতি ও বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের আদর্শ ও কল্যাণকর ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা পূরণই ছিলো সে সব কিছুর প্রধান লক্ষ্য।

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে শুরু হওয়া ভিসি অপসারণ আন্দোলন ৩০ সেপ্টেম্বরে তৎকালীন ভিসির পদত্যাগের মাধ্যমে শেষ হয়। এবং আন্দোলন সফল হওয়াতে আনন্দ মিছিল ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। কঠোর শাষণ ও শৃঙ্খলা মুক্ত হয়ে ক্যাম্পাসে মুক্ত চিন্তা, বাক ও অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা, অবারিত জ্ঞান চর্চার স্বাধীনতা, নির্বিঘ্নে ছাত্র রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি, নানা বুদ্ধিভিত্তিক, সামাজিক, সাংকৃতিক ও জেলা সংগঠনের স্বাচ্ছন্দে নিজেদের কর্মযোগ্য পালনের উচ্ছ্বলতা প্রভৃতি কর্মযজ্ঞ ফিরে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস।

আপাতদৃষ্টিতে সফল আন্দোলন পরবর্তী কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক ছিলো অত্যন্ত তিতে। স্বল্প পরিসরে উন্নয়নমূলক ও সংস্কারের কাজ ব্যতিত চরম প্রত্যাশা প্রাপ্তির ছাত্র-শিক্ষকের এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রাপ্তির বিষয়সমূহের অধিকাংশ আজও আলোর মুখ দেখতে পায়নি। শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভ ও খতের স্থানটি তাই আজও দগদগে হয়ে রয়েছে। সেখান থেকে আবারও নতুন কোনো ক্ষতিকর ভাইরাস ছড়িয়ে পরার বিভিন্ন উপস্বর্গ দেখা দিচ্ছে ক্যাম্পাসের আঙ্গিনায় ও তার বাহিরে।

আন্দোলন পরবর্তী শিক্ষার্থীদের সবক্ষেত্রে আন্দোলনের দাবিকৃত বিষয়াবলির সমাধান বা অধিকার ফিরে পাবার আনন্দ তাঁদের মধ্যে কমই রয়েছে বলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী মনে করে। স্বরণ রাখতে হবে আন্দোলন সফল হওয়ার তৃপ্তি আর আন্দোলনের দাবী পুরণের স্বপ্ন এক নয়। সব স্তরের অধিকার বাস্তবায়নের সুখের হাসিই হতে পারে সত্যিকার আন্দোলনের স্বার্থকতা।

৭ অক্টোবর ২০২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন জ্যেষ্ঠ প্রফেসর চলতি দায়িত্বে ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগ পেলেও দায়িত্ব পালনে অনেক সীমাব্ধতা থাকাতে তিনি জটিল ও গুরুত্বপুর্ণ বিষয়াবলির সমাধানে আসতে অনেক ক্ষেত্রে কম সক্ষম হচ্ছেন। বিষয়টি অনেকটা ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দারের মতো অবস্থা। চলতি দায়িত্বে থাকা ভাইস-চ্যান্সেলরকেও স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, যদি সরকার তাঁকে উক্ত পদে যোগ্য মনে করেন।

সৎ, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল শিক্ষক হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে ক্যাম্পাসে। অথবা দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক যোগ্য প্রফেসর রয়েছেন, সেখান থেকে যোগ্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। স্থায়ী ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগের বিষয়টি দ্রুত সমাধানে না আসার ফলফল হতে পারে চরম বেমুরাং ও বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য আত্মঘাতী। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়বস্তুর সমাধান প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানটিতে সুষ্ঠভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য।

১. অমিমাংসিত হয়ে পরে রয়েছে ইটিই বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে ইটিই বিভাগ থেকে ইইই বিভাগে রূপান্তরিত হবার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয়। বেশ কিছু দিন আগের আন্দোলনের মুখে বিভাগের সব ধরণের ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে না বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। আমরণ অনশণ ও আন্দোলনের ৯১ তম দিনে ইটিই বিভাগের শিক্ষার্থীরা (তথ্য সুত্র: ১৫ জানুয়ারি, ২০২০, বশেমুরবিপ্রবিসাস)। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তের বেড়াজালে আটকে রয়েছে।

২. পূর্বের ভাইস-চ্যান্সেলরের বিভিন্ন সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত পার্ট টাইম স্টাফরা ৮ নভেম্বর ২০১৯ থেকে চলমান পার্ট টাইম কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। গত আগস্ট ২০১৯ থেকে আজ  পর্যন্ত  প্রায় ১০ মাস বেতন ছাড়া রয়েছে ১৭৬ জন স্টাফ। তাঁদের অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত নাজুক ও দুর্দশাগ্রস্থ।

৩. ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে আন্দোলনে রয়েছে উক্ত বিভাগের ৪২৪ জন শিক্ষার্থী। ইউজিসি কর্তৃক নতুন ছাত্র উক্ত বিভাগে আর ভর্তি না করার নির্দেশ প্রদান করেন (৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০)। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর।

৪. শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি নেতিবাচক জবাবদিহিতার ঘটনা, শিক্ষক- ছাত্র সম্পর্কের চরম ভয়ংকর আস্থার অবনতি ও কখনো কখনো ক্লাস বর্জনের ঘটনা ছিলো, নিত্যদিনের ঘটনা করোনা ভাইরাসের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত। শিক্ষকদের তিন দিনের কর্ম বিরতি (তথ্যসুত্র: ২০/০১/২০২০, কালের কন্ঠ)

৫. আন্দোলন পরবর্তী প্রশাসনিক শিষ্টাচারের বাহির থেকে প্রশাসনিক অনেকগুলো পদের রদবদল।

৬. উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের আপগ্রেশন ও প্রমোশন না হওয়ার দিকটি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। সেক্ষেত্রে শিক্ষকগণ হয়েছেন আর্থিক ও মর্যাদাগত দিক থেকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ।

৭. পাঠদানের শ্রেণি কক্ষ ও ল্যাব রুমের ভীষণ সংকট। শিক্ষার্থীদের শরীর ও মননশীল বিকাশের ক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন অতিব জরুরী।

৮. অনেক বিভাগের শিক্ষক স্বল্পতা ও দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক থেকে শিক্ষক সংকট রয়েছে প্রকট, সেই সাথে রয়েছে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সংকট।

৯. অবকাঠামোগত উন্নয়নে স্থবিরতা যা সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যহত করছে।

১০. শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দীর্ঘসূত্রিতা প্রভৃতি বিষয়সমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে ছন্দপতন ঘটায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এসকল বিষয় ছাড়াও অন্যন্য বিষয়গুলোর সঠিক সমাধান করা বর্তমানে জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পূর্বের ভিসির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে যা বিভিন্ন সময়ে অনলাইন মিডিয়া ও সংবাদপত্রে উঠে এসেছে । বর্তমানে এসব অনেক বিষয় দুদকের তদন্তাধীনে রয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালের আন্দোলনের সময় ইউজিসি কতৃক দ্রুত পর্যবেক্ষণের সুপারিশে তৎকালীন ভিসির পদত্যাগের সুপারিশ করে। এর পরেই ভিসির পদত্যাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে (৩০/০৯/২০২০, বিভিন্ন সংবাদ মিডিয়া)।

এতোকিছুর পরেও ২০১৯/২০ শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করে ভর্তি কার্যক্রমও শেষ করা হয়েছে। এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে বহুল কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন (১০ মার্চ, ২০২০)। প্রতিষ্ঠানটির অনেক দিকের অবস্থান ভঙ্গুর, নাজুক ও ভয়ঙ্কর দ্বান্দ্বিক! এসব সমস্যার সমাধানের একমাত্র উপায় বলে সকলেই মনে করে একজন যোগ্য এবং স্থায়ী ভাইস-চ্যান্সেলরের নিয়োগ। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ দিন ধরে চলতি দায়িত্বে থাকা ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন। এবং স্থায়ী ভাইস-চ্যান্সেলর না থাকাতে জটিল সব সমস্যার পাহাড় জমা হতে থাকে সেসব প্রতিষ্ঠানের। সেগুলোর সমাধান এসেছে স্থায়ী ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগের মাধ্যমে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় দুটি শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং অব্যাহত রয়েছে তাদের সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম। তার আগে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার অন্যতম কারণ। গোপালগঞ্জের পরে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অপসারণের আন্দোলনের যে ভাইরাস দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পরেছিল ঠিক তখনই প্রধান মন্ত্রীর সুচিন্তিত বক্তব্যের মাধ্যমে স্থিমিত হয় সেসব অপচেষ্টা।

তার সাথে যথাযথ দায়িত্ব পালনে সতর্ক ও সজাগ হয়ে ওঠেন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরগণ। সামগ্রিক দিক পর্যবেক্ষণ করে বলা যায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ভাইস -চ্যান্সেলর ছাড়া সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা কষ্টকর ব্যাপার।

কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবার স্বল্প আয়ের শিক্ষার্থী ও স্টাফদের পাশে মানবতার হাত বারিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বশেমুরবিপ্রবি গোপালগঞ্জ ক্যাম্পাসও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এতো নেতিবাচকের পরেও কোভিড-১৯ তাঁদেরকে একত্রিত করে দেখিয়ে দিয়েছে প্রয়োজনে মানুষ ভালো কিছুর উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁরা গুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

১. শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে গঠন করা হয় ‘কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি ফান্ড’ (৩১ মার্চ, ২০২০)। উক্ত ফান্ড থেকে চলমান রয়েছে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা প্রদান করা।

২. করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়তার নিদর্শন হিসেবে প্রধান মন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একদিনের সমপরিমান বেতনের অর্থ প্রদান।

৩. শিক্ষক সমিতি কর্তৃক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি ও মানবিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তা প্রদান।

৪. ২০০ শিক্ষার্থীর পাশে দাড়াচ্ছেন বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষকরা (৫ মে, ২০২০)। ৫. শিক্ষকদের হটলাইন সেবা চালু (৬ মে, ২০২০)।

৬. শিক্ষার্থীদের মেস ও বাসা ভাড়া মওকুফ করার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন (৭ মে, ২০২০)।

৭. ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সহায়তায় দরিদ্র ও অসহায় কৃষকের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়ার চমৎকার উদ্দ্যোগ ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ (মে, ২০২০)।

৮. ১৭৬ জন পার্ট টাইম কর্মচারীদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন শেখ নাঈম (২১ এপ্রিল, ২০২০)।

৯. বশেমুরবিপ্রবি ও গোপালগঞ্জ জেলা রোভার কর্তৃক লিফলেট বিতরণ, জন সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম, হ্যান্ড সেনিটাইজার ও হাত ধোঁয়া সাবান বিতরণ কর্মসূচী পালন করা (৪ মার্চ, ২০২০)।

১০. গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সহায়তায় হ্যান্ড সেনিটাইজার তৈরি ও তা বিতরণ করে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা (২৩ মার্চ,২০২০) প্রভৃতি কর্মকান্ড ছিলো মহতি ও প্রশংসনীয় উদ্দ্যোগ এবং করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ ও অসহায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার লক্ষ্যে।

এতোসব ভালো উদ্দ্যোগের মাঝে ছাত্র কল্যাণ ফান্ড নামে একটি বড় অংকের ফান্ড রয়েছে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই ফান্ড থেকে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারীর এমন দুর্যোগকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যবহারের জন্য জোর দাবী রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে। প্রাতিষ্ঠানিক ফান্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনের কার্যকরী কর্মপন্থা ও সুনজর প্রয়োজন।

মনে রাখা প্রয়োজন, কিছুদিন আগে জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে করোনা মহামারী মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় কৃষিতে ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রনোদনা, ৯ হাজার কোটি টাকার কৃষি উপকরণে ভুর্তুকী প্রদান এবং ৭২ হাজার কোটি টাকা ব্যবসা বাণিজ্যে বিশেষ প্রনোদনা ঘোষণা করেছেন। দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণই হচ্ছে এসব পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।

বঙ্গবন্ধুর পূণ্যভূমিতে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি সময় অতিবাহিত করছে নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে। ইউজিসি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর এসব বিষয়ে অবহিত রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। দীর্ঘ দিনের অবহেলিত ভাটির এই অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি এ অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার আশার আলোর প্রদ্বীপ। বিশ্ববিদ্যালয়টির এসব ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে পত্র পত্রিকাতে সংবাদ ও নিবন্ধও প্রকাশ হয়েছে। প্রায় বছর হতে গেলেও আজ অব্দি পর্যন্ত স্থায়ী ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগের প্রত্যাশায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্তরের পরিবার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিবে। প্রাণ চঞ্চল্য হয়ে ওঠবে দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষ ও আঙ্গিনা। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে এক দিনের জন্যও যেনো শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ না থাকে সে ব্যাপারে সকলকে যত্নবান হতে হবে। প্রাণ প্রিয় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জটের দুর্ভাবনা থেকে চিন্তা মুক্ত রাখতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে উদ্দ্যোগী হবার এখনই সময়। প্রকৃতিক নিয়মে বাধ্য হয়ে অনেক দিনের শিক্ষা বিরতির মধ্যে রয়েছে তারা।

সে সব সমস্যা থেকে শিক্ষক সমাজের দায়িত্বশীল ভূমিকা পারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সঠিকভাবে পরিচালানায় সহযোগিতা করে একটি সুন্দর দেশ বিনির্মান করতে। প্রধান মন্ত্রীর নিকট একটাই নিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের অমীয় সম্ভাবনার দিকটি সদয় বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ নামে ও প্রধান মন্ত্রীর নিজ জেলায় প্রতিষ্ঠিত সর্বোচ্চ জ্ঞান চর্চার এই বিদ্যাপিঠের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

অতি দ্রুত এ অবস্থা থেকে উত্তরণ জরুরী। তা না হলে হাজার হাজার দরিদ্র শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন চরম ক্ষতির ও দুর্ভাবনার মধ্যে নিপতিত হবে। এমন অবস্থার মুখোমুখি হবার কারোরই কাম্য না। প্রত্যাশা থাকবে উচ্চ শিক্ষার পটভূমিতে দাঁড়িয়ে সব বাঁধা পেরিয়ে জ্ঞান আহরণ, জ্ঞান বিতরণ ও দেশ গড়ার তীর্থ ভূমিতে পরিণত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র প্রাঙ্গণ।


লেখকঃ চেয়ারম্যান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এবং সম্পাদক, বাংলাদেশ স্কাউটস গোপালগঞ্জ জেলা রোভার।

Scroll to Top