ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় আইন ও জনসচেতনতা

ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় আইন ও জনসচেতনতা

মুহম্মদ সজীব প্রধানঃ ১৯৬২ সালের ১৫ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি কর্তৃক মার্কিন কংগ্রেসে ক্রেতা-ভোক্তা আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ঐতিহাসিক দিনটি স্মরণে প্রতি বছর ১৫ মার্চ বিশ্বজুড়ে দিবসটি বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়। রাষ্ট্রের সকল নাগরিকই ভোক্তা তাই ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে জানা এবং সচেতন হওয়া সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের প্রতিহত করতে বাংলাদেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনে ৩৭, ৩৮, ৪০, ৪১, ৪৩ এবং ৪৪ ধারার মতো কিছু ধারা রয়েছে যার প্রয়োগ ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ আইনের প্রয়োগে কোনো ভোক্তা পণ্য ক্রয়ে পণ্যের পরিমাণ, উপাদান, মূল্যসহ কোনো বিষয়ে প্রতারিত হলে তার প্রতিকার পেয়ে থাকেন।

জাতিসংঘও ৮টি ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই একজন ভোক্তা হিসেবে নিজের অধিকার এবং আইন সম্পর্কে জানেন না, ফলে প্রতারিত হন প্রতিনিয়ত। আজকাল মানহীন ও নকল পণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে ফলে সাধারণ ভোক্তারা হরহামেশা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ফলমূল, শাকসবজি, মাছ-মাংস, মশলা সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যেই ভেজালের ছাপ রয়েছে। এর ফলে ভোক্তারা শুধু আর্থিকভাবে প্রতারিত হচ্ছেনা বরং অসংখ্য মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং অকালে মৃত্যু বরণ করছে। এমনকি নবজাতক ও শিশুদের খাবারও ভেজালমুক্ত নয়।

বিশেষত পবিত্র রমযান মাস, ইদ ও অন্যান্য বড় ধরনের উৎসবকে কেন্দ্র করে বাজারগুলোতে ভেজাল পণ্য ও পণ্যের দাম কয়েকগুণ বাড়ানো হয় যা জনজীবনে দূর্ভোগ বয়ে আনে। উল্লেখ করা জরুরি, সময় ও স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনলাইনে এক ক্লিকে শপিং করার প্রবণতা বাড়ছে আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে অসৎ ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের সাথে বড় ধরনের প্রতারণা করছে। এক্ষেত্রে ভোক্তাদের সচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসনের সজাগ থাকতে হবে যাতে স্বার্থান্বেষী অসাধু চক্রকে দমন করা সম্ভব হয়।

ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমাতে আইনের প্রয়োগ যেমন প্রয়োজন তেমনি সর্বসাধারণের সচেতনতাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সর্বদা বাজার তদারকি করা, পণ্যের মান ও দাম যাচাই করা এবং প্রয়োজনে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করার বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা প্রশাসনের আশানুরূপ তৎপরতা দেখতে পাইনা যা দুঃখজনক। ফলে অসৎ ব্যবসায়ীরাও ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করতে দ্বিধা করেননা।

বাংলাদেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা বিএসটিআই কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্যও বাজারে অনায়াসে চলে। আর এর প্রধান কারণ প্রশাসনের শিথিলতা। সরকারের উচিৎ কালেভদ্রে বাজার তদারকি না করে নিয়মিত বাজারে দৃষ্টি রাখা। পণ্যের গুণগত মান ও কাচামাল বিবেচনায় পণ্যের দাম নির্ধারিত করে দেওয়া এতে ব্যবসায়ীরা চাইলেও হুটহাট দাম বাড়াতে পারবেনা। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতেও সরকারকে কঠোর হতে হবে।

তাছাড়া বিএসটিআই সহ অন্যান্য অর্গানাইজেশন তাদের গবেষণায় যেসব পণ্যে ভেজাল খুঁজে পাবে সেগুলো যাতে বাজারে কোনোভাবেই বিক্রি নাহয় সেদিকে কড়া নজরদারি রাখতে হবে। কোনো ভোক্তা যদি প্রতারণার শিকার হয়ে আইনের আশ্রয় নেয় তাহলে আইনের স্বচ্ছ প্রয়োগ করে তার ক্ষতিপূরণ পেতে সহায়তা করতে হবে।

তাছাড়া ভোক্তাদেরও নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে সচেতন হওয়া জরুরি। পণ্য কেনার পূর্বে পণ্যের মেয়াদ, দাম, পরিমান ও গুণগত মান যাচাই করে কিনতে হবে এবং পণ্য ক্রয়ে প্রতারিত হলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য হাতে না পেয়ে মূল্য পরিশোধ না করাই একজন সচেতন ভোক্তার পরিচায়ক। সর্বোপরি, আইনের প্রয়োগ ও ভোক্তাদের সচেতনতার মাধ্যমেই সুরক্ষিত হবে ভোক্তা অধিকার।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment