মতিহার ক্যাম্পাসের গাছগুলো কেমন আছে?

প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে গাছ গণনা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৩০ হাজারের অধিক গাছ রয়েছে। গত দুই-তিন বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৫০০ গাছ লাগানো হয়েছে।

গাছ শুধু লাগালেই হয় না, এর পরিচর্যারও প্রয়োজন হয়। গাছ লাগানোর পূর্বে কম্পোজ সারসহ রাসায়নিক সার দিয়ে ১৫ দিন থেকে এক মাস রেখে দিতে হয়। এরই মধ্যে মাটির পরিচর্যাও করতে হয়। তারপর গাছ লাগাতে হয়। গ্রীষ্মের সময় পানি দিতে হয়।

রাজশাহীতে এপ্রিল-মে মাসে প্রচণ্ড খরা থাকে। ফলে প্রচুর পানি লাগে। আবার বর্ষা মৌসুমে এত ঘাস হয় যে, সেটাও নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়। কোন কোন সময় Pest আক্রমণ হয় খুব বেশী। আবার Pesticide প্রয়োগ করতে হয়। তারপর গরু-ছাগলের উপদ্রব তো আছেই। নবজাতক শিশুকে যেভাবে যত্ন করতে হয়, ঠিক গাছকেও সেভাবে পরিচর্যা করে বড় করতে হয়।

গাছে যখন ফল আসে, অনেক কষ্ট করে তা রক্ষা করতে হয়। গত কয়েক বছরে ফল যেভাবে অত্যাচারিত হয়েছে, তা দেখে কষ্ট লাগতো। শহীদুল্লাহ এবং মমতাজউদ্দিন কলাভবনের সামনে লিচু গাছগুলোতে বেশ লিচু ধরেছিলো তবে লিচুগুলো বেশী মিষ্টি নয়। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। লিচুগুলো সবে লাল হয়েছে, ২-৩ দিনের মধ্যে সব লিচু প্রায় শেষ। গাছের নিচে লিচুর আটি দিয়ে বিছানো।

মতিহার ক্যাম্পাসের গাছগুলো কেমন আছে?

পাখি এবং কাঠবিড়ালী খুব সুন্দর করে লিচুর স্বাদ উপভোগ করেছে। কাঠবিড়ালী এবং পাখিগুলো বেশ ভালো আছে। যে গাছগুলোর কথা বলছিলাম, তাদেরকে এত যত্নকরে বড় করা হয়। মা যেমন সন্তানকে কষ্ট দিতে পারে না, ঠিক তেমনি যারা গাছ লাগায়, পরিচর্যা করে, তারা অহেতুক গাছ কাটে না।

মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের বাসভবনের পাশে বেশ কটি কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। আমীর আলী হলের প্রভোস্ট মহোদয়ের বাসা থেকে পূর্ব দিকে তাকালে যে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো সূর্যের মতো টকটকে লাল রঙ ছড়াচ্ছে, তাদের অপূর্ব সুন্দর লাগছে।

গাছে পাতা নেই শুধু ফুল। রোকেয়া হলের সামনে, ছেলেদের জিমনেসিয়ামের দক্ষিণ পাশে এবং বধ্যভূমির সামনে বিশাল বটগাছগুলো যে সুন্দরভাবে পাতা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভীষণ সুন্দর লাগছে। এর লাল ফলগুলো বিভিন্ন ধরনের পাখি মনের সুখে আহার করছে এবং কোকিলের মিষ্টি সুর কোলাহলমুক্ত ক্যাম্পাসে ভীষণ ভালো লাগছে। শেখ রাসেল মডেল স্কুলের পশ্চিমদিকে অর্থাৎ মন্নুজান হলের দক্ষিণদিকে মেহগুনি গাছগুলোর কচিপাতা মিষ্টি রঙে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। দারুণ উপভোগ্য সে দৃশ্য।

যদি কাঁঠাল গাছের কথা না বলি হয়তঃ সে অভিমান করতে পারে। ক্যাম্পাসে প্রায় ৮০০ কাঁঠাল গাছ আছে। লাইব্রেরির দক্ষিণদিকে এবং পূর্বদিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে তারা, বেশ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে শিকড় থেকে গাছের শেষ পর্যন্ত কাঁঠাল ধরে আছে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য মহোদয়ের বাসভবনের কাঁঠাল গাছে প্রচুর কাঁঠাল ধরেছে। প্রত্যেক হলে বিশেষ করে লতিফ হলের সামনে যে কয়েকটা গাছ আছে তাতে অজস্র কাঁঠাল ধরেছে। শিক্ষার্থীরা ফলের মৌসুমটা উপভোগ করতে পারলো না। খারাপ লাগছে তাদের জন্য।

মতিহার ক্যাম্পাসের গাছগুলো কেমন আছে?

রাজশাহী অঞ্চল আমের জন্য প্রসিদ্ধ। বিভিন্ন জাতের আম যেমন গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, ল্যাংরা, রাণীপছন্দ প্রভৃতি আম ভীষণ সুস্বাদু। ক্যাম্পাসে তিন হাজারের উপর আম গাছ আছে। মুকুল এসেছিলো প্রচুর তবে সে তুলনায় অতটা আম নেই। যা আছে একেবারে খারাপ নয়। আমের মৌসুমে আমবাগানকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয়েই থাকে। কিছু কিছু শিক্ষার্থী দাবি করে থাকে এ গাছগুলো তো তাদেরই। প্রকৃতপক্ষে অল্পকিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী আমগাছ, লিচুগাছ দখল করে নেয়। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিছুই ভোগ করতে পারে না।

বধ্যভূমির দক্ষিণে নব নির্মিত সফেদা বাগান। শতটি সফেদা গাছ লাগানো হয়েছে গত বছর। পরিচর্যাও করা হচ্ছে নিয়মিত। বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে। কিছু সংখ্যক গাছে ফল এসেছে। আশা করছি আগামী বছর সবগুলো গাছে ফল আসবে। জানিনা কারা উপভোগ করবে।

মধ্য ক্যাম্পাসে একাডেমিক ভবনের পাশে জিনোম জঙ্গল প্রোজেক্ট। হল থেকে ছাত্রীরা আসার সময় অনেক সময় সাপের কারণে তারা ভীত থাকতো। বাণিজ্য অনুষদের অনেক শিক্ষক, এমন একটি জায়গায় জঙ্গল থাকা সমীচীন নয় বলে প্রশাসনকে বহুবার মৌখিকভাবে জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরপাড়ায় মসজিদের পিছনে জায়গা করে দেয়া হয়েছে জিনোম জঙ্গলের জন্য। এছাড়াও পাখিদের জন্য চৌদ্দপাই ফায়ার সার্ভিসের পিছনে বট, ডুমুর, কামরাঙ্গা, বন কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে যাতে করে পাখিগুলো নিরিবিলি বসবাস করতে পারে।

যে গাছগুলো মারা যায়- অনেক সময় পাখির বাসা করার জন্য রেখে দেয়া হয়, সহজেই কাটা হয় না। যখন পশ্চিমপাড়া-পূর্বপাড়া অথবা হলগুলো থেকে গাছ কাটার আবেদন আসে তখন কৃষি প্রকল্পের কিছু করার থাকে না। নিরবিচ্ছিন্ন বৈদ্যুতিক আলো পাওয়ার জন্য কিছু গাছের ডাল কাটা হয়। সৌন্দর্যবৃদ্ধির কারণে কিছু পুরাতন গাছ অপসারণ করতে হয়।

সম্প্রতি ক্যাম্পাসে একটি গাছ মরে পঁচে গিয়েছে, হঠাৎ করে বাতাসে গাছটি মাটিতে লুটিয়ে গিয়েছে। দূর থেকে ভালোভাবে দেখাও যায় না। কারণ গাছটির অবস্থান ছিলো জঙ্গলের পাশে এবং চারিদিকে পানি। সহজে কেউ যেতে পারে না।

গাছটি কাটা হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া হলো। ফেসবুকে ভীষণ সোরগোল পড়ে গেল। খেঁজুর গাছটি তিন বছর পূর্বেই মারা গিয়েছিলো। অর্ধেক অংশ দাঁড়িয়ে ছিল। পচে যাওয়ার কারণে গাছটি পড়ে গিয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহজেই প্রকৃতির বিরুদ্ধে যায় না। যারা প্রতিনিয়ত প্রকৃতিকে সমৃদ্ধ রাখার চেষ্টা করছে- তারা কেন প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাবে।

তবে ক্যাম্পাস যাদের জন্য তারা না থাকলে মোটেই ভালো লাগে না। কবে আসবে তারা? তোমরা যেখানেই থাকো, ভালো থেকো, সাবধানে থেকো। তোমাদের সবাইকে পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা।


লেখকঃ উপ-উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *